ঢাকা-জয়দেবপুর রেললাইন প্রকল্পের অগ্রগতি ২২ ভাগ

ঢাকা-টঙ্গী রুটে দুটি ও টঙ্গী-জয়দেবপুর রুটে একটি নতুন ডুয়েল গেজ রেললাইন প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ২২ শতাংশ। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রায় ৫ মিনিট পর পর ট্রেন ছাড়া সম্ভব হবে। এতে করে নগরে আসবে গতি। কমবে নাগরিক ভোগান্তি।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, প্রকল্পটি শেষ হলে এ পথে চলবে একাধিক ট্রেন। ইলেক্ট্রিক ট্রেনও চালু করা যাবে। ফলে টঙ্গী, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লার সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে। যা ওই সব অঞ্চলের মানুষের ঢাকায় কর্মস্থলে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

তারা আরো বলেন, ট্রেনে জয়দেবপুর থেকে ঢাকা আসতে এখন প্রায় ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট সময় লাগে। নতুন লাইন নির্মাণ এবং বিশেষ সার্ভিস চালু হলে ২৫ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যেই ঢাকা আসা যাবে। অন্যদিকে নরসিংদী থেকে ঢাকা আসতে সময় লাগবে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট। এই রুটে এখন সময় লাগছে প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো।

ঢাকা-টঙ্গী রুটে দুটি ও টঙ্গী-জয়দেবপুর রুটের প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার এমবাডমেন্টের কাজ চলমান রয়েছে। রুটের ৪২ নং টঙ্গী ব্রিজের কাজের পাইলিংয়ের ১১০টির মধ্যে ৭৩টির কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়ায় ফায়দাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় রেলওয়ের উচ্ছেদ অভিযান চলমান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এই রুটে সামাজিক বনায়নের অধীনে থাকা গাছগুলো ইতোমধ্যে অপসারণ করেছে বনবিভাগ। ঢাকা থেকে জয়দেবপুরের দূরত্ব ৩৩ কিলোমিটার। তবে সেখানে ৩য় ও চতুর্থ মেইন লাইন, লুক লাইন, ইয়ার্ড লাইন ও সারিং লাইন মিলে প্রায় ১০০ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন করা হবে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, নতুন রেললাইন স্থাপিত হলে এক ট্রেন দাঁড় করিয়ে অন্য ট্রেনের লাইন ক্লিয়ারেন্স দেয়ার চিরাচরিত সমস্যার সমাধান হবে। সিডিউল মতো ট্রেন চলবে। নতুন লাইন নির্মাণকে সামনে রেখে লাইন ঘেঁষা তেজগাঁও ও কারওয়ান বাজারের বস্তিগুলোর উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) মোঃ আনোয়ারুল হক বলেন, টঙ্গী থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ৩য় ও ৪র্থ লাইন না থাকায় পথে ট্রেন দাঁড় করিয়ে রাখতে হয় ক্লিয়ারেন্স পেতে। লাইনের অভাবে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে কমপক্ষে আধা ঘণ্টা পর ট্রেন ছাড়তে হচ্ছে। লাইন দুটি হলে এ সমস্যার সমাধান হবে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির কাজ ২০১২ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়ে ২০১৬ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরে ত্রুটির কারণে দরপত্র বাতিল করা হয়। প্রকল্পটি প্রথমে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন করা হয়। এতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮৪৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে ভারতের ঋণ দেয়ার কথা ছিল ৬৯৫ কোটি ৯০ লাখ। বাকি ১৫২ কোটি ৭০ লাখ টাকা সরকারের তহবিল থেকে সরবরাহ করার কথা ছিল।

তবে ভারতীয় ডলার ক্রেডিট লাইনের (এলওসি) অর্থায়নে ১১০৬.৮০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রকল্পের সংশোধিত ডিপিপি ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর তারিখে একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়। আর তার কাজের জন্য ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারী কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। 

এছাড়া ওই একই সালের ২৪ জুলাই রেল ট্র্যাক নির্মাণের জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। আর গত বছরের ৯ নভেম্বরে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের সম্মতি পাওয়া যায়। বর্তমানে প্রকল্পের ভৌত কাজের অগ্রগতি ২২ ভাগ।  

প্রকল্প পরিচালক পূর্বাঞ্চল রেলপথের প্রধান প্রকৌশলী মো. শহীদুল ইসলাম বাংলাদেশ টাইমসকে জানান, গত বছরের ডিসেম্বরে সংশোধন করা হয়েছে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি)। এক্ষেত্রে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ১১শ’ ৬ কোটি টাকা। ভারতের ঋণ এলওসির আওতায় প্রকল্পটি নির্মাণ করা হবে। দেশটির আরভি অ্যান্ড আয়শা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের প্রণয়ন করা নকশা অনুমোদিত হয়েছে।

টাইমস/টিআর/এমএস  

 

 

Share this news on: