ট্রাম্পের চাপের মুখে মোদি ও শির সঙ্গে আলোচনা পুতিনের

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুক্রবার চীন ও ভারতের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। ট্রাম্পের সঙ্গে সম্ভাব্য এক শীর্ষ বৈঠকের আগে গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদের সমর্থন চান তিনি।

এই ফোনালাপগুলো হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্ধারিত সময়সীমা শেষের কয়েক ঘণ্টা আগে, যার মধ্যে মস্কোকে ইউক্রেনে আক্রমণ থামাতে বলা হয়েছে, না হলে রাশিয়ার প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারদের লক্ষ্য করে নতুন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।

ওয়াশিংটন ও মস্কো—উভয়ই নিশ্চিত করেছে, পুতিন-ট্রাম্প বৈঠক হতে যাচ্ছে, সম্ভবত আগামী সপ্তাহেই। ক্ষমতায় আসার পর প্রথম কয়েক মাস ধরে ট্রাম্প ইউক্রেনে শান্তি আনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন, যদিও তিনি দাবি করেছিলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ করতে পারেন তিনি। কিন্তু তার প্রচেষ্টা এখনো কোনো বড় সাফল্য আনেনি। 

এমনকি তিনি চাচ্ছেন, চীন ও ভারতের মতো দেশগুলো যেন মস্কোর কাছ থেকে তেল ও গ্যাস কেনা কমিয়ে দেয়, যা রাশিয়ার সেনাবাহিনীর অর্থায়নের প্রধান উৎস বলে কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো মনে করে।

এই সপ্তাহের শুরুতে ট্রাম্প ভারতের ওপর শুল্ক বাড়িয়েছেন। কারণ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মস্কো ইউক্রেনে তার অভিযান শুরু করার পর থেকে রুশ তেল কেনা দেশটি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়িয়েছে।
ক্রেমলিন শুক্রবার জানিয়েছে, পুতিন চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংকে ‘মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে আলোচনার প্রধান ফলাফল’ জানিয়েছেন। এই বিশেষ দূত সপ্তাহের শুরুতে মস্কোতে সফর করেন।

ক্রেমলিন আরো জানায়, শি ‘দীর্ঘমেয়াদি’ সমাধানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। অন্যদিকে চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, পুতিনকে শি বলেছেন, ‘চীন খুশি যে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র যোগাযোগ বজায় রাখছে, সম্পর্ক উন্নয়ন করছে এবং ইউক্রেন সংকটের রাজনৈতিক সমাধান এগিয়ে নিতে কাজ করছে।’
রাশিয়া ও চীনের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক রাশিয়ার অভিযান শুরুর পর আরো ঘনিষ্ঠ হয়েছে। চীন নিজেকে এই সংঘাতে নিরপেক্ষ পক্ষ হিসেবে তুলে ধরলেও কখনো রাশিয়ার অভিযানের নিন্দা করেনি বা রাশিয়াকে সেনা প্রত্যাহার করতে বলেনি।

‘খুব ভালো আলোচনা’

এদিকে পুতিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও ফোনে কথা বলেছেন। এর আগে দুই দেশই যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কের সমালোচনা করে, যা নয়াদিল্লির রুশ তেল কেনার ওপর আরোপ করা হয়েছে। মোদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, ‘আমার বন্ধু প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে খুব ভালো ও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ইউক্রেন পরিস্থিতি সম্পর্কে সর্বশেষ তথ্য জানানোয় আমি তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।’

তবে এই আলোচনায় আর কী কী বিষয় উঠে এসেছে, তা উভয় পক্ষের কেউই বিস্তারিত জানায়নি। শি ও মোদি—দুজনই ইউক্রেন সংকটের জন্য নিজেদের শান্তি উদ্যোগ তুলে ধরেছেন, যদিও এসব উদ্যোগ খুব একটা অগ্রগতি আনেনি। এ ছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি চুক্তির জন্য ট্রাম্পের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা শুক্রবার শেষ হওয়ার কথা, যার ব্যর্থতায় রাশিয়ার বাণিজ্যিক অংশীদারদের লক্ষ্য করে নতুন নিষেধাজ্ঞা আসবে।

