এশিয়ার দুই প্রতিবেশী থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ার মধ্যে টানা দুইদিন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। দুই দেশের বিরুদ্ধেই ভারী অস্ত্রসস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এরমধ্যে থাইল্যান্ড হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যদি এ সংঘাত চলতে থাকে তাহলে এটি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিরোধপূর্ণ সীমান্ত অঞ্চলে দুই দেশের সেনারা সংঘর্ষে জড়ায়। এরপর শুক্রবারও হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় বিমান থেকে হামলা, রকেট নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটে। দুইদিনে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই শুক্রবার হুঁশিয়ারির সুরে বলেছেন, “এ সংঘাত যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।” তিনি অভিযোগ করেন কম্বোডিয়া ভারী অস্ত্র ব্যবহার করেছে।
অপরদিকে কম্বোডিয়া অভিযোগ করেছেম, থাইল্যান্ড তাদের সীমান্ত এলাকায় নিষিদ্ধ ক্লাস্টার বোমা ছুড়েছে।
থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার সংঘাতের নেপথ্যে কী?
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মাঝে আকস্মিক এই সংঘাতের সূত্রপাত হয়েছিল গত মে মাসে। ওই সময় থাইল্যান্ড, কাম্বোডিয়া ও লাওস সীমান্তের সংযোগকারী এমেরাল্ড ট্রায়াঙ্গল অঞ্চলে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সৈন্যদের মাঝে সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে কম্বোডিয়ার এক সৈন্য নিহত হন।
মে মাসের ওই ঘটনায় উভয় দেশেরে সামরিক বাহিনী জানায়, তারা আত্মরক্ষার্থে ব্যবস্থা নিয়েছে এবং সংঘর্ষের জন্য পরস্পরকে দায়ী করে। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সামরিক নেতারা বলেন, তারা উত্তেজনা কমিয়ে আনার প্রত্যাশা করছেন। যদিও বাস্তবে দুই দেশই সীমান্তে সেনা মোতায়েন জোরদার এবং একে অপরকে হুঁশিয়ারি দিতে শুরু করে।
কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত চেকপয়েন্টের নিয়ন্ত্রণ নেয় থাইল্যান্ড। একই সঙ্গে সীমান্ত পারাপারে বিধিনিষেধ আরোপের পাশাপাশি কাম্বোডিয়ার সীমান্ত লাগোয়া বিভিন্ন শহরে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয় থাই কর্তৃপক্ষ।
সীমান্ত সংঘাতের সূত্র ধরে তৈরি হওয়া উত্তেজনার জবাবে থাইল্যান্ড থেকে ফল ও সবজি আমদানি বন্ধ করে দেয় কম্বোডিয়া। এছাড়া থাই সিনেমা ও টেলিভিশন নাটকের সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশটি।
সম্প্রতি সীমান্ত এলাকায় একের পর এক স্থলমাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় প্রতিবেশী দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে চরম অবনতি ঘটে। এর জেরে উভয় দেশ নিজেদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সীমিত করে ফেলে এবং কূটনীতিকদের ফিরিয়ে নেয়।
গত ১৬ জুলাই বিস্ফোরণে থাইল্যান্ডের এক সেনা পা হারান। পরবর্তী বিস্ফোরণ ঘটে গত বুধবার। এতে থাইল্যান্ডের অন্তত পাঁচ সৈন্য আহত হন। বিস্ফোরণে তাদের একজনের পা উড়ে যায়। বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষে উত্তেজনাকর এই পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করে।
এই সীমান্ত সংকট থাইল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন শিনাওয়াত্রাকে গত ১ জুলাই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। জুন মাসে কম্বোডিয়ার সাবেক ক্ষমতাধর নেতা হুন সেনের সঙ্গে তার একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়। ওই ফোনালাপে তিনি নিজ দেশের সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনামূলক মন্তব্য করেন।
মাত্র ৩৮ বছর বয়সে দায়িত্ব নেওয়া শিনাওয়াত্রা থাইল্যান্ডের সবচেয়ে কম বয়সী প্রধানমন্ত্রী। ফাঁস হওয়া ওই ফোনালাপে সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে মতপার্থক্যের ইঙ্গিত মেলায় স্থায়ীভাবে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন তিনি।
সূত্র: সিএনএন, বিবিসি
টিকে/