আব্দুল কাদেরকে ইনস্টিটিউট ফ্যাকাল্টির সাথি হিসেবে কাউন্ট করত শিবির : রিফাত

গণ-অভ্যুত্থানের সময় সমন্বয়ক আব্দুল কাদেরকে শিবির তার নিজের প্রতিনিধি হিসেবেই কাউন্ট করত বলে জানিয়েছেন ঢাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি রাফে সালমান রিফাত।

সোমবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘শিবির তাকে ইনস্টিটিউট ফ্যাকাল্টির সাথি এবং জনশক্তি হিসেবে কাউন্ট করত। যদিও সে ক্যাম্পাসে ছাত্রশক্তির অ্যাক্টিভিটিতেই বেশি জড়িত ছিল।’

রাফে সালমান রিফাতের পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো :

‘২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি গঠিত হয়।

আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের সভাপতি, সাদিক কায়েম সেক্রেটারি। ছাত্রশক্তি আত্মপ্রকাশের কয়েক দিন আগে আখতার আমাকে ফোন দিয়ে দেখা করতে চায়। জিজ্ঞেস করি, কী বিষয়? বলে, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ছাড়া আর কারোর রাজনীতি নাই, নতুন একটা সংগঠন নিয়ে কাজ করতে চায় তারা।’

‘তার মাস দুয়েক আগেই ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাবি কমিটি কার্যত বিলুপ্ত হয়।

আসিফের নেতৃত্বে কমিটির সবাই একযোগে পদত্যাগ করে লেজুড়বৃত্তির অভিযোগ এনে। তারপর পেজের নাম বদলানোসহ আরো কিছু বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় কাদা ছোড়াছুড়িও করে কেউ কেউ।’

‘যাহোক, আমাদের সাথে দেখা করতে আসে আখতার, নাহিদ, মাহফুজ, আসিফ আর আহনাফ সাঈদ। হাতিরপুলের এক রেস্টুরেন্টে সন্ধ্যার পর শুরু হয় আলাপ-আলোচনা।

আমাদের তরফে ছিলাম আমি আর সাদিক। তখনও সম্ভবত ছাত্রশক্তির নাম ফাইনাল হয়নি। প্রায় ৩ ঘণ্টা সব কিছু নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। প্রথমে আখতার খুব সংক্ষিপ্ত একটা ব্রিফিং দেয়। বুঝলাম যে দলনেতা আখতার।

এরপর আমি প্রশ্ন করা শুরু করি। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রশ্ন করেছি নানা বিষয়ে। ফিলোসফি, স্ট্র্যাটেজি, ফিউচার প্ল্যান, গোল, ন্যারেটিভ, সাপোর্ট বেইজ ইত্যাদি প্রায় সব কিছু নিয়ে। থট প্রভোকিং সব আলাপ। আমার সামনেই বসা ছিল আখতার। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো, আখতার একটা প্রশ্নেরও উত্তর দিল না। প্রায় সবগুলো প্রশ্নেরই উত্তর দিয়েছে মাহফুজ। মাঝেমধ্যে দু-একটা বিষয় অ্যাড করেছে নাহিদ। বাকি দুজন তথা আসিফ এবং আহনাফ ছিল শুধুই নীরব দর্শক।’

‘বুঝলাম, নতুন এই রাজনৈতিক উদ্যোগের প্রায় পুরোটাই মাহফুজের ব্রেইন চাইল্ড। মাহফুজ এখানে মূল আইডিওলোগ। এই উদ্যোগের থট প্রসেস ডেভেলপ করছে সে। বাকিরা এখনো চিন্তাগতভাবে অনেক পেছনে। বিশেষত আখতার ওখানে পিওর সামনের ফেস মাত্র। যেহেতু, ডাকসুর কারণে তার একটা পরিচিতি এবং গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছিল। তাই তাকে সামনে রেখেই সেন্ট্রিস্ট রাজনীতির নতুন পথচলা শুরু আরকি। আমাদের কাছ থেকে তারা দোয়া, সমর্থন এবং সার্বিক সহযোগিতা চাইল। ক্যাম্পাস একটিভিজমের তখনকার যে চিরাচরিত নিয়ম, সেটির অংশ হিসেবেই সম্ভবত।’

