জুলাই সনদ কেবল একটি রাজনৈতিক বক্তব্য নয়, রাষ্ট্রকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার প্রচেষ্টা : জিল্লুর রহমান

‘জুলাই সনদ কেবল একটি রাজনৈতিক বক্তব্য নয়, এটি রাষ্ট্রকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার একটা প্রচেষ্টা’ বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংবাদিক জিল্লুর রহমান। তিনি বলেছেন, এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হলো— জুলাই সনদ নিয়ে দ্রুত ঐক্যমত তৈরি করা। এটা শুধু অতীতকে সম্মান জানানোর জন্য নয়, ভবিষ্যতের পথ চলাও অনেকাংশে এই ঘোষণার ভাষা ও অবস্থানের ওপর নির্ভর করছে। সেই ভবিষ্যতের দিশা দিতে হলে সব কৌশল, সব দোলাচল ও দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।

স্বাধীন, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, নাহলে গণতন্ত্রের আরেকটি দুঃস্বপ্ন এই জাতিকে গিলে ফেলবে।

সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলে এক ভিডিওতে এসব কথা বলেন তিনি।

জিল্লুর রহমান বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে নির্বাচন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। বিচার ও সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া।

যা নির্বাচন পর্বেও হতে পারে, পূর্বেও হতে পারে বা নির্বাচন পরবর্তীতে চলতে পারে। এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে দরকার স্থিতিশীলতা। সেই স্থিতিশীলতা আসবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমেই। রাজনৈতিক দলগুলো যদি নিজেদের কৌশলগত স্বার্থে নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে চায়, তাহলে তা পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থাকেই অচল করে তুলবে।

ইতিহাস বলে— যে দল যতই জনপ্রিয় হোক, নির্বাচনের মাঠে নামার আগে কেউই নিশ্চিত থাকতে পারে না। কারণ ভোটারদের আচরণ সময় এবং বাস্তবতার সঙ্গে বদলায়। ২০০১ সালের পর দুই যুগ পার হয়েছে, যে প্রজন্ম এখন ভোট দেবে, তারা কখনোই ভোট দেয়নি। তাদের মন জয়ের জন্য পুরনো হিসাব-নিকাশ, পুরনো জনপ্রিয়তা বা দলীয় পরিচয় যথেষ্ট নয়। তাদের দরকার ভবিষ্যতের ভিশন।

এই ভিশন বাস্তবায়নে কারা কারা এগিয়ে থাকবে, সেটি নির্ধারণ করবে অবাধ নির্বাচন। যদি সেই নির্বাচন না হয়, অথবা বিলম্বিত হয়, তাহলে জনগণের আস্থা হারাবে কেবল একটি সরকার নয় বরং গোটা রাজনৈতিক ব্যবস্থাই।’

যেসব দল সুবিধাজনক অবস্থানে নেই, তাদের জন্য নির্বাচনকে বিলম্বিত করা রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষার পথ মন্তব্য করে তিনি বলেন, এনসিপি, জামায়াত এবং ইসলামী আন্দোলন এখনো বিচার ও সংস্কারের অগ্রগতির ওপর নির্ভর করে নির্বাচন হবে কিনা সে বিষয়ে মুখ খুলছে। এই দলগুলোর বক্তব্য শুনে মনে হতে পারে নির্বাচন নয়, তারা এখন সংস্কার ও বিচারকেই সামনে রেখে নিজেদের অবস্থান নির্ধারণ করছে।

অনেকে বলছেন— এটি একটি কৌশল, যাতে করে নির্বাচন প্রলম্বিত হয়, এর ফাঁকে তাদের রাজনৈতিক শক্তি গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে। যেসব দল মনে করে অবাধ নির্বাচনে তারা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই, তাদের জন্য এই বিলম্বই হতে পারে রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষার পথ।

তিনি আরো বলেন, বিএনপি যখন নির্বাচনের জন্য আগ্রহী এবং ফেব্রুয়ারিকে ডেডলাইন ধরে এগোতে চায়, তখন তাদের এক সময়ের মিত্র জামায়াত বলছে— এখনো লেভেল প্লেইং ফিল্ড হয়নি, প্রশাসন এবং পুলিশ বিএনপির নিয়ন্ত্রণে। অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন বলছে— থানা থেকে আসামি ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে সুষ্ঠ নির্বাচন সম্ভব নয়। এসব বক্তব্যে প্রশ্ন জাগে জামায়াত বা ইসলামী আন্দোলনের এমন উদ্বেগ কী প্রকৃত, নাকি নির্বাচন বিলম্বের কৌশল?

