নিজেদের ব্যাংক থেকে কর্মচারীর নামে ১৫ কোটি টাকা তুলে পরিবারের মধ্যে ‘ভাগ-বাটোয়ারা’র অভিযোগে সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সকালে দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মাইনউদ্দীন সংস্থার চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-১ এ মামলাটি করেছেন। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন দুদকের চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ।
মামলার আসামিরা হলেন- পলাতক সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ (৫৬), তার স্ত্রী ‘ইউসিবিএল’ ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান রুকমীলা জামান (৪৬), তার ভাই সাবেক পরিচালক আনিসুজ্জামান চৌধুরী (৫৩) ও আসিফুজ্জামান চৌধুরী এবং বোন রোকসানা জামান চৌধুরী (৫৬) ও আফরোজা জামান (৪৮)।
ইউসিবিএল’র কর্মকর্তাদের মধ্যে আরও যারা আসামি তারা হলেন- আবু হেনা মো. ফখরুল ইসলাম (৪০), মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী (৫৮), জিয়াউল করিম খান (৪৬), মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল (৫৮), মীর মেসবাহ উদ্দীন হোসাইন (৬২), আব্দুল হামিদ চৌধুরী (৫০), বজল আহমেদ বাবুল (৫৬), সাবেক পরিচালক আখতার মতিন চৌধুরী (৭৪), এম এ সবুর (৭৭), ইউনুছ আহমদ (৭৯), নুরুল ইসলাম চৌধুরী (৬২), বশির আহমেদ (৫৫), সৈয়দ কামরুজ্জামান (৬১), মো. শাহ আলম (৬২), জোনাইদ শফিক (৬৪), কনক কান্তি সেন (৬০), অপরূপ চৌধুরী (৬৫), তৌহিদ সিপার রফিকুজ্জামান (৬৬) এবং সাবেক ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ কাদরী (৬৪)। সাবেক মন্ত্রীর পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আরামিট গ্রুপের কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিছাবাহুল আলম (৫০), আব্দুল আজিজ (৩৯) এবং শাহরিয়ার হোসেন (৪৯) এ মামলায় আসামি হিসেবে আছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আরামিট গ্রুপের এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে মডেল ট্রেডিং, ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং ও রিলায়েবল ট্রেডিং নামে তিনটি নামসর্বস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছিল। এরপর ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর রিলায়েবল ট্রেডিংয়ের নামে ইউসিবিএলর বন্দর শাখায় ২৩ কোটি টাকার টাইম লোনের আবেদন করা হয়। ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ এ ঋণ চাওয়া হয়েছিল।
ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঋণ আবেদনকারীর ব্যবসা, মালিকানা, পণ্য, শো-রুম, গোডাউন, সেলস, স্টক, কর্মচারী, ব্যাংক পারফরম্যান্সের মিথ্যা তথ্য দিয়ে সন্তোষজনক পরিদর্শন প্রতিবেদন দেওয়া হয়। ওই প্রতিবেদনে ৩৬০ দিনের জন্য ১৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু ইউসিবিএল’র কর্পোরেট ব্যাংকিং ও ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনের গঠিত ক্রেডিট কমিটি ৯টি নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ দেয়। সেই পর্যবেক্ষণ আমলে না নিয়ে ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর ব্যাংকের ৪৫৪তম বোর্ড সভায় ১৫ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করা হয়।
দুদকের মামলায় আরও বলা হয়েছে, ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর ব্যাংকের বন্দর শাখায় রিলায়েবল ট্রেডিংয়ের হিসাব নম্বরে ১৫ কোটি টাকা জমা হয়।
এরপর ৭ ডিসেম্বর ৮টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ইউসিবিএল’র ঢাকার কারওয়ান বাজার শাখা থেকে মডেল ট্রেডিংয়ের হিসেব নম্বরে সাড়ে ৬ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে ওই হিসেব থেকে ৬টি চেকের মাধ্যমে ইউসিবিএল’র চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট শাখা থেকে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুকমীলা জামানের মালিকানাধীন আরামিট সিমেন্টের দায়-দেনা পরিশোধ করা হয়।
এভাবে পরবর্তীতে ইম্পেরিয়াল ট্রেডিংয়ের হিসেব নম্বরে ধাপে ধাপে আরও সাড়ে ৮ কোটি টাকা স্থানান্তর করে আরামিট থাই অ্যালুমিনিয়ামের নামে নেওয়া আগের ঋণ পরিশোধ করা হয়।
দুদক কর্মকর্তা সুবেল আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার পরিবারের লোকজন মিলে প্রথমে নিজেদের আরামিট গ্রুপের কর্মচারীদের নামে ভুয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেন।
এরপর নিজেদের ব্যাংক থেকে নিয়মবহির্ভূত ঋণ নেওয়া হয় নামসর্বস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে।সেই ঋণও আবার ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে নিজেদের ব্যাংকের হিসাব নম্বরে স্থানান্তর করা হয়। এরপর আবার নিজেদের আরামিট গ্রুপের নামে নিজেদের ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধ করা হয় সেই টাকা থেকে।’
প্রসঙ্গত, সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে তার বিরুদ্ধে বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর তাকে আর পরবর্তী সরকারে মন্ত্রী হিসেবে দেখা যায়নি।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগ মুহুর্তে জাবেদ স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে লন্ডনে পাড়ি জমান।
এমআর/টিএ