নিজেদের কর্মভিসায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে সৌদি আরব। দেশটি এখন থেকে দক্ষতার ভিত্তিতে কর্মভিসা দেবে। এরমাধ্যমে বিদেশি কর্মীদের জন্য দেশটিতে কাজের সুযোগ আরও সহজ এবং বিস্তর হবে।
এই নতুন ভিসা পদ্ধতিতে বিদেশি কর্মীদের তাদের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং বেতনের ভিত্তিতে তিনটি প্রধান ধাপে ভাগ করা হয়েছে।
উচ্চ-দক্ষ: এই ধাপে সাধারণত উচ্চশিক্ষিত পেশাদার যেমন— প্রকৌশলী, ডাক্তার, তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, গবেষক এবং উচ্চপদে কর্মরত ব্যবস্থাপকরা পড়েন। এক্ষেত্রে শিক্ষা ও পেশাগত অভিজ্ঞতার মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করা হবে। এছাড়া ভিসা পেতে পয়েন্ট ভিত্তিক একটি পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।
দক্ষ: এই ধাপে হিসাবরক্ষক, বিক্রয় কর্মী, কারিগর এবং যন্ত্র পরিচালকরা অন্তর্ভুক্ত। এক্ষেত্রে কিছু অভিজ্ঞতা এবং যোগ্যতা প্রয়োজন হবে। কিন্তু তাদের কোনো পয়েন্ট ভিত্তিক পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যেতে হবে না।
সাধারণ: এ ধাপে মূলত শ্রমিক এবং সহায়ক কাজগুলো পড়বে। তাদের ক্ষেত্রে কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা বা দক্ষতার কথা উল্লেখ করা হয়নি। তবে এই স্তরে যারা আবেদন করবেন তাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি হওয়া যাবে না।
সৌদির জাতীয় পেশা শ্রেণীবিভাগ পদ্ধতি অনুসরণ করে নতুন ভিসা পদ্ধতি করা হয়ছে ।
যারা উপকৃত হবেন
নতুন এই পদ্ধতি দক্ষ বিদেশি কর্মীদের জন্য সৌদি আরবে কাজের সুযোগ বহুগুণে বাড়াবে। আপনি যদি নির্দিষ্ট কোনো খাতে দক্ষ হন, তাহলে আপনার জন্য ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ এবং দ্রুত হবে। এছাড়া এ পদ্ধতিতে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং পেশাদারী দক্ষতার সঠিক মূল্যায়ন হবে। সঙ্গে অদক্ষ কর্মীদের তুলনায় দক্ষ কর্মীরা স্বাভাবিকভাবেই ভালো বেতন ও সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
আবেদন প্রক্রিয়া ও আপনার যেসব কাগজপত্র লাগবে
সৌদি আরবে দক্ষতা-ভিত্তিক কর্মভিসার জন্য আবেদন করতে সাধারণত নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হয় এবং কিছু নথি প্রয়োজন হয়-
প্রথমে আপনাকে সৌদি আরবের একটি নিবন্ধিত নিয়োগকর্তা থেকে একটি আনুষ্ঠানিক চাকরির প্রস্তাব পেতে হবে। নিয়োগকর্তাই আপনার ভিসার পৃষ্ঠপোষক হবেন।
আপনার নিয়োগকর্তা সৌদি আরবের মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশি কর্মী নিয়োগের জন্য অনুমোদন চাইবেন।
অনুমোদন পেলে নিয়োগকর্তা আপনাকে একটি ভিসা অনুমোদন স্লিপ পাঠাবেন, যা পরবর্তী ধাপের জন্য প্রয়োজনীয়।
আপনাকে সৌদি সরকার অনুমোদিত ক্লিনিক থেকে একটি সম্পূর্ণ চিকিৎসা পরীক্ষা করাতে হবে। এতে রক্ত পরীক্ষা, বুকের এক্স-রে এবং হেপাটাইটিস, এইচআইভি, যক্ষ্মার মতো রোগ আছে কি না সেটি পরীক্ষা করা হবে।
আপনার সম্পূর্ণ আবেদনপত্র, চিকিৎসা প্রতিবেদন, পাসপোর্ট এবং চাকরির প্রস্তাবপত্র সৌদি দূতাবাস বা কনস্যুলেটে জমা দিতে হবে।
ভিসা পাওয়ার পর সৌদি আরবে পৌঁছানোর ৯০ দিনের মধ্যে আপনার নিয়োগকর্তা আপনাকে ইকামা (বসবাসের অনুমতি) পেতে সহায়তা করবেন। ইকামা ছাড়া সৌদি আরবে কাজ করা অবৈধ।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
১। বৈধ পাসপোর্ট (কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদ থাকতে হবে)।
২। রঙিন পাসপোর্ট আকারের ছবি।
৩। শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং পেশাদারী দক্ষতার সনদপত্র (সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্বারা সত্যায়িত)।
৪। কাজের অভিজ্ঞতা সনদপত্র (যদি থাকে)।
৫। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
৬। সম্পূর্ণ ভিসা আবেদন ফর্ম।
৭। ভিসা ফি পরিশোধের প্রমাণ।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
পৃষ্ঠপোষকতা: সৌদি আরবে কাজ করার জন্য একজন সৌদি-ভিত্তিক পৃষ্ঠপোষক (নিয়োগকর্তা) থাকা বাধ্যতামূলক।
পেশাগত পরীক্ষা: কিছু নির্দিষ্ট পেশার জন্য “পেশাগত যাচাইকরণ কার্যক্রম” বা “দক্ষতা যাচাইকরণ কার্যক্রম”-এর অধীনে পরীক্ষা দেওয়া বাধ্যতামূলক। এর মাধ্যমে আপনার দক্ষতা যাচাই করা হয়।
ইউটি/টিএ