মৌলিক সংস্কারে বিরোধিতা করছে বিএনপি : এনসিপি

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চলমান সংলাপে সব দলগুলো ছোটখাটো সংস্কার প্রস্তাব মেনে নিলেও মৌলিক সংস্কারের বিষয়গুলো উত্থাপন হলেই বিএনপি ও গুটিকয়েক দল সেখানে বাধা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন।

তিনি বলেছেন, তারা (বিএনপি) ঐকমত্যের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে। শুধু তাই নয়, মৌলিক সংস্কারের এজেন্ডাগুলো যেন ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবে না থাকে, তার পরিবেশ তৈরি করছে।

আজ (মঙ্গলবার) জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার ১৪তম দিনের আলোচনা শেষে এনসিপির সদস্য সচিব এসব কথা বলেন। তবে, মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য রাস্তায় নামতে হলেও এনসিপি নামবে বলে হুঁশিয়ারি দেন আখতার।

তিনি বলেন, বিশেষ করে সংবিধানের প্রস্তাবনা— অনুচ্ছেদ ৪৮, ৫৬, ১৪২ এবং নতুনভাবে সংযোজনযোগ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কিত অনুচ্ছেদ (৫৮(খ), ৫৮(গ), ৫৮(ঘ)) যদি ভবিষ্যতে সংশোধন করতে হয়, তা গণভোটের মাধ্যমে পাশ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সংবিধান সংশোধনের জন্য নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থনের প্রস্তাব করা হয়েছে এনসিপির পক্ষ থেকে। তবে, বিশেষ অনুচ্ছেদগুলোর ক্ষেত্রে গণভোটের আবশ্যকতা আমরা চেয়েছি।

সংসদে উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাবে এনসিপি পিআর (সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি) পদ্ধতি চায় উল্লেখ করে আখতার বলেন, কোনো দল এক শতাংশ ভোট পেলেই যেন উচ্চকক্ষে প্রতিনিধিত্বের সুযোগ পায়। এতে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা পাবে।

তবে আখতার হোসেন অভিযোগ করেন, উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি নিয়ে অধিকাংশ দল একমত হলেও বিএনপি ও গুটিকয়েক দল পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনের বিরোধিতা করছে। শুধু তাই নয়, উচ্চকক্ষের প্রস্তাবের আলোচনার বিষয়টিও সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের বাইরে রাখার চেষ্টা করছে কোনো-কোনো দল।

তিনি বলেন, সংস্কারের জায়গাগুলোকে সংখ্যাতাত্ত্বিক আলোচনায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ২০টি প্রস্তাবের মধ্যে আমার ১২টি মেনে নিয়েছি, ৮টি মানি না। কেন সবগুলো মানতে হবে, এমন একটা অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ছোটখাটো সংস্কার প্রস্তাবনা সব দল মেনে নিয়েছে। কিন্তু যখন মৌলিক সংস্কারের জায়গায় এসেছে, অর্থাৎ যখন সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগে একটি সমন্বিত নিয়োগ কমিটির কথা আসছে, তখন তারা (বিএনপি) বেঁকে বসছে। যখন উচ্চকক্ষে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের প্রশ্নে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের কথা আসছে, তখন তারা সেখান থেকে সরে আসছে। মানে হচ্ছে, রাষ্ট্রের ভাঙা পায়ে ব্যান্ডেজ করলেও হাড় জোড়া লাগার প্রশ্নে বেঁকে বসেছেন। তাদের কথা হচ্ছে, ব্যান্ডেজ করেছি এটা মেনে নাও, হাড় জোড়া লাগাতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।

মৌলিক সংস্কারের প্রশ্নে এনসিপি কোনো ছাড় দেবে না বলেও উল্লেখ করেন আখতার। তিনি বলেন, এইগুলো টেবিলের আলোচনার মাধ্যমে শেষ করতে হবে। আর যদি মৌলিক সংস্কারকে বাধাগ্রস্ত করা হয়, মৌলিক সংস্কারবিহীন জুলাই সনদের দিকে অগ্রসর করা হয় তাহলে জনগণের প্রত্যাশার জায়গা পূরণ হবে না। সেক্ষেত্রে টেবিলের বাইরে মাঠপর্যায়ে সংস্কারের এজেন্ডা ঠিক করার পরিস্থিতি কেউ তৈরি করলে আমাদের সেই পথে অগ্রসর হতে হবে।

