সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্নার কড়া সমালোচনা করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান।
তিনি জানান, জেড আই খান পান্না শেখ হাসিনার পক্ষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে লড়তে চেয়েছিলেন কিন্তু সেটি সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন গণমাধ্যম সংবাদ প্রচার করেছে যেখানে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার পক্ষে আইনি লড়াইয়ের জন্য তিনি আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল মন্তব্য করেছে- ‘ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার পর স্টেশন মাস্টারকে বলে ট্রেনে ওঠার সুযোগ নেই।’ অর্থাৎ, ট্রাইব্যুনাল ইতিমধ্যে আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে। এখন নতুন কাউকে সুযোগ দেওয়ার আর অবকাশ নেই।
সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলে জাহেদ উর রহমান আইনজীবী পান্নাকে নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘পান্নাকে আমরা মূলত ৫ আগস্টের পর থেকে চিনতে শুরু করেছি।
বলা যেতে পারে। তিনি একজন আওয়ামী লীগপন্থী অ্যাক্টিভিস্ট। কেন এটা বলা হচ্ছে? কারণ, একজন প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী যখন নিজের আইনজীবী পরিচয়ের বাইরে গিয়ে রাজনৈতিক অবস্থান থেকে বক্তব্য দেন, তখন এমন ধারণা হতেই পারে।’
জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘একজন ম্যাজিস্ট্রেট বা সরকারি কর্মকর্তা ফেসবুকে ড. ইউনূসকে নিয়ে কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন।
তখন তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। সেই সময় পান্না এই বরখাস্তের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন এবং বলেছিলেন এটি ওই কর্মকর্তার বাকস্বাধীনতা। কিন্তু একজন সরকারি কর্মচারী সংবিধান ও সরকারি চাকরি বিধিমালার আওতাধীন থাকেন। তারা যা পারেন, যা পারেন না, তার সুস্পষ্ট সীমাবদ্ধতা আছে। সেই কর্মকর্তার ফেসবুক পোস্টে যেভাবে সরকারের প্রধানকে আক্রমণ করা হয়েছিল, তা ছিল পরিষ্কারভাবে আইন ও নৈতিকতার লঙ্ঘন।
একজন সিনিয়র আইনজীবী যদি সেটাকে বাকস্বাধীনতা বলে রক্ষা করতে চান তাহলে হয় তার আইন বোঝার ঘাটতি আছে অথবা তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পক্ষে পান্নাকে আইনি লড়াইয়ের সুযোগ দেওয়া উচিত। আমি জানি না আইনের দৃষ্টিতে ট্রাইব্যুনাল যা বলেছে, সেটাই হয়তো যথাযথ। কিন্তু আমি মনে করি, বিশেষ বিবেচনায় হলেও যদি সম্ভব হয় তাহলে তাকে এই সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল। শুধু পান্না নন বিশ্বের যেকোনো প্রথিতযশা আইনজীবী যদি শেখ হাসিনার পক্ষে লড়তে চান তাদের সুযোগ দেওয়া উচিত। কারণ, আমরা শেখ হাসিনার বিচারকে কোনোভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাই না।
তিনি আরো বলেন, ‘এই একই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জামায়াত নেতাদের বিচার হয়েছিল, তাদের অনেককে মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া হয়েছে। এটা আদালতের রায় ছিল, তবে আমরা জানি, এক্সিকিউটিভ ডিভিশনের প্রভাব ছিল না- এমনটা বলা কঠিন। আজ শেখ হাসিনার বিচার হচ্ছে। আমরা চাই না কেউ এটা নিয়ে বলুক, শেখ হাসিনার পক্ষের ভালো আইনজীবীকে সুযোগ দেওয়া হয়নি। কারণ অনেক সাধারণ মানুষ আইনি প্রক্রিয়া বোঝেন না। তখন তারা ধরে নিতে পারেন, এটা সরকারের ষড়যন্ত্র।’
জাহেদ উর রহমান বলেন, বিশেষ বিবেচনায় হলেও যদি আইনি কাঠামোর মধ্যে সম্ভব হয় পান্নাকে শেখ হাসিনার পক্ষে লড়ার সুযোগ দেওয়া উচিত। আমরা চাই, বিচার যেন স্বচ্ছ হয়, প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যদি তথ্য-প্রমাণ শক্তিশালী হয় তাহলে শাস্তি হওয়াটা সময়ের ব্যাপার। সেটা ঠেকাতে কেউ পারবে না। কিন্তু বিচার প্রক্রিয়ায় যেন কোনো প্রশ্ন না ওঠে সেই স্বচ্ছতা বজায় রাখা জরুরি।
কেএন/এসএন