ত্রাণ সহায়তা কমায় রাখাইনে তীব্র খাদ্য সংকট

দীর্ঘদিন ধরে চলমান সংঘাত ও বিদেশি ত্রাণ সহায়তা হ্রাসের কারণে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ‘নাটকীয়ভাবে’ বাড়ছে ক্ষুধা। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে মানুষের।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের পর থেকে মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ চলছে। এরই ধারাবাহিকতায সম্প্রতি দেশটির পশ্চিমে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন অঞ্চলে গত চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র লড়াই দেখা গেছে।

এই অঞ্চলের বহু মানুষ বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভর করত। কিন্তু সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দাতা দেশ সহায়তা তহবিল বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে অঞ্চলটিতে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। যেখানে লাখ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে।

রাখাইন রাজ্যের বেসামরিক নাগরিকরা জান্তা বাহিনীর সাথে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সংঘাতের মাঝে আটকা পড়েছে। মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার সীমিত হওয়ায় সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে।

মূলত সংঘাত, চলাচলের সীমাবদ্ধতা এবং সেনাবাহিনীর বোমাবর্ষণ ও গোলাবর্ষণের কারণে বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটছে। এর ফলে খাদ্য সরবরাহ এবং মানবিক সহায়তা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা মুসলিমরা সেনাবাহিনীর নৃশংসতার শিকার হচ্ছে এবং তাদের মানবিক সহায়তা পাওয়ার পথও সীমিত।

চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এক বিবৃতিতে বলেছে, রাখাইনের মধ্যাঞ্চলের ৫৭ শতাংশ পরিবারই এখন মৌলিক খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। যা এক বছর আগেও (২০২৪ সালের ডিসেম্বরে) ৩৩ শতাংশ ছিল। এতে আরও বলা হয়েছে, ‘সক্রিয় সংঘাত এবং ত্রাণ সহায়তার প্রবেশ সীমিত হওয়ার কারণে’ রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের পরিস্থিতি সম্ভবত আরও খারাপ।

ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, তাদের কমিউনিটি ফিডব্যাক মেকানিজমের প্রতিবেদনগুলোতেও রাখাইনে মানুষের দুর্দশার চিত্র উঠে এসেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, পরিবারগুলো এখন বেঁচে থাকার জন্য মরিয়া পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছে। যেমন তারা চড়া সুদে ঋণ নিচ্ছে। কোনো কোনো পরিবার ভিক্ষাবৃত্তি করছে। ছেলে-মেয়েদের স্কুল থেকে ঝরে পড়ার হার, সামাজিক উত্তেজনা এবং এমনকি মানব পাচার বাড়ছে।

চাল, আটা ও সবজির মতো নিয়মিত খাবারের অভাবে মানুষ বাগান থেকে বাঁশের অঙ্কুর বা বাঁশ কোড়ল খাচ্ছে। রাজ্যের ম্রাউক ইউ শহরের ফল বিক্রেতা কিয়াও উইন শিন বলছিলেন, ‘আরেকটি দিন চলে গেল, এবং আমাকে আবারও একটি দিনের জন্য সংগ্রাম করতে হবে।’

৬০ বছর বয়সি এই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘দিন দিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।’ তিনি জানান, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম দাম বৃদ্ধি এবং সেই সঙ্গে মানুষের আয় হ্রাস পাওয়ায় তার ব্যবসা ক্রমেই মন্দার দিকে যাচ্ছে।

তথ্যসূত্র: দ্য ডিপ্লোম্যাট ও এএফপি

এমকে/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
জর্ডানে ব্যর্থ অ-১৬, ব্যাখ্যা নেই কোচের Oct 18, 2025
img
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে মিরাজের মন্তব্য Oct 18, 2025
img
শাহজালাল বিমানবন্দরের ঘটনায় ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি Oct 18, 2025
img
ঢাকার ৪ হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর Oct 18, 2025
সাংবাদিকদের ওপর মেজাজ হারালেন বিএনপি মহাসচিব! Oct 18, 2025
img
শত টন পণ্য পুড়ে ছাই হওয়ার আশঙ্কা শাহজালাল বিমানবন্দরে Oct 18, 2025
img
বিমানবন্দরের অগ্নিকাণ্ড কি দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা, এ ব্যাপারে আমরা উদ্বিগ্ন : ডা. শফিকুর রহমান Oct 18, 2025
img
এনসিপি হয়তো নির্বাচনে অংশ নেবে না : মোস্তফা ফিরোজ Oct 18, 2025
বাবর আজমের টি-টোয়েন্টি কমব্যাক নিশ্চিত! Oct 18, 2025
বাংলাদেশ ক্রিকেট মানেই সাকিবকে বুঝি Oct 18, 2025
তিন খানের গল্পে রিয়াদে মঞ্চজুড়ে হাসি, স্মৃতি আর বন্ধুত্ব Oct 18, 2025
গসিপ ও ট্রল উপেক্ষা করে নিজের পথে ইধিকা Oct 18, 2025
মান্নাত ছেড়ে ভাড়া বাড়িতে শাহরুখ খান Oct 18, 2025
অগ্নিকাণ্ডের শুরুটা কেমন দেখছিলেন আনসার ও ট্রাফিক সহায়তাকরীরা? Oct 18, 2025
রাকসু নির্বাচন শেষে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় শিবিরের ক্যাম্পাস পরিষ্কার উদ্যোগ Oct 18, 2025
শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে সামরিক শৃঙ্খলা অভিযান Oct 18, 2025
img
এবার বিমানবন্দরের সামনে মোটরসাইকেলে আগুন Oct 18, 2025
img
অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদের বাসভবনে জামায়াতের আমির Oct 18, 2025
img
বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের বিবৃতি Oct 18, 2025
img
নিরাপত্তার চাদরে মোড়া উত্তরা, ৫ হাজারেরও বেশি পুলিশ মোতায়েন Oct 18, 2025