ট্রাম্পকে জান্তাপ্রধানের চিঠির পর গোপনে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করল যুক্তরাষ্ট্র

মিয়ানমারের সামরিক জান্তার ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে গোপনে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই সিদ্ধান্ত এমন একসময় এসেছে, যখন জান্তাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে 'সত্যিকারের দেশপ্রেমিক' বলে প্রশংসা করে একটি চিঠিতে নিষেধাজ্ঞা ও শুল্ক হ্রাসের আবেদন জানান।

শুক্রবার (২৫ জুলাই) যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, গত ১১ জুলাই ট্রাম্পের নেতৃত্বের প্রশংসা করে একটি চিঠি পাঠান জেনারেল মিন অং হ্লাইং। এই চিঠিতে তিনি যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে দুই দেশের পারস্পরিক কল্যাণের জন্য মিয়ানমারের ওপর থেকে শুল্ক হ্রাস এবং একটি বাণিজ্য চুক্তির প্রস্তাব দেন।

এক্ষেত্রে মিয়ানমারের পণ্য আমদানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক থেকে ১০-২০ শতাংশ কমানোর আহ্বান জানানো হয় এবং পাল্টা হিসেবে মিয়ানমারও আমেরিকান পণ্যের ওপর শুল্ক ০-১০ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেয়।

ওই চিঠি প্রদানের পরপরই মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে অস্ত্র, প্রযুক্তি ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসা চার ব্যক্তি ও তিনটি প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মিন অং হ্লাইংয়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—কেটি সার্ভিসেস অ্যান্ড লজিস্টিকস, এমসিএম গ্রুপ এবং সানট্যাক টেকনোলজিস। আর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা হলেন জনাথন মায়ো কিয়াও থাং, আউং হ্লাইং উ, সিত তেইং আউং ও টিন লাট মিন।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই পদক্ষেপকে 'চরম উদ্বেগজনক' বলে অভিহিত করেছে এবং বলেছে, এটি মিয়ানমারের সামরিক জান্তার প্রতি মার্কিন নীতির এক নাটকীয় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। উল্লেখ্য, ২০২১ সালে এই জান্তা বাহিনী গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে এবং তখন থেকেই মিয়ানমারে তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন, গণহত্যা ও দমন-পীড়নের সঙ্গে জড়িত। মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি বর্তমানে ৮০ বছর বয়সে পঞ্চম বছরের মতো আটক রয়েছেন।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, মিয়ানমারে পাওয়া বিপুল পরিমাণ দুর্লভ খনিজ সম্পদ বৈশ্বিক প্রযুক্তি এবং প্রতিরক্ষা শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো পাওয়ার জন্যই সম্ভবত ট্রাম্প প্রশাসন এমন পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব খনিজের বেশির ভাগই চীনের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত হয়। আর এসব খনিজের উৎস এলাকাগুলো নিয়ন্ত্রণ করে কাচিন বিদ্রোহীরা, যারা জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই করছে।

বাইডেন প্রশাসনের জান্তাবিরোধী কৌশলের বিপরীতে এটি একটি বড় নীতিগত পরিবর্তন। বিষয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর উদ্বেগ বাড়িয়েছে এবং মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতি মার্কিন অঙ্গীকার প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

এমআর   

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সেনাপ্রধানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করলেন মালদ্বীপ ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স প্রধান Sep 14, 2025
img
শিল্পীদের এত পাপী ভাববেন না : কনকচাঁপা Sep 14, 2025
জাকসু নির্বাচনে বিজয়ীদের অভিনন্দন ডাকসু জিএস এস এম ফরহাদের Sep 14, 2025
img
জেন-জি বিক্ষোভে হওয়া সহিংসতাকে অপরাধমূলক কাজ বললেন সুশীলা কার্কি, তদন্তের ঘোষণা Sep 14, 2025
img
ফেব্রুয়ারির পর চলে যেতে হবে, মানুষের জন্য কিছু করে যেতে চাই: অর্থ উপদেষ্টা Sep 14, 2025
img
প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার অনুষ্ঠানের স্ক্রিনে ভেসে উঠলো শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবের ছবি Sep 14, 2025
img

শামসুজ্জামান দুদু

নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হলে পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে Sep 14, 2025
img
শুল্ক ইস্যুতে আলোচনা করতে ঢাকায় আসছে মার্কিন প্রতিনিধিদল Sep 14, 2025
img
মালয়েশিয়ায় বিশ্বকাপের প্রস্তুতি বাংলাদেশের! Sep 14, 2025
img
বাংলাদেশিদের জন্য চীনা ভিসা আবেদনে নতুন নিয়ম চালু Sep 14, 2025
img
বাগেরহাটে টানা সোম-মঙ্গল-বুধবার হরতাল Sep 14, 2025
শিবির প্যানেল থেকে যেভাবে ডাকসুর নেত্রী হলেন জুমা! Sep 14, 2025
img
মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু ইসির Sep 14, 2025
img
ওড়না ছাড়া ছাত্রীকে দেখতে চান শিক্ষক, কলেজ গেটে ঝুলছে স্ক্রিনশট Sep 14, 2025
img
বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে চায় লাটভিয়া Sep 14, 2025
img
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা করছে সরকার : অ্যাটর্নি জেনারেল Sep 14, 2025
img
দুর্নীতির মামলায় স্ত্রীসহ ছাগলকাণ্ডের মতিউর রহমান রিমান্ডে Sep 14, 2025
img
আমি শিবের ভক্ত, বিষ গিলে ফেলব: মোদি Sep 14, 2025
img
রাকসুর ভোট গণনা ওএমআর মেশিনেই হবে: প্রধান নির্বাচন কমিশনার Sep 14, 2025
img
ভারতের বিপক্ষে যে একাদশ নিয়ে নামতে পারে পাকিস্তান Sep 14, 2025