আসন্ন শীর্ষ সম্মেলন সত্ত্বেও সময়সীমা এখনো কার্যকর আছে কি না, সে বিষয়ে ওভাল অফিসে সাংবাদিকরা ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করলে তিনি এই বিষয়ে স্পষ্ট উত্তর দেননি। তিনি বলেন, ‘এটা পুতিনের ওপর নির্ভর করছে। আমরা দেখব সে কী বলে।’

এদিকে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে তিন দফা আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়নি এবং এই বৈঠকটি শান্তি আনবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। মস্কোর রাস্তায়ও মানুষের প্রত্যাশা খুব একটা বেশি নয়। ইরিনা নামের ৫৭ বছর বয়সী এক আইনজীবী এএফপিকে বলেন, ‘সর্বোত্তমের আশা করুন, কিন্তু সবচেয়ে খারাপের জন্য প্রস্তুত থাকুন। সত্যি বলতে, আমার কোনো আশা নেই।’

পুতিন এর আগে বহুবার যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও কিয়েভের যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে এই পর্যায়ে আলোচনায় বসার সম্ভাবনাও নাকচ করে দিয়েছেন। যদিও জেলেনস্কি বলেছেন, একটি চুক্তির পথে অগ্রসর হতে হলে এই সাক্ষাৎ অপরিহার্য।

ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুর পর থেকে হাজারো মানুষ নিহত হয়েছে এবং লাখ লাখ মানুষ ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চল থেকে বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।


ইউটি/টিএ



Share this news on:

সর্বশেষ

img
রায়ের পর কিছু সহিংসতা হলেও তা বাড়বে না : সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত Nov 17, 2025
img
ইতিহাসে বিচারের মুখোমুখি হওয়া রাষ্ট্রপ্রধানরা Nov 17, 2025
img
গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিদের হজে নিষেধাজ্ঞা, ফেরত পাঠাবে সৌদি আরব Nov 17, 2025
img
ট্রাইব্যুনালের এজলাসে পৌঁছেছেন প্রসিকিউশন টিম ও আইনজীবী Nov 17, 2025
img
কাতারের দোহার মঞ্চে ‘অস্বস্তিকর’ হয়ে উঠল সালমান-তামান্নার নাচ! Nov 17, 2025
img
ধানমন্ডি ৩২-এ নেওয়া হচ্ছে দুটি বুলডোজার Nov 17, 2025
img
শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত এনে রায় কার্যকরের দাবি শহীদ মিরাজের বাবার Nov 17, 2025
img
চোটে পড়ে ছিটকে গেলেন ড্যারেল মিচেল Nov 17, 2025
img
একটি ন্যায্য বিচার নিশ্চিত হবে, জাতি অপেক্ষায় আছে: মির্জা ফখরুল Nov 17, 2025
img
বিএনপির রাজনীতির তিন প্রজন্ম মাওলানা ভাসানীর কাছে ঋণী : আলাল Nov 17, 2025
img
মক্কা থেকে মদিনা যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪২ জন ওমরাহ যাত্রী নিহতের শঙ্কা Nov 17, 2025
img
হাসিনার রায় ঘোষণায় রাজধানীর নিরাপত্তায় ডিএমপির ১৫ হাজার পুলিশ সদস্য কাজ করছে : অতিরিক্ত কমিশনার Nov 17, 2025
img
আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে : ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি Nov 17, 2025
img
রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে না শেখ হাসিনা Nov 17, 2025
img
তাইওয়ান নিয়ে তীব্র কূটনৈতিক টানাপোড়েন চীন ও জাপানের, চীনকে শান্ত করতে দূত পাঠাল জাপান Nov 17, 2025
img
শেখ হাসিনাকে ফাঁসি দিলে কাউকে ছাড় নয়, ভারতীয় নম্বর থেকে হুমকি Nov 17, 2025
img
যত চ্যালেঞ্জই আসুক, কমিশন মোকাবিলা করতে প্রস্তুত Nov 17, 2025
img
পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার প্রস্তুত: পরিবেশ উপদেষ্টা Nov 17, 2025
img
শেখ হাসিনার রায় ঘিরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে কঠোর নিরাপত্তা Nov 17, 2025
img
অফিসিয়াল বিবৃতি দিলেন মেহজাবীন চৌধুরী Nov 17, 2025