টেলিগ্রাম অ্যাপে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের মুনাফার লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। তাদের এমনই এক ফাঁদে পড়ে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার এক যুবক প্রায় ছয় লাখ টাকা খুইয়েছেন।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা থানায় প্রতারণার মামলা করলে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় সুনামগঞ্জ থেকে দুই প্রতারককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
শনিবার (১৯ জুলাই) দুপুরে তাদের আদালতের মাধ্যমে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন- আজাদ মিয়া (২৪) ও মারুফ আহমেদ পারভেজ (২১)। তাদের কাছ থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত মোবাইল ফোনসহ একাধিক ডিজিটাল ডিভাইস জব্দ করেছে পুলিশ।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, পীরগঞ্জ উপজেলার কেশবপুর এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য লাবলু মণ্ডলের ছেলে নাহিদ হাসান বাপ্পী টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে ‘HTTPS://findpenguintour.com’ নামের একটি ভুয়া অনলাইন কোম্পানির সদস্যদের সঙ্গে পরিচিত হন। কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে মোটা অঙ্কের কমিশনের প্রলোভন দেখানো হয় তাকে।এই ফাঁদে পড়ে নাহিদ গত ২১ এপ্রিল নগদ ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের একাউন্টে মোট ৫ লাখ ৪১ হাজার ৭৬৭ টাকা পাঠান।
পরবর্তীতে লভ্যাংশসহ টাকা ফেরত চাইলে প্রতারক চক্র আরও ৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা দাবি করে, এবং জানায়, এই টাকা দিলে ১৬ লাখ টাকা কমিশন দেওয়া হবে। নাহিদ পুনরায় টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা টালবাহানা শুরু করে এবং কমিশন না দেওয়ার হুমকি দেয়।
এ ঘটনায় গত ১৪ মে নাহিদের বাবা পীরগঞ্জ থানায় প্রতারণার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামরুল ইসলাম তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারকদের শনাক্ত ও অবস্থান নিশ্চিত করেন।
এরপর গত ১৮ জুলাই পীরগঞ্জ থানার একটি টিম সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় অভিযান চালিয়ে তাজপুর গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে আজাদ মিয়া এবং বানারশিপুর গ্রামের সাঈদ মিয়ার ছেলে মারুফ আহমদ পারভেজকে গ্রেপ্তার করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামরুল ইসলাম বলেন, টেলিগ্রাম অ্যাপ দিয়ে প্রতারণা করে ১০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় মূলহোতাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আসামিরা টেলিগ্রাম অ্যাপ ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া অনলাইন কোম্পানি খুলে মানুষকে বোকা বানিয়ে তাদের কাছ থেকে প্রতারণামূলকভাবে টাকা নিচ্ছে। চক্রটির সঙ্গে জড়িত অন্যান্য ব্যক্তিদের সনাক্তসহ গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম।
ওসি আরও জানান, দেশে অনলাইন অ্যাপস্ এবং ক্যাসিনোর সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের পাতানো ফাঁদে পড়ে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। আমরা প্রতারকদেরকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। প্রতারণা করে যেসব টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে, সেগুলোর উৎস ও গন্তব্যও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
ইউটি/টিএ