জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, যারা আবার একাত্তরে ফিরতে চান, তারা চব্বিশের নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতাকে অস্বীকার করছেন। চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর নতুন একটি রাজনৈতিক বাস্তবতা ও একটি নতুন প্রজন্ম আবির্ভূত হয়েছে। আমরা একাত্তরকে অতিক্রম করেছি এবং চব্বিশে পৌঁছেছি।
আজ শুক্রবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে নাহিদ ইসলাম এসব কথা বলেন।
‘৭১ এবং ২৪’ শিরোনামে ইংরেজিতে পোস্টটি লিখেছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
পোস্টে তিনি লিখেছেন, আমরা আগেও বলেছি- চব্বিশ হচ্ছে একাত্তরের ধারাবাহিকতা। একাত্তরের আকাঙ্ক্ষা সাম্য, মর্যাদা ও ন্যায়বিচার- এগুলোই চব্বিশের বৈষম্যবিরোধী এবং গণতান্ত্রিক গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পুনরায় ঘোষিত হয়েছে। যেখানে মুজিববাদ একাত্তরকে একটি ভারতীয় বয়ানের মধ্যে ঢুকিয়ে আমাদের জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও স্বার্থকে বিপন্ন করেছিল, চব্বিশ স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনাকে পুনরুদ্ধার করেছে।
এটা ছিল কর্তৃত্ববাদ, ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ লড়াই, যা একটি গণতান্ত্রিক ও সাম্যভিত্তিক বাংলাদেশের প্রত্যাশায় পরিচালিত হয়েছিল।’
তিনি আরো লিখেছেন, চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর নতুন একটি রাজনৈতিক বাস্তবতা ও একটি নতুন প্রজন্ম আবির্ভূত হয়েছে। যাঁরা চব্বিশের লড়াইয়ে অংশ নিয়ে সেই যুদ্ধে জয়ী হয়েছে। আমরা একাত্তরকে অতিক্রম করেছি এবং চব্বিশে পৌঁছেছি।
যারা এখনো ‘একাত্তরের পক্ষে না বিপক্ষে’ এই পুরোনো রাজনীতিকে ফিরিয়ে আনতে চান, তারা দেশকে একটি অচল রাজনৈতিক কাঠামোতে ফিরিয়ে নিতে চায়। কিন্তু আমরা চব্বিশ থেকে একটি নতুন সূচনা চেয়েছি, যা চব্বিশের অভ্যুত্থান থেকে জন্ম নেওয়া মূল্যবোধ ও আকাঙ্ক্ষার ওপর ভিত্তি করে একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলবে।
নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, ‘রাষ্ট্র ও সমাজকে ঐক্যবদ্ধ ও গণতান্ত্রিক করার জন্য মুজিববাদ এবং সব ধরনের কর্তৃত্ববাদী ও ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পরাজিত করাই আমাদের দায়িত্ব। এই প্রজন্ম ইতিমধ্যেই একাত্তরকে অতিক্রম করে এসেছে। ‘একাত্তরের পক্ষে না বিপক্ষে’- এই বাইনারির ওপর ভিত্তি করে তৈরি রাজনীতিকে গ্রহণ করতে কেউ আগ্রহী নয়।
একাত্তর ইতিহাসে থাকবে- রাষ্ট্রের একটি ভিত্তি, সম্মানজনক একটি নীতি হিসেবে। কিন্তু সেটি আর রাজনৈতিক বৈধতার ওপর আধিপত্য করবে না। সাতচল্লিশকেও একইভাবে ঐতিহাসিক মর্যাদার সঙ্গে স্মরণ করা হবে, কিন্তু এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের কোনো হাতিয়ার হবে না। এর মানে এই নয় যে আমরা এই ঘটনাগুলো নিয়ে আলোচনা বা বিতর্ক করব না, বরং এই নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় আমরা আমাদের ঐতিহাসিক প্রশ্নগুলোর সমাধান করতে পারি।’
এখন রাজনীতি হতে হবে চব্বিশের মূল্যবোধের ভিত্তিতে- এই মন্তব্য করে নাহিদ ইসলাম ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, ‘যারা আবার একাত্তরে ফিরতে চায়, তারা চব্বিশের নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতাকে অস্বীকার করছে। চব্বিশের অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ অনেক রাজনৈতিক শক্তির জন্য ছিল একধরনের প্রায়শ্চিত্ত। কিন্তু সেই প্রায়শ্চিত্তের অর্থই হারিয়ে যাবে যদি তারা বা আমরা আবার পুরোনো মতাদর্শিক রাজনীতিতে ফিরে যাই। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই পুরোনো বাইনারি কাঠামোর পুনরুত্থান রোধ করা আমাদের দায়িত্ব।’
চব্বিশ কখনোই প্রতিশোধের জন্য ছিল না- এমন মন্তব্য করে নাহিদ লিখেছেন, ‘যারা চব্বিশকে প্রতিশোধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চায়, তারা এর অন্তর্নিহিত মর্মকে ভুলভাবে অনুধাবন করেছে। চব্বিশ হলো জাতীয় ঐক্য ও রিকন্সিলিয়েশনের (পুনর্মিলন) একটি ক্ষেত্র। এর চেতনা এমন একটি ভবিষ্যৎ নির্মাণে নিহিত, যা ঐকমত্য, সহমর্মিতা ও যৌথ দায়িত্বের মাধ্যমে গড়ে উঠতে হবে, প্রতিশোধের চক্রের মাধ্যমে নয়।’
কেএন/টিকে