মব জাস্টিস এখন সমাজে ক্যান্সারের মতো মরণ ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
সোমবার (১৪ জুলাই) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বিএনপির ‘প্রাথমিক সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ’ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সারা দেশে চলমান মব জাস্টিসের নানা ঘটনার সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘আমরা তো আগে মব জাস্টিসের কথা শুনিনি। এখন এই মব জাস্টিস সমাজের ক্যান্সারে পরিণত হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কুপিয়ে, লাঠির আঘাতে ছাত্রদল নেতা সৌম্যকে হত্যা করা হয়েছে, মানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জলকে ফজলুল হক হলে মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এসব কারা করছে, সবাই জানে। আজ অনেকেই বড় বড় কথা বলছেন আর বিএনপির বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছেন। তবে বিএনপির নাম ব্যবহার করে কেউ অপকর্ম করলে তাদের কেবল দল থেকেই বহিষ্কার করা হচ্ছে না, বিএনপি নিজেরা মামলা করছে এবং পুলিশকেও ব্যবস্থা নিতে বলছে।’
তিনি বলেন, ‘এর অনেক প্রমাণ নারায়ণগঞ্জেই আছে। এখানকার নেতারাও তা বলতে পারবেন। কিন্তু আজ ইসলামি লেবাসধারী দু-একটি সংগঠন নতুন কিছু মাসুম বাচ্চাদের দিয়ে কথা বলাচ্ছে। বিএনপি যদি অপরাধের পর কোনো ব্যবস্থা না নিত, অপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিত, তাহলে এক কথা ছিল। কিন্তু সেটা তো দিচ্ছে না।’
এনসিপি ও অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার সমালোচনা করে এবং সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘ছাত্রদের একটি সংগঠন হয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে প্রত্যেকের রাজনৈতিক দল করার স্বাধীনতা আছে। আমরা প্রত্যেকের প্রতি শুভেচ্ছা জানাই। আমরা একে অপরের সমালোচনা করব, আবার একই প্ল্যাটফর্মে দাঁড়াবো। কিন্তু মনে হচ্ছে, কোথাও থেকে নির্দেশিত হয়ে তারা নানা কথা বলছেন।’
দীর্ঘ বক্তব্যে রিজভী আরও বলেন, ‘আমরা বিএনপি ড. ইউনূসের সরকারের প্রতি সমর্থন জানাই। এই সরকার তো নিরপেক্ষ সরকার। এতে এনসিপিরও প্রতিনিধি আছে। তাহলে নিরপেক্ষ সরকারের উপদেষ্টারা নিজেরাই রাজনৈতিক দলের সদস্য হয়ে কীভাবে দায়িত্ব পালন করছেন? তারা বলছেন, বিএনপি চাঁদাবাজদের দায়িত্ব নিচ্ছে। অথচ তাদের দুজন উপদেষ্টার এপিএস শত কোটি টাকার মালিক বলে বেরিয়ে এসেছে। তাদের লোকজন ঠিকাদারির জন্য ডাকছে, কোনো কোনো উপদেষ্টার নাকি কোটি টাকার ফ্ল্যাটও পাওয়া গেছে। এসব চাপা থাকছে না। তাহলে আপনারা বলেননি, আমাদেরও কেউ কেউ এসব করছে। নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খণ্ডন না করে বিএনপিকে দোষারোপ করছেন কেন?’
কুমিল্লার মুরাদনগরে গৃহবধূর শ্লীলতাহানির ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের এক উপদেষ্টাকে ইঙ্গিত করে রিজভী বলেন, ‘একটি ইসলামি দলের ছাত্র সংগঠনের মতো আপনারা (এনসিপি) বিএনপির নামে লাগামহীন অপপ্রচার করছেন। মুরাদনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক নারীর শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিএনপির একটি অঙ্গসংগঠনের নাম টেনে আনা হয়েছে। ওই ঘটনার ধারাবাহিকতায় তিনজনকে খুন করা হয়েছে। পরে ওই নারীর স্বামী বলেছেন, সরকারে থাকা এক উপদেষ্টার স্থানীয় কর্মীরাই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইসলামি লেবাসধারী একটি দল এখন আওয়ামী লীগের তাবেদারদের এজেন্সি নিয়েছে। আওয়ামী লীগ মানেই লুটপাট, হানাহানি। যারা ইসলামের নামে কথা বলেন, তারাই ’৮৬ সালে শেখ হাসিনার সঙ্গে নির্বাচনে গিয়েছিলেন। অথচ তখন তারা বলেছিল, এরশাদের অধীনে নির্বাচনে গেলে জাতীয় বেঈমান হবে। এখন তারাই ছাত্রদের দিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
নির্বাচন ঘিরে বিএনপি এবং তারেক রহমানকে নিয়ে দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র চলছে বলেও মন্তব্য করেন রিজভী। তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। কিন্তু তারেক রহমান আমাদের নেতাকর্মীদের স্পষ্টভাবে বলেছেন, কোনো উসকানিতে পা দেয়া যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। এরপরই হঠাৎ করে পিআরআর নির্বাচন পেছানোর দাবি শুরু হয়েছে। এখন তারা একসাথে কোরাস গাইছে। এসব চক্রান্ত সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।’
জুলাই অভ্যুত্থানে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের অবদানের কথাও স্মরণ করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘ছাত্রদলের ১৪২ জন নেতাকর্মী, বিএনপির ২৩ জন কর্মী এবং এক রিকশাচালক পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন। বিগত ১৬ বছর যারা আন্দোলনে ছিলেন, তাদের সম্মিলিত শক্তি ও ছাত্র জনতাই শেখ হাসিনার মতো ঘাতককে বাংলাদেশ থেকে বিদায় করেছে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাহফুজুর রহমান এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক বাছির উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নান, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দীপু, যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকনসহ দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
অনুষ্ঠানে জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারের সদস্য এবং মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের সম্মাননা জানানো হয়। রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।
আরআর