মুক্তিযুদ্ধ থেকে শাহবাগী ফ্যাসিবাদ, প্রতিটি গণহত্যার যথাযথ বিচার হতে হবে : ঢাবি শিবির সভাপতি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শাহবাগী ফ্যাসিবাদ পর্যন্ত প্রতিটি গণহত্যার যথাযথ বিচার হতে হবে। কিন্তু স্কাইপি কেলেঙ্কারি, আইনজীবীকে আইনঘরে নিয়ে যাওয়া, সাক্ষীকে গুম করে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া কিংবা মব সন্ত্রাসের মাধ্যমে কোনো ট্রায়াল হলে, সেটা অবশ্যই বিচারিক হত্যাকাণ্ড।

বুধবার (৬ আগস্ট) তিনি তার ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এ কথা বলেন।

পোস্টে এস এম ফরহাদ বলেন, ‘হাসিনা ও শাহবাগের ফ্রেমওয়ার্কে কাউকে যুদ্ধাপরাধী বলা বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থাকে অবমাননা করার নামান্তর। যারা সুষ্ঠু বিচারে বিশ্বাস করে না, তারাই মব সন্ত্রাস করে এবং তারাই হাসিনাকে সব অবৈধ কাজের বৈধতা দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘চব্বিশ দিয়ে একাত্তরকে মুছে ফেলার নয়া বয়ান ৫ আগস্টের পর সচেতনভাবেই বাজারে চাওর করা হয়েছে। চব্বিশ ও একাত্তর বাংলাদেশের ইতিহাস পরিবর্তনকারী ঘটনা। একাত্তর এই জাতিকে আলাদা মানচিত্র ও ভূমি দিয়েছে এবং হাসিনার ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের ভয়াল নির্যাতন থেকে জাতিকে মুক্তি দিয়েছে চব্বিশ। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠন বাংলাদেশে চব্বিশ দিয়ে একাত্তরকে মুছে ফেলার রাজনীতি করেনি। যারা বারবার দুটোকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর বয়ান তৈরি করেছে, তারাই একাত্তর ও চব্বিশকে প্রশ্নবিদ্ধ করার রাজনীতি করেছে।’

১৯৭১ ও ২০২৫ প্রসঙ্গে ঢাবি শিবিরের সভাপতি বলেন, ‘একটিকে অপরটির মুখোমুখি দাঁড় করানোর রাজনীতি মূলত চব্বিশকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং পতিত স্বৈরাচারের পক্ষে পরোক্ষ ন্যারেটিভ দাঁড় করানোর অপচেষ্টা। হাসিনার গণহত্যাকে স্বাভাবিক (normalize) করে এবং প্রকারান্তরে দায়মুক্তি দিয়ে আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনাই তাদের মিশন।

রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব কিংবা হীন স্বার্থে এই আরোপিত বয়ানে সাবস্ক্রাইব করছে কতিপয় স্বঘোষিত ‘বাংলাদেশপন্থি’ ও ‘পোস্ট-আইডিওলোজি’ রাজনীতির কতিপয় ধারকরা।’

ফরহাদ বলেন, ‘চব্বিশে আওয়ামী লীগ ও শাহবাগের রাজনৈতিক করুণ পরাজয়ের পর বাজারে এই কল্পিত ন্যারেটিভ জিইয়ে রাখার মধ্য দিয়ে নতুন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তৈরি করে বিভাজনের পুরোনো অপচেষ্টা মূলত দিল্লির নয়া প্রকল্প। আর এই নয়া প্রকল্পকে সফল করতে উঠেপড়ে লেগেছে পতিত হাসিনাশাহীর প্রত্যক্ষ সহযোগী ও দিল্লির দোসররা।’

‘মুজিব-বাকশাল ও হাসিনা-শাহবাগ প্রকল্প মুক্তিযুদ্ধকে একটি গোষ্ঠীর ইতিহাস বানিয়ে খোদ মুক্তিযুদ্ধকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।’

ঢাবি শিবির সভাপতি বলেন, যাদের বয়ান গণহত্যার সম্মতি উৎপাদন করে এবং খোদ মুক্তিযুদ্ধকেই প্রশ্নের সম্মুখীন করে, তাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য দরকার। আমরা মুক্তিযুদ্ধের হাসিনাবাদী ও শাহবাগী বয়ানকে ইনকার করি। মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে যে ঐতিহাসিক দুর্নীতি ও বেইনসাফি হয়েছে, আমরা তার মূলোৎপাটন করে মুক্তিযুদ্ধের গণ আকাঙ্ক্ষার ইতিহাস বিনির্মাণ করবো।

যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রসঙ্গে বলেন, ‘একাত্তরের সব যুদ্ধাপরাধের বিচার হওয়া উচিত ফেয়ার ট্রায়ালে। শাহবাগ কায়েম করে যারা মব সন্ত্রাস করে বাংলাদেশের ইতিহাসের জঘন্যতম বিচারিক হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, হাসিনাকে ক্রসফায়ারের বৈধতা দিয়েছে, শাপলা গণহত্যার পক্ষে প্রত্যক্ষ সম্মতি উৎপাদন করেছে এবং চব্বিশে নির্বিচারে গুলি করে নাগরিক হত্যার লাইসেন্স দিয়েছে, তাদের বিচারও করতে হবে। এবং এই বিচারও এমনভাবে হতে হবে, যেখানে কোনো মৌলিক বিচারিক নীতিমালা ভঙ্গ করা হবে না।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘জুলাই পরবর্তী সময়ে বাকশাল, মুজিববাদ ও শাহবাগকে মুক্তিযুদ্ধের সুরতে হাজির করে এর বিরোধিতা করাকে ‘রাজাকার’ বানানোর ন্যারেটিভ হাজির করেছে হাসিনা শাহীর প্রত্যক্ষ সহযোগীরা।’

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ভারতের ট্রফি বিতর্কে নাকভির কড়া সমালোচনা করলেন মদনলাল Oct 03, 2025
img
বিশ্বকাপ বাছাইয়ের জন্য ফ্রান্স ও জার্মানির দল ঘোষণা Oct 03, 2025
img
ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে টিম ম্যানেজমেন্টকে ধন্যবাদ দিলেন সোহান Oct 03, 2025
img

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী

আহমদ রফিকের প্রয়াণে জাতি এক সত্যিকারের জ্ঞানী মানুষকে হারাল Oct 03, 2025
img
এবার নির্বাচন পেছানোর প্রস্তাব Oct 03, 2025
img
স্টার্কের অনুপ্রেরণায় বোলিং বিভাগ কাপাচ্ছেন মারুফা Oct 03, 2025
img
হলুদ শাড়িতে প্রথম লুকেই নজর কাড়ল নয়নতারা Oct 03, 2025
img
এতদিন ধরে ক্রিকেট খেলে, পায়ে লাগলে এরা বোঝে না: নাসির হোসেন Oct 03, 2025
img
রাজৈরে বাস দুর্ঘটনায় নিহত ১ Oct 03, 2025
img
জুবিন গার্গের শেষ মুহূর্তের ভিডিও রেকর্ড করা সহশিল্পী অমৃতপ্রভা গ্রেপ্তার Oct 03, 2025
img
৮ দিনের আয়ে চমকে দিলেন পবন কল্যাণের ‘দে কল হিম ওজি’ সিনেমাটি Oct 03, 2025
img
ইসলামী ব্যাংকের ফেসবুক পেজ হ্যাকড, ওয়েবসাইটে বার্তা দিলো হ্যাকাররা Oct 03, 2025
img
‘মাধরাশি’ ও ‘লিটল হার্টস’ এবার আসছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে Oct 03, 2025
img
৯ রানে ৬ উইকেটের পরও টেনশনে ছিলেন না জাকের! Oct 03, 2025
img
কুমার শানুর বিরুদ্ধে সাবেক স্ত্রীর গুরুতর অভিযোগ, শানুর আইনি নোটিশ Oct 03, 2025
img
জামায়াতের নতুন আমির নির্বাচন ডিসেম্বরে Oct 03, 2025
img
জুনে চুক্তি অনুযায়ী চরিত্রে পূর্ণতা বজায় রাখছেন দীপিকা Oct 03, 2025
img
ট্রাম্পের শুল্ক নীতির পর এবার ভারত সফরে পুতিন Oct 03, 2025
img
রাজেশ খান্নার নাতনি নাওমিকাকে দেখা যাবে নতুন জুটিতে Oct 03, 2025
img
বিশ্বকাপে জায়গা নিশ্চিত করতে কঠিন পরীক্ষার সামনে জার্মানি Oct 03, 2025