গণতন্ত্রবিরোধী ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে ঐক্যের আহ্বান জানাল রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল

গণতন্ত্রবিরোধী সব ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন মেক্সিকোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী। তিনি বলেন, বিচারের মুখোমুখি হওয়া থেকে পালিয়ে থাকা চক্র এখনো বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্রের জাল বুনে চলেছে।

বৃহস্পতিবার রাতে মেক্সিকোতে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ও গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসন মুসোলিনির ফ্যাসিবাদকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

মুসোলিনি যেমন তোষামোদকারী ও কালো পোশাকধারী বাহিনীর ওপর নির্ভরশীল ছিলেন, তেমনি শেখ হাসিনাও ভিন্নমত দমন করতে হেলমেটধারী ছাত্রলীগের ওপর ভরসা করতেন। সেখানে ছাত্র, সাংবাদিক, রাজনৈতিক কর্মী বা সাধারণ নাগরিক কেউই নিরাপদ ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘ওই শাসনামলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো একে একে ভেঙে দেওয়া হয়। পরিকল্পিতভাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমন করা হয়।

তিনি আরো বলেন, ‘অনেকে আশা হারিয়ে ফেলেছিলেন যে, বাংলাদেশ হয়তো আর কখনো মুক্ত হবে না। কিন্তু সে ভুল ধারণা ভেঙে দিয়েছিল ছাত্র, যুবক, শ্রমিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তির সম্মিলিত প্রতিরোধ। ত্যাগ ও ঐক্যের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়েছিল।’

মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, এই গণ-অভ্যুত্থান কোনো একক গোষ্ঠীর বিজয় নয়।

এটি ছিল সবার বিজয়। সেখানে মায়ের কান্না যেমন ছিল, তেমনি ছিল বাবার প্রতিবাদও, ছিল ছাত্র-শিক্ষক-শ্রমিক সবার রক্ত ও ঘাম। তিনি প্রায় ২ হাজার শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, তাদের আত্মত্যাগ যেন বিফলে না যায়। দমন-পীড়ন ও হত্যাযজ্ঞে যারা জড়িত ছিলেন, তাদেরকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘অন্ত্মর্বর্তীকালীন সরকার ১৫ বছর ধরে চলা স্বৈরশাসন, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রাতিষ্ঠানিক অবক্ষয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত একটি রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এক সময় নিরপেক্ষ হিসেবে পরিচিত প্রশাসন পরিণত হয়েছিল স্বৈরশাসনের মুখপাত্রে। জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে আমলাতন্ত্রসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বড় ধরনের সংস্কার জরুরি।’

গণতন্ত্রকে ঘিরে চলমান হুমকির ব্যাপারে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘যারা এক সময় ষড়যন্ত্র করতেন, তারা এখনো সক্রিয় ও বিপজ্জনক। আমাদের মাঝে বিভাজন ঘটাতে পারলে, তাদের ফিরে আসার পথ সুগম হবে। আমাদের ঐক্য রক্ষা করতেই হবে। মতপার্থক্য যেন শত্রুতায় রূপ না নেয়।’

রাষ্ট্রদূত বলেন, “মানবপাচারের বিরুদ্ধে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। নিরাপদ, নিয়মিত ও বৈধ অভিবাসন নিশ্চিতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মানবপাচারকারীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।”

রাষ্ট্রদূত মুশফিক মেক্সিকো প্রবাসী সব বাংলাদেশিকে বাংলাদেশ-মেক্সিকোর কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। এসব আয়োজনের মধ্যে একটি বিশেষ আলোকচিত্র প্রদর্শনীও রয়েছে।

আলোচনা সভার শুরুতে জুলাই শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন ও দোয়া করা হয়। পরে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে চিত্র প্রদর্শনী ও দেশাত্মবোধক গানের পরিবেশনা হয়। মেক্সিকোতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা এতে অংশ নেন। পরে অতিথিদের জন্য পরিবেশিত হয় ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার।

এমআর/টিকে 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
অন্তর্বর্তী সরকার থাকাকালীনই হাদি হত্যার বিচার সম্পন্ন হবে : রিজওয়ানা Dec 28, 2025
img
হাদি হত্যার বিচার নিশ্চিতে প্রয়োজনে শাহবাগে এক মাস থাকার ঘোষণা Dec 28, 2025
img
অভ্যর্থনা, রাস্তাজুড়ে মানুষ, দোয়া মুহূর্তগুলো কোনোদিন ভুলতে পারব না : তারেক রহমান Dec 28, 2025
img
কনসার্টে তারাকে জাপটে ধরে চুমু গায়ক এপি ধিলনের, বিরক্ত বীর Dec 27, 2025
img
অবশেষে ময়মনসিংহ-১০ আসনে ধানের শীষের কান্ডারি বাচ্চু Dec 27, 2025
img
বিশ্বকাপ দলে অন্তর্ভুক্তি প্রসঙ্গে শান্তর প্রতিক্রিয়া Dec 27, 2025
img
থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্তে যুদ্ধবিরতি কার্যকর Dec 27, 2025
img
‘বারাণসী’ হতে পারে রাজামৌলির শেষ সিনেমা! Dec 27, 2025
img
মিরপুরে সাধারণ কবরস্থানের নিরাপত্তায় ৮১২ এলইডি লাইট স্থাপন ডিএনসিসির Dec 27, 2025
img
জামায়াতের সমাবেশের সূচি বদলের আহ্বান ডাকসুর Dec 27, 2025
img
মাকে দেখতে এভারকেয়ারে তারেক রহমান Dec 27, 2025
img
ঘন কুয়াশার কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ Dec 27, 2025
img
রানার হ্যাটট্রিকের পরও সিলেটের কাছে হারল নোয়াখালী Dec 27, 2025
img
জাবিতে শহীদ ওসমান হাদির স্মরণে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত Dec 27, 2025
img
পবন কল্যাণের ‘ওজি’ টলিউডের শীর্ষে Dec 27, 2025
img
হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে দ্বিতীয় রাতেও শাহবাগে মানুষের ঢল Dec 27, 2025
img
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ Dec 27, 2025
img
পরচুলা পরতে আপত্তি টাকা নিয়ে চম্পট অক্ষয় খান্না! Dec 27, 2025
img
বক্সিং ডে টেস্টে ৮২ কোটি টাকার ক্ষতি অস্ট্রেলিয়ার! Dec 27, 2025
img
শুক্রবার দিনটা সারা জীবনের জন্য আমার হৃদয়ে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে: তারেক রহমান Dec 27, 2025