বুধবার (৩০ জুলাই) ভোরে রাশিয়ার দূর-পূর্বাঞ্চলীয় কমচাটকা উপদ্বীপে ৮.৮ মাত্রার একটি ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) একে গত ১৪ বছরে বিশ্বে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প হিসেবে রেকর্ড করেছে। একই সঙ্গে এটিকে মানব ইতিহাসে রেকর্ড হওয়া ষষ্ঠ শক্তিশালী ভূমিকম্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
২০১০ সালে চিলিতে আঘাত হানা ভয়াবহ ভূমিকম্পের সঙ্গে একই স্তরে অবস্থান করছে আজকের আঘাত হানা ভূমিকম্পটি।
যেখানে ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয় এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটে। এ ছাড়া এটি ১৯০৬ সালে ইকুয়েডর ও কলম্বিয়ায় ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পের সঙ্গেও তুলনীয়। যে ঘটনায় সুনামিতে এক হাজার ৫০০ মানুষ প্রাণ হারায়।
ভূমিকম্পের প্রভাবে রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলে প্রবল কম্পন অনুভূত হয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় অনেক স্থাপনা।
এ ভূমিকম্পের পরপরই সৃষ্ট সুনামির ঢেউ প্রশান্ত মহাসাগরের তীরবর্তী একাধিক দেশে আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়ায় বিশেষ করে জাপান, যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলীয় রাজ্যসমূহ এবং প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জ।
জাপানের আবহাওয়া সংস্থা তিন মিটার পর্যন্ত সুনামি ঢেউয়ের সতর্কতাজারি করেছে। উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের সরে যেতে বলা হয়েছে এবং পানির কাছাকাছি না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই ও আলাস্কায় সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছে, সম্ভাব্য প্রভাব বিবেচনায় জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ ও সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাশিয়ার কমচাটকা অঞ্চলে এটি প্রথমবার নয়। ১৯৫২ সালে সোভিয়েত আমলে একই এলাকায় ৯.০ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল, যা ইতিহাসের অন্যতম বড় ভূমিকম্প হিসেবে বিবেচিত।
সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পগুলো:
১. চিলি, ১৯৬০ সাল: ৯.৪-৯.৬ মাত্রা (বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী)
২. আলাস্কা, ১৯৬৪ সাল: ৯.২-৯.৩ মাত্রা
৩. সুমাত্রা, ভারত মহাসাগর, ২০০৪ সাল: ৯.২-৯.৩ মাত্রা (ইন্দোনেশিয়া, ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ডসহ বহু দেশে মৃত্যু ও ধ্বংস)
৪. জাপান, ২০১১ সাল: ৯.১ মাত্রা (ফুকুশিমা পারমাণবিক বিপর্যয়)
৫. কমচাটকা, রাশিয়া, ১৯৫২ সাল: ৯.০ মাত্রা
৬. চিলি, ২০১০ সাল ও ইকুয়েডর-কলম্বিয়া, ১৯০৬ সালের সঙ্গে এবারের রাশিয়ার ২০২৫ সালের কমচাটকা ভূমিকম্পকে একই স্তরে রাখা হচ্ছে (৮.৮ মাত্রা)।
বিশ্বজুড়ে ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে এখন সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এই ধরনের ভূমিকম্পের পরপরই ঘন ঘন আফটারশক, বড় ঢেউ ও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।
আন্তর্জাতিক সমাজ এখন ঘটনাটির ওপর নজর রাখছে, এবং সম্ভাব্য মানবিক সহায়তার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, সিএনএন
পিএ/এসএন