অনেকেই বলছেন এ দলগুলো জানে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তাদের জন্য জায়গা আরো সংকুচিত হবে। তাই এখন তারা সময় নিচ্ছে, ইসলামপন্থীদের ভোট ভাগ না হয়ে যেন এক জায়গায় থাকে, সেটাই তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য। এই প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশন বা সরকারের ভূমিকা আরো জটিল হয়ে উঠেছে। কারণ একদিকে তাদের প্রস্তুতির নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমতের সংকট এতটাই গভীর, কেউ জানে না শেষ পর্যন্ত নির্বাচন আদৌ হবে কিনা।

জুলাই সনদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে জুলাই সনদ এখন কেবল একটি ঘোষণা নয় বরং ঐতিহাসিক রূপান্তরের দাবি। ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্নে যে রাজনৈতিক কসরত চলছে, তা আজ এক অদ্ভুত জটিলতার সম্মুখীন।

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বহু আশ্বাস এবং প্রচেষ্টার পরেও এই সনদ এখনো আলোর মুখ দেখেনি। একদিকে সরকারের তরফ থেকে খসড়া তৈরি করে রাজনৈতিক দলগুলোকে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে এনসিপি ও জামায়াত এমনকি ইসলামী আন্দোলনের মতো দলগুলো বিভিন্ন শব্দগত ও সাংবিধানিক চুক্তি তুলে ধরে আপত্তি জানিয়ে চলেছে। সবারই মনে রাখা জরুরি, জুলাই সনদ কেবল একটি রাজনৈতিক বক্তব্য নয়, এটি হলো রাষ্ট্রকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার একটা প্রচেষ্টা।

এমআর/টিকে 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
চোখের জলে ভিজে অভিনয়জীবনের গল্প শোনালেন আনোয়ারা Jul 15, 2025
৫০ দিনের আল্টিমেটাম, রাশিয়াকে শা'স্তি দিতে প্রস্তুত ট্রাম্প Jul 15, 2025
জুলাই স্মরনে ‘স্ট্রিট মেমোরি স্ট্যাম্প’এ, যা যা থাকছে Jul 15, 2025
বিএসবির খায়রুলের প্রতারণায় শিক্ষার্থীদের সর্বনাশ, উত্তপ্ত আদালত Jul 15, 2025
img
১৯ জুলাই জামায়াতের সমাবেশ বাস্তবায়নে ডিএমপির সঙ্গে বৈঠক Jul 15, 2025
রেল মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষমতা হাতে পেলেন ড. মইনউদ্দিন Jul 15, 2025
img
আগামী রমজানের আগে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে জানালেন রিজভী Jul 15, 2025
img
আদালতে বিএসবির বাশারকে কিল-ঘুষি-লাথি, ডিম নিক্ষেপ Jul 15, 2025
img
ঢাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে: ডিএমপি কমিশনার Jul 15, 2025
img
ছাত্ররা থাকবে পাঠকক্ষে, ক্লাসরুমে, সচিবালয়ে ওদের কাজ কী: প্রশ্ন রিজভীর Jul 15, 2025
img
'হরি হরা বীরা মল্লু-পার্ট টু' নিয়ে নিধির উক্তিতে হতাশ ভক্তরা Jul 15, 2025
img
যে কারনে বার বার প্রত্যাখ্যান হচ্ছে বাংলাদেশিদের ভিসা Jul 15, 2025
img
নানির নতুন সিনেমায় সাহসী চরিত্রে কায়াদু লোহার Jul 15, 2025
img
মুজিববাদী আদর্শ গত ৫০ বছর দেশকে বিভাজিত করে রেখেছিল : নাহিদ ইসলাম Jul 15, 2025
img
পুলিশ সদস্যদের কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না: ডিআইজি রেজাউল করিম Jul 15, 2025
img
বলিউডে শোকের ছায়া, বিনোদন জগত হারালো এক নক্ষত্র Jul 15, 2025
img
‘সাকিব থাকার সময় দল সাজানো সহজ ছিল’ Jul 15, 2025
img
এমন অভিজ্ঞতা এবারই প্রথম : তোরসা Jul 15, 2025
img
বাণিজ্যের নামে কোন গোপন চুক্তি চলবে না: সিপিবি Jul 15, 2025
img
দশম গ্রেডে উন্নীত হচ্ছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা Jul 15, 2025