১০ বছরে লিটন নিজের সামর্থ্যের অর্ধেকও দেখাতে পারেনি, দাবি পাইলটের

লিটন দাসের ব্যাটিং দেখতে চোখের আরাম। ছন্দে থাকা লিটনের শট খেলার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন ক্রিকেটার, বিশ্লেষক, সমর্থক সবাই। কিন্তু সেই নান্দনিক ব্যাটিংয়ের বিপরীতে আছে এক বিরাট প্রশ্ন—অধারাবাহিকতা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দশ বছর কাটিয়েও শীর্ষ পর্যায়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি তিনি। এ নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট। তাঁর মতে, ‘মাথার সমস্যার’ কারণেই লিটন এতটা অসম্পূর্ণ, আর এই সময়ে নিজের সামর্থ্যের ৫০ শতাংশও দিতে পারেননি জাতীয় দলকে।

সাম্প্রতিক সময়ে লিটনের ব্যাট যেন হাসছেই না। বিশেষ করে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন তিনি। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে ছন্দে না থাকায় সবশেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের স্কোয়াডে ছিলেন না ডানহাতি এই উইকেটকিপার ব্যাটার। ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রত্যাশিত পারফর্ম না করেও শ্রীলঙ্কা সফরের ওয়ানডে দলে ডাক মেলে তাঁর। যা হওয়ার কথা ছিল শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে। 

সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে সুযোগ পেয়ে শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন। রানখরায় থাকা ব্যাটারকে পরের দুই ম্যাচে একাদশেই নেয়নি বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টির শুরুটাও ভালো হয়নি তাঁর। অধিনায়ক লিটন দলকে চাপে ফেলে আউট হয়েছিলেন ১১ বলে ৬ রান করে। এমন অবস্থায় সাদা বলের ক্রিকেটে তাঁর জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। তবে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে নিজেকে মেলে ধরেছেন পুরনো ছন্দে ফিরে। এক চার ও ৫ ছক্কায় ১৫২ স্ট্রাইক রেটে খেলেছেন ৫০ বলে ৭৬ রানের ইনিংস খেলেছেন।

লিটনের ওমন ইনিংসের দিনে শ্রীলঙ্কাকে ৯৪ রানে গুঁড়িয়ে বড় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ১৩ ইনিংস পর হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া ডানহাতি ব্যাটারকে কথা বলতে গিয়ে পাইলট আবারও মনে করিয়ে দিয়েছেন, লিটন স্কিলফুল ব্যাটার। তবে ধারাবাহিক না হতে পাওয়ার কারণটাও দেখিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক। পাইলট মনে করেন, কোন বোলারকে কখন মারতে হবে আর কখন মারতে হবে না সেটা গুলিয়ে ফেলছেন লিটন।

এ প্রসঙ্গে পাইলট বলেন, ‘আমার মনে হয় লিটন তো অসাধারণ স্কিলফুল প্লেয়ার। কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে মাথার সমস্যা। কালকে যখন ব্যাটিং করেছে দেখলেই ভালো লাগে, কত সুন্দর খেলেছে। এমনকি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইনিংস দেখা গেছে। কিন্তু একজন খেলোয়াড় একটা বড় দলের সঙ্গে যখন ৭০ বা ১০০ রান করতে পারে সে কেন ধারাবাহিক হতে পারে না। আমি ব্রেইন বলতে বুঝাচ্ছি কোন সময় কোন বোলারকে মারব আবার কোন সময় কোন বোলারকে মারব না। ক্যালকুলেশন, শট সিলেকশন—এগুলো আসবে ব্রেইন থেকে।’

শুভমান গিলের উদাহরণ দিয়ে পাইলট জানান, তাদের দুজনের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে মেধার ব্যবহার। তিনি বলেন, ‘আপনি দেখুন—শুভমান গিল রানের পর রান করে যাচ্ছে অথচ লিটন দাস ১০ বছর আগে থেকে খেলছে। ১০ বছর আগে কিন্তু ৬০-৭০ রান করেছে বড় দলের সঙ্গে, এখন কেন পারছে না। সুইপ, রিভার্স সুইপ, পুল, হুক খেলতে পারে। শুধুমাত্র দুইটা খেলোয়াড়ের মধ্যে পার্থক্য আমি কতখানি মেধাটা ব্যবহার করতে পারছি ওইখানে।’

