বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘দেশে যাতে আর কোনোভাবেই কোনো দিন ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ, চরমপন্থা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, এ ব্যাপারে বিশেষ করে নারীসমাজকে অত্যন্ত সতর্ক এবং সজাগ থাকতে হবে। এ জন্য সমগ্র বাংলাদেশের মা-বোনদের আহ্বান জানাই।’
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিকালে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল আয়োজিত এক আলোচনাসভায় তিনি এই আহ্বান জানান।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে নারীর অবদান শীর্ষক’ এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস। অনুষ্ঠানে ফ্যাসিবাদ আন্দোলনে নারীদের অবদানের ওপর একটি তথ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সন্মাননা মেডেল দেওয়া হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, ‘একজন মায়ের চোখে যেমন বাংলাদেশ হওয়া দরকার, তেমন একটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে আগামী জাতীয় নির্বাচন দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আসুন, নারী-পুরুষ-শিশু, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য শহীদদের কাঙ্খিত একটি ইনসাফ ভিত্তিক, গণতান্ত্রিক নিরাপদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাতে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি। সবার জন্য একটি নিরাপদ একটি গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার চলমান অভিযাত্রায়, অতীতের মত দৃঢ়ভাবে, আগামী দিনেও আমাদের মা-বোনদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং সমর্থন আশা করি।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশে পরিবার হিসেবে যদি আমরা চিন্তা করি, তাহলে সংখ্যা প্রায় চার কোটি। এর মধ্যে অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারগুলোর মধ্যে থেকে আমরা যেটা পরিকল্পনা করছি, সামনের দিনগুলোতে সুযোগ আসলে প্রথম পর্যায়ে কমপক্ষে ৫০ লক্ষ প্রান্তিক পরিবারের জন্য ফ্যামিলি কার্ড চালু করব।
ইনশাআল্লাহ আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি জনগণের রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে, পরিবারের নারী প্রধানের নামে এই ফ্যামিলি কার্ডটি আমরা ইস্যু করব। এই ধরনের উদ্যোগে পরিবার এবং সমাজে একদিকে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ঘটবে, অপরদিকে পরিবারগুলোর সামনে ধীরে-ধীরে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার সুযোগও তৈরি হবে।
ফ্যাসিবাদ আন্দোলনে নিজের পরিবারের ভূমিকা উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিগত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় অনেক মা তার প্রিয় সন্তান হারিয়েছেন। আপনাদেরই মতো আমার মাও (বেগম খালেদা জিয়া) তার এক সন্তানকে (আরাফাত রহমান কোকো) হারিয়েছেন। বহু স্ত্রী তার প্রিয়তম স্বামীকে হারিয়েছে, বোন তার ভাইকে হারিয়েছেন, অনেক মা বহুভাবে নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়েছেন।
অনেক পরিবারের বন্ধন ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ফ্যাসিবাদ অবসানের পর আমাদের সবার সামনে শিশু, নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একটি মানবিক বাংলাদেশ গঠনের সুযোগ এসেছে। এই যে সুযোগটি এসেছে আমাদের সামনে, এটাকে কাজে লাগিয়ে শহীদদের কাঙ্খিত বাংলাদেশ গঠন সম্ভব বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
এসময় নারীদের উন্নয়নে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নানা পদক্ষেপের তথ্য তুলে ধরে তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘বিএনপি বিশ্বাস করে, দেশের অর্ধেক সংখ্যক মানুষকে (নারী) রাষ্ট্র এবং রাজনীতির মূল ধারার বাইরে রেখে কখনোই আমরা নিরাপদ বাংলাদেশ গঠন করতে পারব না, নিরাপদ বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভবও নয়। নারী শক্তিকে কর্মপরিকল্পনার বাইরে রেখে কখনোই কোনো রাষ্ট্র এগিয়ে যেতে পারে না। সে কারণে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তাদের আশা আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে বিএনপি দিনের সকল কর্মপরিকল্পনাগুলোকে সাজিয়েছে বা গ্রহণ করছে।
তিনি বলেণ, বিশ্বের সব দেশে নারীদের জন্য শিক্ষা-চাকরি-ব্যবসাসহ সকল সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত। শুধু নারী-পুরুষ ভেদাভেদ না করে সবাইকে শিক্ষা-দীক্ষায় কমপক্ষে কর্মদক্ষ করে গড়ে তোলা প্রয়োজন অত্যন্ত জরুরি; যদি আমরা দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।
ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বিশেষ করে যদি নারীদের শিক্ষা দানে এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা যায়, তাহলে নারীর প্রতি বৈষম্য, অর্থনৈতিক টানাপোড়েনকে কেন্দ্র করে পারিবারিক সহিংসতাও রোধ করা সম্ভব হবে। সেই লক্ষ্যেই বিএনপির স্লোগান ‘ক্ষমতায়িত নারী শক্তি, পরিবারের মুক্তি’। এ কারণেই বিএনপির রাজনীতি মানবিক মূল্যবোধ উজ্জীবিত দক্ষ জনশক্তি তৈরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আফরোজা খান রিতা। সঞ্চালনা করেন মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান।
সভায় উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, জেএসডির সহ-সভাপতি তানিয়া রব, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম, তাহসিনা রুশদীর লুনা, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, শহীদ পরিবারের মধ্যে সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম তুলি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জনপ্রিয় টকশো উপস্থাপক হাসিনা আখতার প্রমুখ।
এমআর/টিএ