এসি রুমে বসে রাজনীতি করার আর সুযোগ নেই : হান্নান মাসউদ

বাংলাদেশের গতানুগতিক রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি কঠিন করে তুলব বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ।

সোমবার (১৪ জুলাই) সন্ধ্যায় হাতিয়ার তুফানিয়া গ্রামে জিও ব্যাগ ডাম্পিং প্রকল্পের শুভ সূচনা উপলক্ষ্যে সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। তার দোয়া ও মিলাদের মাধ্যমে ১ লাখ ২০ হাজার বস্তা জিও ব্যাগ ডাম্পিং প্রকল্পের শুভ সূচনা হয়।

আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, আমি হাতিয়ায় এসেছি, আমি বাংলাদেশের রাজনীতি করেছি। আমি বলছি বাংলাদেশের গতানুগতিক রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি কঠিন করে তুলব। নেতা হতে হলে বৃষ্টির মধ্যে সব জায়গায় যেতে হবে, কাঁদার মধ্যে যেতে হবে। এসি রুমে বসে রাজনীতি করার আর সুযোগ নেই। আর বড় বড় নেতার ঘরে ঢুকে হাত-পা ধরে রাজনীতি করার সুযোগ নেই।

রাজনীতি করতে হলে কাদার মধ্যে মানুষের কাছে যেতে হবে, নদীর ধারে যেতে হবে, গরিব-দুঃখী মানুষের কাছে যেতে হবে। রাজনীতি করলে ভূমিহীনদের ভূমি মেরে না দিয়ে তাদের ভূমি তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে। রাজনীতি করতে হলে রাস্তাঘাটের কাজ করতে হবে, সেখান থেকে চাঁদা খাওয়া যাবে না।

তিনি আরও বলেন, আমি খুব সুন্দরভাবে হয়তো গুছিয়ে কথা বলতে পারি না। আমার বয়স কম কিন্তু আপনারা আমার থেকে বয়সে অনেক বড়, অনেক সুন্দরভাবে গুছিয়ে কথা বলতে পারেন, এই হাতিয়ার মানুষের জন্য গত ৫০ বছর কি করেছেন? আপনারা শুধু একটা জিনিসই পারেন মানুষকে ব্যঙ্গ করে স্লোগান দেওয়া, দলকে ব্যঙ্গ করে স্লোগান দেওয়া। এর বাইরে আপনারা আর কিছুই পারেন না।

আপনার বাসার সামনে গিয়ে আমার থাকার জায়গায় গিয়ে এনসিপি ভুয়া বলে স্লোগান দেন। এনসিপি আপনাদের কি করেছে? এনসিপি হাতিয়ার ভূমিহীনদের ভূমি বুঝিয়ে দিয়েছে। এনসিপি হাতিয়ার মানুষের রাস্তাঘাট করে দিচ্ছে, হাতিয়ার মানুষের নদীভাঙন রোধে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে।

হান্নান মাসউদ বলেন, আমার বেশি কিছু চাওয়ার নাই, আমি রিস্ক নিয়েছি। আমি ৫ আগস্টের আগেও রিস্ক নিয়েছি, গুলি খেয়েছি। শেখ হাসিনার পতন ঘটাব বলছি, পতন ঘটাইছি। আমি হাতিয়ার মানুষকে মুক্ত করব বলেছি, মুক্ত করেছি। সামনে দিনে আর কেউ যদি চাঁদাবাজ ধান্দাবাজ হয়ে উঠতে চায় তাদের থেকেও এই হাতিয়ার মানুষকে মুক্ত করব ইনশাআল্লাহ।

ভূমিহীনদের উদ্দেশ্যে হান্নান মাসউদ বলেন, বন্দোবস্তের সময় প্রকৃত ভূমিহীনদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। বিএনপি-আওয়ামী লীগের সময় ভূমি বন্দোবস্ত হয়েছে কিন্তু প্রকৃত ভূমিহীন কেউ তা পায়নি। আমি কথা দিচ্ছি প্রকৃত ভূমিহীনদের ভূমি বন্দোবস্তের ব্যবস্থা করব ইনশাআল্লাহ।

আপনাদের কাছ থেকে কেউ যদি টাকার বিনিময়ে ভূমি বন্দোবস্ত দিতে চায় তাদের বেঁধে রাখবেন। টাকা দিয়ে কোনো জমি হবে না। সরকারি ফি দিয়ে জমি হবে। প্রকৃত ভূমিহীনরা তাদের ভূমি পাবে, জমি পাব। আগামী শীতকাল নাগাদ প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এই কাজ শুরু করব।