‘স্বাভাবিকভাবে একটা ব্যবসায়ীকের মতো—কোন সময় আপনি কম মূল্যে কিনবেন আর কোন সময় আপনি বেশি দামে কিনবেন। একজন ব্যবসায়ী যেভাবে চিন্তা করে। অনেক ব্যবসায়ীকে দেখবেন যেকোন সময় ধরা খেয়ে যায় আবার ভালো ব্যবসায়ীরা কোনদিনই লস করে না। ব্যাপারটা হচ্ছে ব্যবসাটাকে সে ভালো মতো পিক করতে পারে। লিটন দাসের আমার মনে হয় ওই জায়গাতে একটু সমস্যা আছে।’

২০১৫ সালের জুনে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পা রাখেন লিটন। ১০ বছরের ক্যারিয়ারে ৫০ টেস্টে ৩৪.০৫ গড়ে ২ হাজার ৯২৯ রান করেছেন তিনি। ৯৫ ওয়ানডে খেলা ডানহাতি ব্যাটার ২ হাজার ৫৬৯ রান করেছেন ২৯.৮৭ গড়ে। টি-টোয়েন্টিতে ২২.৮৮ গড়ে ২ হাজার ২৪৩ রান করেছেন লিটন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এক দশক পার করলেও তিন সংস্করণ মিলে ১০ হাজার রান করতে পারেননি তিনি।

পাইলট মনে করেন, লিটন নিজেই নিজেকে তলানিতে নিয়ে গেছেন। সেই সঙ্গে এও মনে করিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সামর্থ্যের অর্ধেকও দিতে পারেননি। পাইলট বলেন, ‘নিজেকে চিন্তা করতে হবে কেন আমি মিস করছি। লিটন গ্রেট প্লেয়ার কিন্তু ও নিজেকে নিজে অনেক নিচে নিয়ে গেছে। ১০ বছরে আমার মনে হয় ও ৫০ শতাংশও দেয়নি।’


ইউটি/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
এনসিপি’র সমন্বয় কমিটি অনুমোদনের দুই দিনের মধ্যেই তিনজনের পদত্যাগ Jul 15, 2025
img
জুলাই আন্দোলনে সম্পৃক্ত নারীদের খুঁজে বের করার উদ্যোগ নিল সরকার Jul 15, 2025
img
এনসিপি ভাগবাটোয়ারার রাজনীতিতে আগ্রহী নয়: নাহিদ ইসলাম Jul 15, 2025
img
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফলাফল করা শিক্ষার্থীদের জন্য সুখবর Jul 15, 2025
img
পুতিনকে ৫০ দিনের আলটিমেটাম দিলেন ট্রাম্প Jul 15, 2025
img
মব জাস্টিস সমাজের মরণ ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে : রিজভী Jul 15, 2025
img
১৪ জুলাই স্মরণে ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানে ফের উত্তাল ঢাবি Jul 15, 2025
img
টাকার বিপরীতে কমল ডলারের দাম Jul 15, 2025
img
বরগুনায় এনসিপির পথসভা, মঞ্চে সারজিসকে দেখে ‘দুলাভাই দুলাভাই’ স্লোগানে মুখর ছাত্র-জনতা Jul 15, 2025
img
'একজন প্লেয়ার হিসেবে সাকিবের বিকল্প নেই' Jul 14, 2025
img
নিজেরা মেঝেতে বসে শহীদদের মা-বাবাকে চেয়ারে বসালেন উপদেষ্টারা! Jul 14, 2025
img
ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা, আটক ২ Jul 14, 2025
img
জার্মান পার্লামেন্টে রংধনু পতাকা উত্তোলন নিষিদ্ধ Jul 14, 2025
img
৫০ ডিগ্রির ভয়াবহ গরমে কাঁপছে আমিরাত Jul 14, 2025
img
উচ্চকক্ষকে দুর্বল করার অপচেষ্টা চলছে: আখতার হোসেন Jul 14, 2025
img
সাগরে নিম্নচাপ: সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর সংকেত Jul 14, 2025
img
রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব সম্প্রদায়েরও বড় দায় আছে : কক্সবাজারে দুই উপদেষ্টা Jul 14, 2025
img
সিআইডি সেজে প্রবাসীর স্বর্ণালংকার লুট, মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণ Jul 14, 2025
img
সালাউদ্দিনকে সরানোর কোনো ভাবনা নেই বিসিবির Jul 14, 2025
img
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তারা গণতন্ত্রের শত্রু দাবী ফখরুলের Jul 14, 2025