‘উল্লেখ্য, ছাত্রশিবির সাংগঠনিকভাবে রেজিমেন্টেড একটা ফোর্স। যেকোনো কর্মসূচিতে মুহূর্তের মধ্যে একটা সংগঠিত শক্তিকে অত্যন্ত শৃঙ্খলার সাথে মোবিলাইজ করার ক্যাপাসিটি তৎকালে সবচেয়ে বেশি ছিল শিবিরের। ফলে ক্যাম্পাসে স্বৈরাচারী ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বা যেকোনো ক্রিয়েটিভ কর্মসূচি বাস্তবায়নে মাঠের কর্মী বাহিনি হিসেবে শিবিরের ম্যানপাওয়ার সাপোর্ট এবং আর্থিক ও লজিস্টিক সহযোগিতা গ্রহণ একটা ওপেন সিক্রেট বিষয় ছিল সবার মধ্যে। আর্থিক ও লজিস্টিক সহযোগিতা শুধু শিবির একাই করতো তা না, আরো অনেক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ছিল যারা পেছনে থেকে সহযোগিতা করত নিয়মিত।’

‘সেই আঠারোর কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকেই এই ব্যাপারটা ছাত্র অধিকার পরিষদের অ্যাক্টিভিস্টদের মধ্যে স্বতঃসিদ্ধ ব্যাপার ছিল। জিনিসটা সমন্বয় করত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন সম্পাদক। যেমন : আঠারো সালের দুইটা আন্দোলনে পেছনের ব্রেইন হিসেবে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছিলো শিবিরের তৎকালীন ছাত্র আন্দোলন সম্পাদক শামীম রেজায়ীসহ বেশ কয়েকজন।’

‘যাইহোক, আমি ওদেরকে সাহস দিলাম। সহযোগিতার আশ্বাস দিলাম। সামনে এগিয়ে যেতে বললাম। কয়েকদিন পর ওদের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান। আখতারকে আহ্বায়ক, নাহিদকে সদস্য সচিব করে কেন্দ্রীয় বডি এবং আসিফকে আহ্বায়ক ও বাকেরকে সদস্য সচিব করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি প্রস্তুত করা হলো। বিধিবাম হলো আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের পর। মাহফুজ আচানক আখতার, নাহিদের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দিয়ে বসল। আমি তখনও জানতাম না, ঝামেলা কী নিয়ে। পরে কিছু কিছু জিনিস জেনেছি বিভিন্নজনের কাছ থেকে।’

‘এরপরে ক্যাম্পাস অ্যাক্টিভিজমে বেশ কিছু চড়াই-উৎরাই গেছে। অক্টোবরেই ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হামলা নিয়ে ক্যাম্পাসে পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বক্তা ঠিক করা নিয়ে ছোটখাটো ঝামেলা গেছে। মানব পতাকা তৈরীর কর্মসূচী ফ্লপের কাহিনি হয়েছে। পরের বছর মার্চে প্রোডাক্টিভ রমাদান অনুষ্ঠানে হামলা কেন্দ্রিক গণ-ইফতার কর্মসূচী, তারপর জুনে নতুন করে আবার কোটা আন্দোলন।’

‘জুলাইয়ে সকল সংগঠনকে ছাপিয়ে নতুন ব্যানার তৈরী হয় “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন”, যেখানে সামনের ফেইস হিসেবে ছাত্রশক্তি, শিবির (যদিও শিবির তখনও প্রকাশ্য কর্মকাণ্ডে ছিল না), ছাত্র ফেডারেশন, সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি, ডিবেট সার্কিটের পোলাপান, সাধারণ অ্যাক্টিভিস্ট সবাই ছিল।

সেখানে কোনো হায়ারার্কি ছিল না। মূখ্য সমন্বয়ক বলে কেউ ছিল না। কোনো একক নেতৃত্বই ছিল না। সবাই ছিল স্রেফ সমন্বয়ক। শিবিরের প্রতিনিধি হিসেবে একাধিক ব্যক্তি ছিল, কিন্তু সাদিক কায়েম বা ফরহাদের মতো নেতৃস্থানীয় কেউ ছিল না। এমনকি গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক, ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনকে পর্যন্তও সমন্বয়ক লিস্টে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি।’

