১২ মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের ১২ সাফল্য তুলে ধরলেন প্রেস সচিব

আগামীকাল ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা, পতন হয় আওয়ামী সরকারের। এর তিনদিন পর নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার।


গত এক বছরে সরকার কতটুকু সফল বা ব্যর্থ হয়েছে তা নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে। এ অবস্থায় এক বছর পূর্তির প্রাক্কালে ১২ মাসে সরকারের ১২ সাফল্য তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।


বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে আইডিতে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে বর্তমান সরকারের সফলতার প্রধান ১২ অর্জন তুলে ধরেন প্রেস সচিব।


১. শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দেশজুড়ে শান্তি ও আইনশৃঙ্খলা ফিরে আসে, যা প্রতিশোধ ও বিশৃঙ্খলার চক্র বন্ধ করে। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নৈতিক নেতৃত্ব ছিল এই স্থিতিশীলতার প্রধান চালিকা শক্তি, যিনি দেশকে সহিংসতার বদলে পুনর্মিলন ও গণতন্ত্রের পথে পরিচালিত করেন।

২. অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন: ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার: খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রায় ১৪ শতাংশ থেকে অর্ধেকে নামানো হয়, সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশে নেমে আসে (৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন), প্রবাসী আয় ৩০.৩৩ বিলিয়ন ডলারে রেকর্ড সৃষ্টি করে, রপ্তানি ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায় এবং দীর্ঘসময় পর টাকার মান ডলারের বিপরীতে শক্তিশালী হয়। ব্যাংক খাত স্থিতিশীল হয়।

৩. বাণিজ্য ও বিনিয়োগে অগ্রগতি: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক সংক্রান্ত আলোচনায় সফল সমাপ্তি ঘটে (যা অনেকেই বলেছিলেন দুর্বল সরকার পেরে উঠবে না), উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ আসে (হান্ডা গ্রুপের ২৫ কোটি ডলারের টেক্সটাইল বিনিয়োগ, যা ২৫,০০০ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে), গত সরকারের তুলনায় দ্বিগুণ এফডিআই প্রবাহ নিশ্চিত হয়। চীনা বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

৪. গণতান্ত্রিক সংস্কার ও জুলাই সনদ: সংস্কার কমিশন গঠন, ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দলের মধ্যে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা এবং ঐতিহাসিক জুলাই সনদ চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে স্বৈরতন্ত্র ফিরে আসার পথ রোধে কাঠামোগত জবাবদিহি নিশ্চিত করবে। এই সনদ গণতন্ত্রের এক নতুন যুগের সূচনা করবে।


৫. জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার: জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের স্বচ্ছ বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে চারটি বড় মামলার বিচার চলছে। শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়েছে।

৬. নির্বাচন পরিকল্পনা ও সংস্কার: ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রবাসী, প্রথমবারের মতো ভোটার হওয়া তরুণ এবং নারীদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা হচ্ছে। নাগরিক মতামতের জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু হচ্ছে। নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৮ লাখ পুলিশ, আনসার ও সেনা সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

৭. প্রতিষ্ঠানিক ও আইনি সংস্কার-
• বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আরও মজবুত করা হয়েছে।
• পুলিশ সংস্কার: মানবাধিকার সেল, বডিক্যাম, স্বচ্ছ জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ, জাতিসংঘ মানের প্রতিবাদ নিয়ন্ত্রণ প্রটোকল চালু।
• আইনি সংস্কার: দেওয়ানি ও ফৌজদারি কার্যবিধিতে বড় পরিবর্তন, গ্রেফতারের পর ১২ ঘণ্টার মধ্যে পরিবারের কাছে জানানো বাধ্যতামূলক, আইনজীবীর অ্যাক্সেস, চিকিৎসা সুরক্ষা ও অনলাইন জিডির সুযোগ চালু।


৮. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও ইন্টারনেট অধিকার: দমনমূলক সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল, সব সাংবাদিকের মামলার অবসান, সমালোচনার স্বাধীনতা নিশ্চিত এবং ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইন্টারনেট অ্যাক্সেসকে মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা।