তিনি আরও বলেন, ২৪ এর আন্দোলনের পর হাতিয়ার মানুষের পরিবর্তন তা একটা গ্রুপের সহ্য হয় না। তারা পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করতে চায়।

আপনাদের সুখচরের মানুষ না হলেও দুই-আড়াই হাজার মানুষ তাদের জমি বুঝে পেয়েছে এটা তাদের সহ্য হয় নাই। আপনাদের পকেট কেটে ১০-১৫ হাজার টাকা নিতে পারে নাই তাই তাদের সহ্য হয় না।

বৈরী আবহাওয়া আমাদের জন্য কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না উল্লেখ করে হান্নান মাসউদ বলেন, ঝড়-বৃষ্টি হোক আর দিন বা রাত হোক যেকোনো সময় যেকোনো মুহূর্তে হাতিয়ার মানুষ আমাকে ডাকলে তারা তাদের কাছে পাবে। তাই আমি উদাহরণ হিসেবে এই বৈরী আবহাওয়ায় আপনাদের কাছে এসেছি। আমি হাতিয়াতে এসেছি উদাহরণ সৃষ্টির জন্যে। আমরা উদাহরণ সৃষ্টি করতে চাই। একটি শান্তিপূর্ণ রাজনীতি একটি উন্নয়ন নির্ভর রাজনীতি এই হাতিয়াতে হওয়া সম্ভব। আমরা এমন উদাহরণ সৃষ্টি করতে চাই মানুষের জন্য, মানুষের সাথে, মানুষের হয়ে রাজনীতি করার।

হাতিয়া কলেজের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মফিজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় আব্দুল হান্নান মাসউদের বাবা আমিরুল ইসলাম মোহাম্মদ আবদুল মালেক, জাতীয় নাগরিক পার্টির হাতিয়া উপজেলা প্রতিনিধি ইউসুফ রেজাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

এমআর/টিকে 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নাটোরে সেই দুই নারীর চিকিৎসার দায়িত্ব নিল সেনাবাহিনী Jul 15, 2025
img
অশ্রুসিক্ত নয়নে অভিনয় জীবনের গল্প শোনালেন আনোয়ারা Jul 15, 2025
৫০ দিনের আল্টিমেটাম, রাশিয়াকে শা'স্তি দিতে প্রস্তুত ট্রাম্প Jul 15, 2025
জুলাই স্মরনে ‘স্ট্রিট মেমোরি স্ট্যাম্প’এ, যা যা থাকছে Jul 15, 2025
বিএসবির খায়রুলের প্রতারণায় শিক্ষার্থীদের সর্বনাশ, উত্তপ্ত আদালত Jul 15, 2025
img
১৯ জুলাই জামায়াতের সমাবেশ বাস্তবায়নে ডিএমপির সঙ্গে বৈঠক Jul 15, 2025
রেল মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষমতা হাতে পেলেন ড. মইনউদ্দিন Jul 15, 2025
img
আগামী রমজানের আগে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে জানালেন রিজভী Jul 15, 2025
img
আদালতে বিএসবির বাশারকে কিল-ঘুষি-লাথি, ডিম নিক্ষেপ Jul 15, 2025
img
ঢাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে: ডিএমপি কমিশনার Jul 15, 2025
img
ছাত্ররা থাকবে পাঠকক্ষে, ক্লাসরুমে, সচিবালয়ে ওদের কাজ কী: প্রশ্ন রিজভীর Jul 15, 2025
img
'হরি হরা বীরা মল্লু-পার্ট টু' নিয়ে নিধির উক্তিতে হতাশ ভক্তরা Jul 15, 2025
img
যে কারনে বার বার প্রত্যাখ্যান হচ্ছে বাংলাদেশিদের ভিসা Jul 15, 2025
img
নানির নতুন সিনেমায় সাহসী চরিত্রে কায়াদু লোহার Jul 15, 2025
img
মুজিববাদী আদর্শ গত ৫০ বছর দেশকে বিভাজিত করে রেখেছিল : নাহিদ ইসলাম Jul 15, 2025
img
পুলিশ সদস্যদের কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না: ডিআইজি রেজাউল করিম Jul 15, 2025
img
বলিউডে শোকের ছায়া, বিনোদন জগত হারালো এক নক্ষত্র Jul 15, 2025
img
‘সাকিব থাকার সময় দল সাজানো সহজ ছিল’ Jul 15, 2025
img
এমন অভিজ্ঞতা এবারই প্রথম : তোরসা Jul 15, 2025
img
বাণিজ্যের নামে কোন গোপন চুক্তি চলবে না: সিপিবি Jul 15, 2025