ইরানের জাহাজ নেটওয়ার্ককে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

ইরানকে আরও চাপে ফেলতে এবার দেশটির জাহাজ পরিবহন নেটওয়ার্ক ও পরিষেবা ব্যবস্থার ওপর বড় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি মন্ত্রণালয়। ইরানের জাহাজ নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১১৭ ব্যক্তি, কোম্পানি এবং জাহাজ নতুন এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে।

ট্রেজারি বিভাগের নতুন এই নিষেধজ্ঞার আওতায় পড়া ব্যক্তিদের মধ্যে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত জাহাজ পরিবহন নেটওয়ার্কের ‘পুরোধা’ হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ হোসেইন শামখানি আছেন।

মোহাম্মদ হোসেনইন শামখানির পিতা আলী শামখানি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির একজন উপদেষ্টা।

ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাবার প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে ইরানের জাহাজ পরিবহন নেটওয়ার্কের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন হোসেইন খামশানি। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা থাকায় বহির্বিশ্বের কাছে নিজেদের জ্বালানি তেল নিজেরা বিক্রি করতে পারে না ইরান, মধ্যস্থতাকারীদের সাহায্য নিতে হয়। এই মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা এবং তাদের কাছে তেল পৌঁছে দেওয়ার জন্য কন্টেইনার ও ট্যাংকার জাহাজগুলোর বিস্তৃত নেটকওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণের মূল দায়িত্ব খামশানির হাতেই।

তেল রপ্তানি খাত থেকে প্রতি বছর যে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে ইরান, সেক্ষেত্রেও অবদান আছে হোসেইন খামশানির। ট্রেজারি বিভাগের দাবি, খামশানি তার ব্যক্তিগত যোগাযোগের ব্যবহার এবং নানা কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে তেল বাণিজ্য থেকে প্রতি বছর শত শত কোটি ডলার তেহরানকে ‘উপহার’ দেন, যা তেহরান ব্যয় করে নিজেদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে।

সার্বিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে ইরানের ১৫টি জাহাজ নির্মাণ কোম্পানি, ৫২টি জাহাজ, ১২ জন ব্যক্তি এবং ১৭টি দেশের ৫৩টি কোম্পানি। বিদেশি এই কোম্পানিগুলো ইরানের জাহাজ পরিবহন সংক্রান্ত বাণিজ্যিক নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে উল্লেখ করেছে ট্রেজারি মন্ত্রণালয়।

ট্রেজারি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, নতুন এই নিষেধাজ্ঞার মূল উদ্দেশ্য বহির্বিশ্বে ইরানের তেল বিক্রিকে আরও কঠিন করে তোলা।

“২০২৫ সালের শুরুর দিকে মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি দিন গড়ে ১৮ লাখ ব্যারেল (১ ব্যারেল=১৫৯ লিটার) তেল রপ্তানি করছিল, বর্তমানে তা নেমে দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ব্যারেলে। আমরা আশা করছি, নতুন নিষেধাজ্ঞা জারির ফলে ইরানের তেল বিক্রি আরও কঠিন হয়ে উঠবে। সেই সঙ্গে আমরা প্রত্যাশা করছি যে নিষেধাজ্ঞার জেরে আন্তর্জাতিক তেলের বাজারে কোনো অস্থিতিশীলতা আসবে না। যদি তেমন পরিস্থিতি দেখা দেয় , ওয়াশিংটন তাকে কোনোভাবেই উৎসাহিত করবে না।

গত জুন মাসে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের সময় ‘অপারেশন মিড নাইট হ্যামার’ পরিচালনার মাধ্যমে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মুহুর্মুহু আঘাত হেনেছিল মার্কিন সেনা বাহিনী। সেই সংঘাতের পর এই প্রথম ফের দেশটির বিরুদ্ধে বড় পদক্ষেপ নিলো ওয়াশিংটন।

সূত্র : রয়টার্স

এমকে/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
স্বাস্থ্য উপদেষ্টার উচিত দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়া : রাশেদ খান Sep 16, 2025
img
মেসি ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলবেন কি না, জানালেন রোমেরো Sep 16, 2025
img
২৫ কোটি টাকা কর ফাঁকি, সাবেক ডিএসসিসি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা Sep 16, 2025
img
পদ্মরাগের ৬ বগি লাইনচ্যুতির ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন, চলছে উদ্ধার কাজ Sep 16, 2025
img
চাকসু নির্বাচনে প্যানেল দেবে না বাগছাস Sep 16, 2025
img
একবারের জন্য হলেও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় জামায়াত: তাহের Sep 16, 2025
img
আফগানিস্তানের পক্ষে ‘বাজি’ ধরে বাংলাদেশকে পরামর্শ দিলেন শোয়েব মালিক Sep 16, 2025
img
মিমি-অঙ্কুশের পর এবার বেটিং বিপাকে সোনু সুদ Sep 16, 2025
img
নির্বাচনের পরও বিচার চালিয়ে নেওয়ার রোডম্যাপ চেয়েছেন নাহিদ ইসলাম Sep 16, 2025
img
অর্থহীনের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর, আসছে চমক Sep 16, 2025
img
কিছু আসনের লোভে পিআর চাইলে জাতীয় জীবনে ভয়ংকর পরিণতি আসবে : সালাহউদ্দিন Sep 16, 2025
img
কাজল-টুইঙ্কলের সঞ্চালনায় দীর্ঘদিন পর জমবে বরুণ-আলিয়ার আড্ডা Sep 16, 2025
img
আর মাত্র ২৮ রানের অপেক্ষায় লিটন দাস! Sep 16, 2025
img
রাতারাতি ব্রেকআপ, করতে চেয়েছিলেন আত্মহত্যা! Sep 16, 2025
img
জাপার কাদের-শামীমের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন ছাত্র অধিকার নেতার Sep 16, 2025
img
৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি শুক্রবার, ২৫৬ কেন্দ্রে একযোগে হবে পরীক্ষা Sep 16, 2025
img
ফের বিশ্ববাজারে বাড়ল স্বর্ণের দাম Sep 16, 2025
img
টানা ৮ দিন চীনা ভিসা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা Sep 16, 2025
img
‘আমি খুব কৃতজ্ঞ মানুষ, মিথ্যা কথা বলি না’ Sep 16, 2025
img
চূড়ান্তভাবে একীভূত হচ্ছে পাঁচ ব্যাংক Sep 16, 2025