সরকারকে পুরোনো স্বৈরাচারের পথ ত্যাগের দাবি আনু মুহাম্মদের

গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, সরকারের কাছে দাবি জানাই, আপনারা পুরোনো স্বৈরাচারের পথ ত্যাগ করুন। সামনে নির্বাচনের কথা বলছেন, সেই নির্বাচনের আগেই সেই সম্মানজনক অবস্থাটা তৈরি করুন, সহিষ্ণু অবস্থা তৈরি করুন। যারা মব সন্ত্রাস করছে, যারা এই বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান হয়েছিল, সেটা বিক্রি করার চেষ্টা করছে, জুলাইয়ের নাম করে চাঁদাবাজি যারা করছে, জুলাইয়ের নাম করে যারা পদ দখল করছে, জুলাইয়ের নাম করে যারা সন্ত্রাস চালাচ্ছে, জুলাইয়ের নাম করে যারা সাম্প্রদায়িকতা চালাচ্ছে, মাজার-মসজিদ-মন্দিরে হামলা করছে, জুলাইয়ের নাম করে যারা নারীর উপর নির্যাতন করছে- তাদের দমন করুন। এদেরকে দমন না করলে যথাযথ নির্বাচন হবে না এবং এদেরকে দমন না করলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে যারা বিশ্বাসঘাতকতা করছে, তাদেরকে দমন না করলে এর দায় সরকারকে নিতে হবে।

শনিবার (৯ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যে আয়োজিত হয় ‘জুলাই জাগরণী’। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ১৯ শহীদের পরিবারকে তাদের ছবি-সংবলিত স্মারক প্রদান করা হয়। এ অনুষ্ঠানে সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, এক বছর পার হয়েছে এখন পর্যন্ত শহীদদের পরিষ্কার তালিকা হয়নি। সরকার একটা তালিকা দিচ্ছে, জাতিসংঘ একটা তালিকা দিচ্ছে, আবার অন্যান্য সংগঠন একেক রকম তালিকা দিচ্ছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির এই যুগে পরিষ্কার একটা তালিকা করা সম্ভব নয়- এটা অবিশ্বাসযোগ্য।

গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির এ সদস্য বলেন, সরকারের দায়িত্ব ছিল আহত যারা, খুঁজে খুঁজে তাদের বের করে, তাদের চিকিৎসা করা।

কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, যারা আহত হয়েছে, তাদেরই খুঁজতে হচ্ছে দেনদরবার করতে হচ্ছে, কাগজপত্র দিতে হচ্ছে, আগে হাজির করতে হচ্ছে, একবার এক হাসপাতাল আরেকবার এক হাসপাতাল, এমনকি ডাক্তারের কাছে গিয়ে, এমনকি বিদেশে পাঠানো হয়েছে তারপরে খোঁজখবর নাই- সেগুলো আমরা শুনছি। এগুলো তো খুবই অপমানজনক ব্যবহার। এটা তাদের কাছে প্রত্যাশিত ছিল না।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সাবেক অধ্যাপক বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সরাসরি যারা হত্যা করেছে, কিংবা যারা হত্যার নির্দেশ দিয়েছে- গত সরকারের নেতৃবৃন্দ, তাদের বেশিরভাগই এই সরকার ক্ষমতায় আসার পরেও তাদের বেশিরভাগই দেশ থেকে পালিয়েছে। কীভাবে পালিয়েছে, সেটাও আমাদের একটা প্রশ্ন। এটা হচ্ছে বিচারপ্রক্রিয়ার একটা বড় সমস্যা। দ্বিতীয় বড় সমস্যা হচ্ছে মামলা যেগুলো করা হয়েছে, সে মামলাগুলো খুব শিথিল এবং হত্যা মামলায় এত সংখ্যক মানুষকে আসামি করা হয়েছে এবং পাইকারি যেভাবে মামলা করা হয়েছে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নাই। এরকম লোকজনেরও নাম সেখানে যোগ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা বলে যোগ করে তাদের যেভাবে মামলাগুলো সাজানো হয়েছে, তাতে তার গ্রহণযোগ্যতাই নষ্ট হয়েছে। আসল অপরাধীরা তাতে বেশ ছাড়া পাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, শ্রমজীবী মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল। আজকে যারা আহত হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেক শ্রমজীবী মানুষ আছে। সেই শ্রমজীবী মানুষের উপরে অত্যাচার শেখ হাসিনার আমলে ছিল, এই আমলেও আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমলাতন্ত্রের দাপট সেই আমলে দেখেছি আমরা। এই আমলে দেখতে পাচ্ছি। পুলিশের গুলিতে মানুষের হত্যাকাণ্ড সেই আমলে দেখেছি, এই আমলেও দেখছি। সেই আমলে সাম্প্রদায়িক হামলা, জাতিগত হামলা দেখেছি, এই আমলেও দেখছি।