‘যদিও প্রথম সমন্বয়ক তালিকা ঘোষিত হয় ৮ জুলাই। পরে ১৭ জুলাই আখতারকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমার ধারণা, আব্দুল কাদেরকেও তখন শিবির তার নিজের প্রতিনিধি হিসেবেই কাউন্ট করতো ইন্সটিটিউট ফ্যাকাল্টির সাথী এবং জনশক্তি হিসেবে। যদিও সে ক্যাম্পাসে ছাত্রশক্তির অ্যাক্টিভিটিতেই বেশি জড়িত ছিল।’

‘ছাত্রশক্তি তার সেই সংক্ষিপ্ত নয় মাসের জার্নিতে ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক নানাবিধ অ্যাক্টিভিটিতে শিবিরের সাথে কখনও প্রত্যক্ষ, কখনও প্রচ্ছন্ন সমন্বয় করে চলেছে। সেই সমন্বয় ও সম্পর্কে জোয়ার-ভাটা থাকলেও কখনও তা শত্রুতায় রূপ নেয় নাই। কাঁদা ছোড়াছুড়ি তো অনেক দূরের বিষয়। আজকে অবশ্য সবাই পলিটিক্স শিখে গেছে। এমন ভাব যেন তখন তারা শিবিরের কাউকে চিনতো না। নিজের সাবেক দায়িত্বশীল/নেতাকেও কামড় মারতে কারো তর সইছে না। ক্ষমতার অন্ধ মোহে নিজের এককালের সেইফগার্ডকেও নোংরা আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে ফ্যাসিবাদকে অট্টহাস্য দেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। সুন্দর।’

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ভাষাসৈনিক আহমদ রফিকের মৃত্যুতে সংস্কৃতি উপদেষ্টার শোক Oct 03, 2025
img
ভাষাসৈনিক আহমদ রফিকের মৃত‍্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক Oct 03, 2025
১০ মিনিটে গোটা বিশ্বের সারাদিনের সর্বশেষ আলোচিত সব খবর Oct 03, 2025
ইউক্রেনের টমাহক চাওয়ায় রাশিয়ার রেডলাইন শঙ্কা Oct 03, 2025
অবরুদ্ধ গাজা নৌবহর আটক, ইসরায়েল নিশ্চিত নিরাপত্তা Oct 03, 2025
img
এদেশে পিআর পদ্ধতি সম্পর্কে মানুষের ধারণা নাই : সেলিমুজ্জামান Oct 03, 2025
চীনের সঙ্গে বৈঠক ঠিক করতে বাইডেনকে আক্রমণ ট্রাম্পের Oct 03, 2025
সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে শহিদুল আলমের পোস্ট, চাইলেন ক্ষমা Oct 03, 2025
গাজামুখী ফ্লোটিলার যাত্রা গাজায় পৌঁছাতে পারেনি: ইসরায়েল Oct 03, 2025
শাপলা প্রতীক বাদ, এনসিপিকে থালা-হাঁস-বেগুনসহ ৫০ প্রতীকের অপশন দিলো ইসি Oct 03, 2025
img
শুক্রবার বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা ইসলামী আন্দোলনের Oct 03, 2025
একটি ছাড়া গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার সব জাহাজ আটক, গ্রেফতার ৩১৭ স্বেচ্ছাসেবী Oct 03, 2025
পূজার ছুটিতে অস্বাভাবিক রাজধানীর সবজির বাজার Oct 03, 2025
জামায়াত রাজাকারের বংশধর, ভোট পাবে ৬ শতাংশ: ফজলুর রহমান Oct 03, 2025
৫ই আগস্টের পর কি দেশের মানুষ সব ফেরেস্তা হয়ে গেছে? : ব্যারিস্টার ফুয়াদ Oct 03, 2025
কাজ ও মাতৃত্বের ভারসাম্যে নিজ জীবনের গল্প শোনালেন রানী মুখার্জি Oct 03, 2025
ইনজুরি কাটিয়ে সেরা ছন্দে না থাকলেও বর্ষসেরা বেলিংহ্যাম Oct 03, 2025
img
গাজামুখী নৌবহরে অসুস্থ অনুভব করছেন শহিদুল আলম Oct 03, 2025
img
বাংলাদেশে সব ধর্মই মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে পালন করা সম্ভব: প্রেস সচিব Oct 03, 2025
img
গাজার খুব কাছাকাছি চলে এসেছি: শহিদুল আলম Oct 03, 2025