জিনপিং-ট্রাম্পের সঙ্গে বিবাদের কারণে ভেঙে পড়েছে মোদির কূটনীতি

বৈশ্বিক পরাশক্তি দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোগ বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার কূটনৈতিক তৎপরতা গিয়ে ঠেকেছে রাজনৈতিক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে।

এছাড়া নয়াদিল্লির বৈশ্বিক প্রভাবও নতুন করে প্রশ্নের মুখে পড়েছে। শনিবার (৯ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি প্রথম বড় বাজি ধরেন বেইজিংয়ের ওপর। শি জিনপিংকে স্বাগত জানাতে সেসময় গুজরাটে তিনি লাল গালিচা বিছিয়েছিলেন, এমনকি নদীর পাড়ে দোলনায় বসে বন্ধুত্বও প্রদর্শন করেন।

কিন্তু সেই সময়ই বিতর্কিত সীমান্তে চীনা ও ভারতীয় সেনাদের সংঘর্ষ বাঁধে যা ছিল একাধিক সংঘাতের প্রথম ঘটনা, যার ফলে বছরের পর বছর হিমালয়ে বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন রাখতে হয় ভারতকে।

এর কয়েক বছর পর মোদি ভরসা রাখেন ওয়াশিংটনের ওপর। চীনের মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রকে ভরসা হিসেবে দেখেন তিনি এবং সম্পর্ক জোরদারে সবটুকুই দেন। এমনকি প্রটোকল ভেঙে হিউস্টনের জনসভায় ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের প্রচারণায় অংশও নেন মোদি।

ট্রাম্পের প্রতি মোদির সেই দলীয় ঝোঁকের পরও বাইডেন প্রশাসন ভারতের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক রেখেছিল। আর গত বছর মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে মোদির “এআই মানে আমেরিকা ও ইন্ডিয়া” মন্তব্য আলোচনায় আসে।

কিন্তু ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে এই সম্পর্কের উষ্ণতা উধাও হয়ে যায়। তিনি ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন, অর্থনীতিকে “মৃত” বলে আখ্যা দেন এবং রাশিয়ার তেল কেনার অভিযোগ তোলেন।

কাশ্মিরের পেহেলগাম হামলার পর চলতি বছরের সীমান্ত উত্তেজনা নিয়ে যুদ্ধবিরতি মধ্যস্থতায় পাকিস্তানকে সমান গুরুত্ব দেওয়ায় ট্রাম্পের প্রতি ক্ষুব্ধ হয় ভারত। এমনকি পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাত বন্ধে ট্রাম্পের ভূমিকা নয়াদিল্লি প্রকাশ্যে অস্বীকার করে। মূলত মোদির শক্ত অবস্থানের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে এই পথ বেছে নেয় নয়াদিল্লি।

এই কূটনৈতিক ধাক্কা ভারতের কৌশলকে আবার “কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন”-এর পথে ঠেলে দিয়েছে যেখানে গভীর জোটের বদলে পরস্পরবিরোধী সম্পর্কের সমন্বয়েই ভরসা রাখা হয়। সীমান্ত বিরোধ মীমাংসিত না হলেও বর্তমান বাস্তবতায় বেইজিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ পুনরায় শুরু করেছে মোদি সরকার, যদিও চীন চলতি বছরের মে মাসের সামরিক সংঘাতে পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়েছিল।

একই সঙ্গে মস্কোর সঙ্গে সম্পর্কও গভীর করতে চাইছে ভারত। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলে “ভারত-রাশিয়া বিশেষ ও প্রিভিলেজড কৌশলগত অংশীদারত্ব” পুনঃনিশ্চিত করেছেন মোদি এবং এ বছরই তাকে ভারতে সফর করতে আমন্ত্রণ জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

তবুও বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা, এই ব্যর্থতাগুলো ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষায় আঘাত হেনেছে। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত নিরুপমা রাও বলেন, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ “খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশীদারিত্বের কৌশলগত ভিত্তিকে নষ্ট করেছে”।

আর সাবেক উপদেষ্টা সঞ্জয়া বারু মনে করেন, ট্রাম্প ও মোদির ব্যক্তিগত স্টাইল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে দুই দেশের মধ্যে নয়, বরং দুই নেতার ইগোর লড়াইয়ে পরিণত করেছে।

অন্যদিকে মোদি প্রকাশ্যে ওয়াশিংটনকে খুব বেশি সমালোচনা করেননি। বরং ট্রাম্পের আরোপ করার শুল্কের জবাবে কৃষক, জেলে ও দুগ্ধশিল্প রক্ষার কথা বলে মোদি তার অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন এবং জানিয়েছেন, রাজনৈতিকভাবে “চড়া মূল্য” দিতে হলেও তিনি প্রস্তুত।

এমকে/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বিপিএল ধারাভাষ্য প্যানেলে ইংলিশ কিংবদন্তি ড্যারেন গফ Dec 08, 2025
img
বাউল শিল্পী আবুল সরকারের জামিন নামঞ্জুর Dec 08, 2025
img
আমরা অতিদ্রুত রক্তের ঋণ ভুলে যেতে শুরু করেছি : সাকি Dec 08, 2025
img
বাবার জন্মদিনে ববির আবেগঘন পোস্ট Dec 08, 2025
img
সাবেক রেলমন্ত্রীর ছেলেসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি Dec 08, 2025
img
পুমার সাথে ৮ বছরের সম্পর্কের ইতি টানলেন বিরাট কোহলি Dec 08, 2025
img
সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে দেশে এলো ৪১৯ টন পেঁয়াজ Dec 08, 2025
img
নির্বাচনের দিনই গণভোট মেনে নিলো জামায়াতসহ ৮ দল Dec 08, 2025
তরুণী ভক্তদের চাপে বাড়ি থেকে লুকিয়ে বের হতেন হৃতিক Dec 08, 2025
দুই বছরের সম্পর্কের খোলামেলা স্বীকৃতি দিলেন আমির খান Dec 08, 2025
বাংলাদেশের বিপক্ষে নতুন ভেন্যুতে টেস্ট খেলবে অস্ট্রেলিয়া Dec 08, 2025
আদর্শ মাকে সম্মাননা দিল পালপাড়া সরকারি প্রাইমারি স্কুল Dec 08, 2025
সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের দাবি কী? Dec 08, 2025
রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করছে ইউক্রেনের ৭০ হাজার নারী সেনা Dec 08, 2025
img
বার্সেলোনা ছাড়ার গুঞ্জন উড়িয়ে দিলেন রাফিনিয়া Dec 08, 2025
img
কবে বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন মধুমিতা? Dec 08, 2025
img
ভারতীয় পাসপোর্টকে বৈধ স্বীকৃতি দিচ্ছে না চীন, ভ্রমণে সতর্কতা জারি Dec 08, 2025
img
জাপানে ৭.৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর সুনামির আঘাত Dec 08, 2025
img
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল, রাতে মেডিকেল বোর্ড বৈঠক Dec 08, 2025
img
বিপিএলে রাজশাহী দল নিয়ে সুখবর দিলেন হেড কোচ হান্নান সরকার Dec 08, 2025