আমরা দেখতে চাই, প্রত্যেকটা মানুষ তার পরিচয় যাই হোক না কেন সে নিরাপদে চলবে, একটা সমাজ তৈরি করতে হবে যেখানে নারী ঘর থেকে বেরোবে কাজে বা দরকারে বা তার প্রয়োজনে কোন ধরনের অনিরাপদ বোধ করবে না।

ইউটি/টিএ


Share this news on:

সর্বশেষ

img
দুর্নীতি ও অনিয়মে তিন প্রতিষ্ঠানে দুদকের অভিযান Nov 06, 2025
img
কাজের চাপ কমাতে ১০ রোগীকে হত্যা, জার্মান নার্সের আমৃত্যু কারাদণ্ড Nov 06, 2025
img
আজ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে ঢাকার আকাশ Nov 06, 2025
img
পরিমিত ক্যাফেইন উপকারী, অতিরিক্ত বিপজ্জনক Nov 06, 2025
img
হাসপাতালে ভর্তি জিতু কামাল Nov 06, 2025
img
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ ১৮৪ অবৈধ অভিবাসী শ্রমিকদের আটক Nov 06, 2025
img
বাস্তববাদী ইশতেহার আর ভিন্নধর্মী প্রচারণায় ভোটারদের মন জয় করেছেন মামদানি Nov 06, 2025
img
মনোজ বাজপেয়ীর শুটিং দিনের কষ্টের গল্প Nov 06, 2025
img
সবাই এখন নিজেকে বিচারক মনে করে: সুনীল শেট্টি Nov 06, 2025
img
জনগণের মতো সেনাবাহিনীও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় Nov 06, 2025
img
শক্ত হতে শিখিয়েছেন মা, তবে সেটা প্রচারের নয়: আনুশকা শর্মা Nov 06, 2025
img
উত্তমকুমারের কাছেই শিখেছি সহঅভিনয়ের পাঠ: লিলি চক্রবর্তী Nov 06, 2025
img
স্ট্রাগল করতে করতে বয়স কেটে গেছে: রাখি সাওয়ান্ত Nov 06, 2025
img
এস আলমের লোকজন এখন নমিনেশন পাচ্ছেন : কর্নেল অলি Nov 06, 2025
img
প্রধান উপদেষ্টার কাছে জামায়াতে ইসলামীসহ ৮ দলের স্মারকলিপি দেবে আজ Nov 06, 2025
img
নিউইয়র্ক থাকবে অভিবাসীদের শহর হিসেবে, বললেন মামদানি Nov 06, 2025
img

সাদিক কায়েম

জুবায়ের ও সর্ব মিত্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে কালচারাল ফ্যাসিস্টরা Nov 06, 2025
img
ভার্জিনিয়ার লেফটেন্যান্ট গভর্নর পদে জয় ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম হাশমির Nov 06, 2025
img
বড় বাজেটের ভিড়ে ‘দ্য তাজ স্টোরি'র বাজিমাত Nov 06, 2025
img
রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি ‘ভারতের রোনালদো-মেসি' : রশিদ লতিফ Nov 06, 2025