বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, নিশ্চিত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া এখনই কেউ বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন—এমন প্রত্যাশা পুরোপুরি কাল্পনিক। আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা এলেও দেশের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখনো অনিশ্চিত থাকার কারণে বড় ধরনের বিনিয়োগ প্রবাহ অচিরেই বাড়ার সম্ভাবনা কম।
গতকাল রবিবার রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৩৬৫ দিন’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।
গভর্নর বলেন, ‘আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা এলেও রাজনৈতিক অবস্থা এখনো অনিশ্চিত ও অস্থিতিশীল।
নিরাপত্তা পরিস্থিতিও স্থিতিশীল নয়। এসব কারণেই এখন বিনিয়োগ বাড়ার ব্যাপারে আশা করা যুক্তিযুক্ত নয়।’ তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগ পাইপলাইনে ইতিবাচক কিছু সাইন দেখা যাচ্ছে; কিন্তু সময় লাগবে। সামনে নির্বাচন হওয়ায় বড় কোনো বিনিয়োগকারী বা বিদেশি বিনিয়োগকারী এই মুহূর্তে আসতে চাইবে না।’
গভর্নর আরো বলেন, ‘আমাদের দুটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। একটি সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, আরেকটি রিফর্ম এজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। যাতে ভবিষ্যৎ সরকার তা অব্যাহত রাখতে পারে। আর্থিক খাতের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ সহজ নয়, এটি সময়সাপেক্ষ একটি প্রক্রিয়া।’
মূল্যস্ফীতির বিষয়ে আহসান এইচ মনসুর জানান, টানা চার মাস কমার পর সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা বৃদ্ধি দেখা গেছে, যা স্বাভাবিক। চলতি অর্থবছরের শুরুতে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮.৫৫ শতাংশ, যা জুনের ৮.৪৮ শতাংশ থেকে বেড়েছে। খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্য রয়েছে, এ জন্য নীতি সুদ হার উচ্চ রাখা হয়েছে।
ডিজিটাল লেনদেন প্রসারে জোর দিয়ে গভর্নর বলেন, ‘নগদ অর্থের ব্যবহার কমিয়ে কিউআর কোডভিত্তিক লেনদেন জনপ্রিয় করতে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে।
এতে লেনদেন দ্রুত, নিরাপদ ও স্বচ্ছ হবে। পাশাপাশি রাষ্ট্রের খরচও কমবে। নগদ টাকা ছাপানো ও পরিবহন-বণ্টনে বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়।’
অর্থনৈতিক খাতের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যাংক কম্পানি আইন সংশোধন করা হচ্ছে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। আর্থিক খাতকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখতে হবে। এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বাস্তবসম্মত থাকা জরুরি এবং অর্থনীতির সুস্থ অবস্থার জন্য প্রয়োজন ধারাবাহিক সংস্কার ও নীতিগত দৃঢ়তা।’
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
এমআর/টিকে