ক্রিকেটারদের সংগঠন ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) নির্বাচনকে সামনে রেখে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন তামিম ইকবাল, মোহাম্মদ মিঠুন, এনামুল হক বিজয়রা। তবে সবশেষ কয়েকটি সভার কোনটিতেই ছিলেন না কোনো নারী ক্রিকেটার। এমন বৈষম্যের প্রতিবাদ জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ নারী দলের দুই ক্রিকেটার রুমানা আহমেদ ও নিগার সুলতানা জ্যোতি।
২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট সরকার পরিবর্তনের পর কোয়াবের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান সভাপতি নাঈমুর রহমান দুর্জয় ও সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল। তারা সরে দাঁড়ানোর পর সেলিম শাহেদ আহ্বায়ক করে ১৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কোয়াবের নির্বাচককে সামনে রেখে কিছুদিন আগে ক্রিকেটারদের সঙ্গে বৈঠক করেন তামিম। পরবর্তীতে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করতে আবারও বৈঠকে বসেন তারা।
যদিও সবশেষ সভায় ছিলেন না বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক তামিম। তবে কমিটির সদস্যরা ছাড়াও ক্রিকেটারদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুমিনুল হক, নাজমুল হোসেন শান্ত, নুরুল হাসান সোহান, তাইজুল ইসলাম, মিঠুন, বিজয়রা। তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই নির্বাচনের ঘোষণা করেন সেলিম শাহেদ। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী আগামী ৪ সেপ্টেম্বর হতে যাচ্ছে কোয়াবের নির্বাচন।
কোয়াব বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সংগঠন হলেও সবশেষ দুই সভার একটিতেই রাখা হয়নি দেশের নারী ক্রিকেটারদের। এমন অবস্থায় এসব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জ্যোতি। যদিও বাংলাদেশের অধিনায়কের পোস্টে সরাসরি কোয়াব সম্পর্কিত কোনো কথা ছিল না। তবে নারী ও পুরুষ ক্রিকেটারদের মধ্যে যে বৈষম্য করা হচ্ছে সেটা উল্লেখ করেছেন তিনি। নিজের ফেসবুকে পেজে জ্যোতি লিখেছেন, ‘ক্রিকেটার আর নারী ক্রিকেটারের ভেতর পার্থক্য আছে বন্ধু!’
আরেক নারী ক্রিকেটার রুমানা অবশ্য কোনো রাখঢাক রাখেননি। কোয়াবের আলোচনায় ছেলে ক্রিকেটাররা থাকলেও নারীদের কেন রাখা হয়নি এসব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সেই সঙ্গেও তামিম, সাকিব আল হাসান কিংবা মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে সবাই আলোচনা করলেও সালমা খাতুন, রুমানা কিংবা জাহানারাদের নিয়ে কেন কথা হচ্ছে না? কবে বাংলাদেশে নারী ও পুরুষের বৈষম্য দূর হবে সেটাও জানতে চেয়েছেন তিনি।
নিজের ফেসবুক পেজে রুমানা লিখেন, ‘সম্প্রতি বোর্ডে কোয়াব নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। এখানে পুরুষ ক্রিকেটারের অনেক আনাগোনা দেখলেও কোনো নারী ক্রিকেটারের দেখা মিলল না। তাহলে আমাদের অবস্থান কোথায়? যাদের হাত ধরে এই নারী ক্রিকেট তারাই বা কোথায় এখন? তামিম, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ যদি সবার আলোচনাতে থাকে সালমা, রুমানা , জাহানারাদের নিয়ে কোথায় আলোচনা? কবে আমরা নারী পুরুষের বৈষম্য দূর করব? কবে একটা সুন্দর সংস্কৃতি তৈরি করব? এত বছর ক্রিকেট ক্যারিয়ারের এইটুকু মূল্যবোধ তো আশা করতেই পারি।’
ছেলেদের পাশাপাশি সবশেষ কয়েক বছরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নারীদের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগও। অস্ট্রেলিয়ার নারী বিগ ব্যাশের পাশাপাশি ভারতে নারী আইপিএল, ওয়েস্ট ইন্ডিজে নারী সিপিএল ও ইংল্যান্ডে হচ্ছে নারী দ্য হান্ড্রেড। টি-টোয়েন্টিতে জাতীয় দলের সামর্থ্য বাড়াতে এমন লিগ আয়োজনের চাওয়া ছিল নারী ক্রিকেটারদের। বিসিবি কয়েকবার আশাও দেখিয়েছে তাদেরকে। চলতি বছর ছেলেদের বিপিএলের সময়ই বিসিবি জানায় তারা নারী বিপিএল করবে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনটি দল নিয়েই বিপিএল করার কথা ছিল তাদের। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলাপ করলেও সূচি মেলাতে না পারায় টুর্নামেন্টটি মাঠে গড়ায়নি। রুমানা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এসব নিয়েও। বারংবার আলোচনা করতে করতে থেমে যাওয়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে এক যুগের বেশি সময়েও ছেলেদের বিপিএল যে দাঁড়াতে পারেনি সেটাও নিয়েও খোঁচা নিয়েছেন এই নারী ক্রিকেটার।
রুমানা লিখেছেন, ‘বৈষম্য, বৈষম্য আর বৈষম্য! যেখানে ক্রিকেটে উন্নত দেশগুলো তাদের নারী ক্রিকেটারদের সঙ্গে নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে ,সেখানে আমরা নরী ক্রিকেটারদেরকে কোনো প্রকার আলোচনাতেও আনছি না। আমাদের বৈষম্যটা তাহলে কেন ?আমরাও তো এ দেশের ক্রিকেটে গৌরব বয়ে আনছি। বহির্বিশ্বে যেখানে নারীরা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ যেমন নারী আইপিএল, নারী বিগ ব্যাশ, নারী পিএসএল খেলে সেখানে আমরা এটা (নারী বিপিএল) নিয়ে আলোচনা করতে করতে থেমে যায়। বারবার একইভাবে পরের বছর বলে বলেই থেমে যায়। যদিও আমাদের ছেলেদের বিপিএল এখনো দাঁড়াতে পারিনি। কিন্তু এই দায়ভার কার?’
পিএ/এসএন