সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে মানুষের প্রত্যাশা ছিল, একটা নতুন সরকার আসবে। তখন তাদের সামনে যে সরকার ছিল ধরেন, বিএনপি ছিল। তারা মনে করত, বিএনপি ক্ষমতায় আসতেছে। বিএনপি বললেই কিন্তু ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত যে বিএনপি ছিল তারা মনে করতেছে ওই বিএনপি আসবে।
কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে তো দলের চরিত্র পরিবর্তন হয়, দলের নেতৃত্ব পরিবর্তন হয়। নেতৃত্বের সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু দলের ক্যারেক্টারও চেঞ্জ হয়। কারণ ৯৬-এর আওয়ামী লীগ আর ২০১৪ অথবা ২৪-এর আওয়ামী লীগ তো এক না।’
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টিভির আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘দল তো একই আছে, বাট নেতৃত্বের কারণে কিন্তু চেঞ্জ হয়। কিন্তু মানুষকে ওই জিনিসটাই খুব জোরে তখন খাওয়ানো হচ্ছিল, ওই বিএনপি আবার আসবে। তখন মানুষের মধ্যে একটা দাবি উঠল, আমরা এমন একটা সরকার চাই অথবা এমন একটা সিস্টেম চাই, যেন সিস্টেমের কারণেই কেউ চাইলেই স্বৈরাচারী না হয়ে উঠতে পারে। এইটা পাওয়ার জন্য তখন বলা হলো, এটা একমাত্র তখনই সম্ভব যখন সিস্টেমের মধ্যে একটা সংস্কার করা হবে সিস্টেমের মধ্যে।
এই পর্যন্ত ঠিক আছে। তারপরে কী হলো? সংস্কার আপনি করবেন। সংস্কারটা কে করবে?’
তিনি আরো বলেন, ‘এখন সংস্কার করার জন্য তড়িঘড়ি করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন আমলারা যেসব নাম ঘোষণা করলেন, এই নামগুলো দেখে আমি দ্বিতীয়বার হতাশ হলাম। যে এরা কী সংস্কার করবে? এই লোকগুলোকে আমি চিনি। এই লোকগুলো কিন্তু আমি চিনি।
ধরেন, একজন হলো কাঠের মিস্ত্রি। এখন কাঠের মিস্ত্রি আসছে, আমি অনেক বিল্ডিং বানানো দেখেছি। আমি এখন আর্কিটেক্টের কাজ করতে পারব। উনি কমনসেন্স করা শুরু করলেন, এটা কি আসলে কিছু হবে? ও বিল্ডিং থাকবে? থাকবে না ভাই।’
আপনি এমন এমন লোক দিয়ে সংস্কার করলেন। আমি শুরু থেকে বলে আসতেছি যে এই লোকগুলো আমার মনে হয় না আপটু মার্ক। এখন কার সঙ্গে কার পরিচয় আছে তাকে এনে দিয়ে বসায় দিল। একটা কথা বলেন, মিডিয়া এত বছর ধরে আছে। আমারও তো দেখতে দেখতে ৩৬ বছর হয়ে গেল। মিডিয়ার সংস্কারের যে কমিশনটা হয়েছিল এটা কারা? এদের কয়জনকে মনে হয় যে তারা বাংলাদেশের মিডিয়া বোঝে? কয়জনকে মনে হয়, যাকে চিফ বানানো হয়েছিল উনি কই এখন? উনি বিদেশ থেকে আসছিল। কইরা দিয়া চইলা গেছে। উনি কি এই দেশের মিডিয়া বোঝেন?
উনি তো একবার খুব মাইন্ড করছিলেন। আপনি তো ছিলেন ওই অনুষ্ঠানে। আমি বলছিলাম, ‘আপনি কি জানেন যে বাংলাদেশে এখনো অনেক সাংবাদিকের বেতন ১০০০০ টাকার কম, আপনি বোঝেন, যেটা আপনি এক দিন ডিনারে খরচ করেন? উনি আমার ওপর খুব মাইন্ড করছিলেন। তো এটা রিয়ালিটি উনি চাইলেও বুঝবেন না। চেষ্টা করলেও বুঝতে পারবেন না। উনি খুব আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেন। তাও উনি বুঝতে পারবেন না যে একটা ফ্যামিলি কিভাবে এই টাকা দিয়ে চলে? উনি কী সংস্কার করবেন?’
এগুলো ছিল সব ক্ষেত্রেই। সংবিধানের ক্ষেত্রে সংবিধান সংস্কারে যিনি দায়িত্ব পাইছেন উনি কি সংবিধান বিশেষজ্ঞ? উনি তো আমার টিচার ছিলেন ঢাকা ইউনিভার্সিটির জার্নালিজমে। জার্নালিজমের টিচার। পরে কোনো একটা ডিগ্রি করেন আবার পলিটিক্যাল সায়েন্সের। উনি কি সংবিধান বিশেষজ্ঞ? উনি অনেক দিন বাংলাদেশে কলাম লিখতেন। প্রথম আলো পত্রিকায় উনি কি সংবিধান বিশেষজ্ঞ হিসেবে তাকে পরিচিতি লিখত কলামের নিচে লেখে না উনি কে? কোথাও কি কোনো দিন দেখছেন, উনি লিখছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ। তো উনি তো নিজেও বলতেন না, আমি সংবিধান বিশেষজ্ঞ। উনি সংবিধান চেঞ্জ করার জন্য দায়িত্ব নিয়ে বসছেন। এখন উনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের ক্ষেত্রে। উনি আমেরিকার নাগরিক। আবার দুই দিন পরে চলে যাবেন। আমার দেশ কি এত মূর্খ হয়ে গেছে যে ভাড়াটে বুদ্ধিজীবী এনে কাজ করতে হবে। কাজটা ভালো করবে, এটা কে দেখবে? দেখার দায়িত্ব কার? যেকোনো বড় কাজ করতে গেলে একজন পরামর্শক লাগে। এখানে পরামর্শকটা কে?’
কেএন/এসএন