৯. পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন: একক দেশের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে সরে এসে বহুমাত্রিক ও ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতি গড়ে তোলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন অংশীদারের সঙ্গে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, চিকিৎসা সহায়তা ও সংকট মোকাবেলায় সহযোগিতা সম্প্রসারণ। সার্কের পুনর্জাগরণ ও আসিয়ানে সদস্যপদ অর্জনের প্রচেষ্টা শুরু।

১০. প্রবাসী ও শ্রমিকদের অধিকার: আমিরাতে ভিসা পুনরায় চালু, মালয়েশিয়ায় একাধিকবার প্রবেশের ভিসা চালু। উপসাগরীয় অঞ্চলে অবৈধ শ্রমিকদের বৈধতা দেওয়া। জাপানে ১ লাখ তরুণ পাঠানোর উদ্যোগ এবং ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া ও সার্বিয়ায় আরও শ্রমিক পাঠানোর পরিকল্পনা গ্রহণ।


১১. শহীদ ও আহত বিপ্লবীদের সহায়তা: জুলাই বিপ্লবের শহীদ ও আহতদের তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। ৭৭৫ শহীদ পরিবারের মাঝে প্রায় ১০০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ও ভাতা এবং ১৩ হাজার ৮০০ আহত বিপ্লবীর মাঝে ১৫৩ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। গুরুতর আহতদের বিদেশে উন্নত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

১২. সমুদ্র ও অবকাঠামো উন্নয়ন: বঙ্গোপসাগরকে ‘জলভিত্তিক অর্থনীতির’ মূল সম্পদ ঘোষণা। চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বাড়ানো হয়েছে (প্রতিদিন অতিরিক্ত ২২৫ কনটেইনার পরিচালনা), উপকূলীয় উন্নয়ন প্রকল্প সম্প্রসারণ এবং গভীর সমুদ্রের মৎস্য ও শিল্প প্রকল্পে বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ শুরু।

কেএন/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বাড়ছে নারী ক্রিকেটারদের বেতন-ভাতা Nov 04, 2025
img
এনসিপি নেতাদের এলাকায় বিএনপির প্রার্থী যারা Nov 04, 2025
img
এবার আফগানিস্তানের দায়িত্ব ছাড়ছেন জোনাথন ট্রট Nov 04, 2025
img
পুতিন ও শি জিনপিং দুজনকেই সামলানো কঠিন : ট্রাম্প Nov 04, 2025
img
ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য আবেদন করেছে ১২ প্রতিষ্ঠান Nov 04, 2025
img
সাতক্ষীরায় প্রার্থীতা বাতিলের দাবিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ Nov 04, 2025
img

২০২৫-২৬ অর্থবছর

৪ মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি আয় বাড়ল ১.৪০ শতাংশ Nov 04, 2025
img
জোটে গেলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে, অধ্যাদেশ জারি Nov 04, 2025
img
শরীয়তপুর ৩টি আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন যারা Nov 04, 2025
img
বিএনপি একটি সুন্দর রাষ্ট্র গড়তে চায় : কফিল উদ্দিন Nov 04, 2025
img
মৌলভীবাজার ৪টি আসনে ধানের শীষের প্রার্থী যারা Nov 04, 2025
img
হালান্ডকে মেসি-রোনালদো পর্যায়ের দাবি গার্দিওলার Nov 04, 2025
img
আজকের বাজারে স্বর্ণ ও রুপার দাম Nov 04, 2025
img
৩ বছর পর আবার হলুদ জার্সিতে ফাবিনিয়ো, নতুন মুখ একজন Nov 04, 2025
img
আবারও নেইমারকে ছাড়াই ব্রাজিলের দল ঘোষণা Nov 04, 2025
img
বাগেরহাট জেলার কোনো আসনেই প্রার্থী দেয়নি বিএনপি Nov 04, 2025
img
আজ মেঘলা থাকবে ঢাকায় আকাশ Nov 04, 2025
img
মেঘনা নদীতে ১৪০ টন চোরাই কয়লাসহ আটক ২ Nov 04, 2025
img
বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার Nov 04, 2025
img
দূষিত শহরের তালিকায় ১৪তম অবস্থানে ঢাকা, শীর্ষে লাহোর Nov 04, 2025