চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বহিঃসীমান্ত দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোতে ঢুকেছেন ৭৫ হাজার ৯০০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী। তাদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন বাংলাদেশিরা।
এদিকে সমুদ্রপথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপে অবৈধভাবে পাড়ি দিতে গিয়ে ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৭৬০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী। তাদের মধ্যেও সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ছিলেন বাংলাদেশি নাগরিক। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্ত সুরক্ষা সংস্থা ফ্রন্টেক্স এ তথ্য জানিয়েছে।
ইতালির সরকারি তথ্য বলছে, চলতি বছর ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে দেশটিতে ঢোকা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে বাংলাদেশিরা শীর্ষে রয়েছেন।
পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় এবং পশ্চিম আফ্রিকান রুট দিয়ে অভিবাসনপ্রত্যাশী আসার সংখ্যা তীব্রভাবে কমে যাওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনিয়মিত সীমান্ত অতিক্রম গত বছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় ২০ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে ফ্রন্টেক্স।
সংস্থাটি বলেছে, সার্বিকভাবে অভিবাসনপ্রত্যাশী আসার হার কমে আসলেও সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগরীয় অভিবাসন রুট এখনও ব্যস্ত রয়েছে। তবে, পশ্চিম বলকান, পূর্ব স্থল সীমান্ত এবং পশ্চিম আফ্রিকান অভিবাসন রুট দিয়ে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা তীব্রভাবে কমেছে। প্রথম ছয় মাসে আসা অভিবাসীদের মধ্যে সবার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশিরা। এরপরেই আছে মিশর ও আফগানিস্তানের নাগরিকেরা।
পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অভিবাসন রুট দিয়ে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা ২৫ ভাগ কমে হয়েছে ১৯ হাজার ছয়শ। তবে, লিবিয়ার উপকূল থেকে গ্রিক দ্বীপ ক্রিট পর্যন্ত নতুন পথ তৈরি হওয়ায় সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই রুটে অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা বেড়েছে।
সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগরীয় রুটে ২৯ হাজার তিনশ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী এসেছেন বলে জানিয়েছে ফ্রন্টেক্স। সংখ্যাটি ২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। এই বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রার জন্য লিবিয়া এখনও প্রধানতম ট্রানজিট দেশ। দেশটির উপকূল থেকে ২০ হাজার আটশ অভিবাসী ইতালিতে এসেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮০ শতাংশ বেশি।
পশ্চিম ভূমধ্যসাগরীয় রুটেও ২০২৪ সালের প্রথমার্ধের তুলনায় আগমন এ বছর ১৯ ভাগ বেড়েছে। শুধু জুনে গত বছরের একই মাসের তুলনায় এই রুট হয়ে দ্বিগুণ অভিবাসী এসেছেন। এই রুটে আলজেরিয়া এখনও প্রধানতম ট্রানজিট দেশ। কারণ, পাচারকারীরা উত্তর আফ্রিকা ছেড়ে এই রুটটিতে দৃষ্টি দিচ্ছে বলে মনে করছে ফ্রন্টেক্স।
বিপরীতে, পশ্চিম আফ্রিকার রুটে অভিবাসী আগমন গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪০ শতাংশ কমেছে। এ বছরের প্রথম ছয় মাসে ১১ হাজার তিনশ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে এই রুটে। আর জুনজুড়ে এই রুট দিয়ে আসা অভিবাসীর সংখ্যা মাত্র তিনশ।
ফ্রন্টেক্স বলছে, ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ট্রানজিট দেশগুলোর ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার কারণে এই নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ভূমধ্যসাগরে ৭৬০ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
ইতালির পরিসংখ্যানেও শীর্ষে বাংলাদেশিরা
ইতালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন নিরাপত্তার শাখার তথ্য বলছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত আসা দেশটিতে আসা অনিয়মিত অভিবাসীর সংখ্যা ৩১ হাজার ৯৪৮ জন। সংখ্যাটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কিছুটা বেশি, কিন্তু ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় অর্ধেক কম।
চলতি বছর ১০ হাজার ৩১১ জন বাংলাদেশি এসেছেন ইতালিতে। যা মোট আগমনের ৩২ শতাংশ। বাংলাদেশের পরেই রয়েছে ইরিত্রিয়ার নাম। চার হাজার ৪৬১ জন ইরিত্রিয়ান এসেছেন ইতালিতে। তৃতীয় অবস্থানে থাকা মিশরের নাগরিকের সংখ্যা তিন হাজার ৭২৩। এরপরে আছে পাকিস্তান, ইথিওপিয়া, সুদান, সিরিয়া, সোমালিয়া, গিনি, টিউনিশিয়া, আলজেরিয়া, ইরান, নাইজেরিয়া, মালি ও আইভরিকোস্টের নাম।
৭ জুলাই পর্যন্ত ইতালিতে আসা সঙ্গীবিহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিবাসীর সংখ্যা পাঁচ হাজার ৫৭৫। আর ২০২৪ সালে পুরো বছর মিলিয়ে এসেছিলেন আট হাজার ৭৫২ জন।
ফ্রন্টেক্স ও আইওএম-এর মতে, অবৈধ অভিবাসনের সংখ্যা কিছুটা কমলেও মানবিক সংকট, পাচার ও মৃত্যুর হার এখনও উদ্বেগজনকভাবে রয়ে গেছে
এমকে/এসএন