মৌলিক সংস্কার বলতে এনসিপি কী বোঝাচ্ছে— জানতে চাইলে আখতার বলেন, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, প্রধানমন্ত্রী তার নির্বাহী ক্ষমতা কতটুকু প্রয়োগ করতে পারবেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া কী হবে, উচ্চকক্ষের গঠন ও কার্যাবলি কী রকম হবে এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে দলীয় প্রভাবের বাইরে যেন নিরপেক্ষ নিয়োগ হয়; তার জন্য সমন্বিত নিয়োগ করার বিষয়গুলো আমরা মৌলিক সংস্কারের মধ্যে রেখেছি।

তিনি আরও জানান, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় এনসিপি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও গঠনতন্ত্র জমা দিয়েছে। কমিশনের কিছু পর্যবেক্ষণ ইতোমধ্যে তারা পেয়েছে এবং দ্রুত সংশোধিতভাবে তা দাখিল করা হবে।

এমকে/এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
অ্যাশেজ খেলার জন্য যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত আর্চার Jul 16, 2025
img
কলাপাড়ায় ইউএনওর বদলিতে মিষ্টি বিতরণ Jul 16, 2025
img
সিলেবাস সংস্কারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ইউনিসেফের চুক্তি Jul 16, 2025
img
আবরার ফাহাদকে আসলেই ওরা মারতে পারে নাই, ডকুমেন্টারিটা দেখা শেষ করে স্তব্ধ হয়ে থাকলাম : সংস্কৃতি উপদেষ্টা Jul 16, 2025
কনার ডিভোর্স পেপারে দেখা গেল নুসরাত ফারিয়ার নাম Jul 16, 2025
img
বিরল ঘটনা, পবিত্র কাবাঘরের ঠিক উপরে সূর্যের অবস্থান Jul 16, 2025
img
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল শতবর্ষী কিংবদন্তি দৌড়বিদ ফৌজা সিংয়ের Jul 16, 2025
img
কিশোরগঞ্জে বজ্রপাতে প্রাণ হারাল ১ জন Jul 16, 2025
img
দেশে কোনো হত্যাকাণ্ডই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা কিংবা সাম্প্রদায়িকতার কারণে সংঘটিত হয়নি : পুলিশ সদর দপ্তর Jul 16, 2025
কুড়িগ্রামে শহীদ পরিবারের পাশে রিজভী, জানালেন আন্দোলনের পটভূমি Jul 16, 2025
img
নিবন্ধন প্রত্যাশী দলগুলোকে ত্রুটি সংশোধনে ১৫ দিন সময় দিয়ে ইসির চিঠি Jul 16, 2025
img
জুলাই শহিদ দিবস উপলক্ষ্যে ১৬ জুলাই দেশের সকল মসজিদে বিশেষ দোয়া-মোনাজাত Jul 16, 2025
img
পার্বত্য এলাকায় একীভূতকরণ প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে হবে : সুপ্রদীপ চাকমা Jul 16, 2025
img
রাজশাহীতে মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রীসহ আটক ২০ জন Jul 16, 2025
img
রাজশাহীর বাগমারায় মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে প্রাণ হারাল এক যুবক Jul 16, 2025
img
দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জুলাই পুনর্জাগরণ উদযাপনে ডকুমেন্টারি প্রদর্শনের নির্দেশ মাউশি’র Jul 16, 2025
img
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মাঠে ছিলাম ‘ক্ষুব্ধ নারী সমাজ’ প্লাটফর্মের ব্যানারে : ফরিদা আখতার Jul 16, 2025
img
মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ইংরেজি চর্চা করা উচিত : ধর্ম উপদেষ্টা Jul 16, 2025
img
বাংলাদেশে ভারতীয় শিল্পীদের ‘নিষিদ্ধ’, জয়াকে রেড কার্পেটে? প্রশ্ন তুললেন জুঁই Jul 16, 2025
img
সুন্দরবনে দুই নৌকাসহ ৫ জেলে আটক Jul 16, 2025