ওয়াদা ভঙ্গ করলে আবারও গণঅভ্যুত্থান হবে : ব্যারিস্টার ফুয়াদ

রাজনৈতিক দলগুলো যেসব সংস্কারের বিষয়ে একমত হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের ওয়াদা ভঙ্গ করলে আগামী দিনে আবারও গণঅভ্যুত্থান হবে বলে সতর্ক করেছেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।

তিনি বলেন, যদি আমরা রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ফেইল করি, ওয়াদা না রাখি তাহলে জুলাই সনদের ভিত্তিতে নতুন করে আবার একটি গণঅভ্যুত্থান হবে।

শনিবার (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় রংপুরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে এবি পার্টি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, আগামী দিনে যারা ক্ষমতায় যাবে তাদের মাথায় রাখতে হবে কোনো ‘ব্ল্যাংক চেক’ কোনো রাজনৈতিক দলকে দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি একটি জরিপে এসেছে যে, ৫০ শতাংশ ভোটার কাকে ভোট দেবে সে সিদ্ধান্ত এখনো নেয়নি। কোনো দেশে ৫০ শতাংশ সুইং ভোট (দোদ্যুলমান ভোট) থাকলে যে কোনো দল ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যে কোনো দল ক্ষমতায় যেতে পারে এ বাস্তবতা বাংলাদেশে এখন বিরাজ করছে। সুতরাং আগামী ছয় মাসে বাংলাদেশে একটি নির্বাচনী কারবালা হয়ে যেতে পারে। ’৯১ সালে যারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য, মন্ত্রী হওয়ার জন্য জামাকাপড় ইস্ত্রি করে রেখেছিলেন তারা কিন্তু ক্ষমতায় যাননি।

দেশের মানুষ রাজনৈতিক দলগুলোকে দেখছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যেসব ব্যাপারে একমত হয়েছি তা বাস্তবায়নে যারা ‘ধানাই-ফানাই’ করবে তাদের রাজনীতি আগামী দিনে শেষ হয়ে যাবে। এজন্য এ ব্যাপারে সবাই সচেতন ও ওয়াদাবদ্ধ থাকতে হবে। তা নাহলে জাতি কিছুদিন পর আমাদের মীরজাফর মনে করবে। শেখ হাসিনাকে যা যা গালি দিয়েছি সেগুলো আমাদের দেবে।

এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচিত কিংবা অনির্বাচিত সরকারকে টেনেহিঁচড়ে নামাতে নির্বাচনে জেতার জন্য জোট করার জন্য দুই ইস্যুতে একত্রিত হয়। রাষ্ট্র ও দেশের মানুষের স্বার্থ আলোচনা করতে গত ৫৩ বছরে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা বসেছে এমন কোনো ঘটনা জানি না। ঐকমত্য কমিশন দেশ নিয়ে কথা বলা ও তর্ক করার জন্য সব রাজনৈতিক দলকে একত্রিত করেছে। সংসদেও এত পরিমাণ রাজনৈতিক দল কথা বলেনি।

সংলাপে কতগুলো বিষয়ে ঐকমত্য এসেছে বা আসেনি তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহনশীলতা ও দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন এসেছে।

তিনি বলেন, একেবারে মৌলিক সংস্কার ব্যাপারে আমরা একমত হইনি তা কিন্তু না। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের ব্যাপারে আমরা মোটামুটি একমত হয়েছি, এতে বিএনপির আংশিক দ্বিমত আছে। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, নির্বাচন কমিশন গঠন, দুদক গঠন প্রক্রিয়া, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে আমরা একমত হয়েছি। এই সংলাপ প্রক্রিয়াটি চলমান এবং আলাপ তর্ক-বিতর্ক, একমত-দ্বিমতের মধ্য দিয়ে একটি জাতি জাতি হয়ে ওঠে।

পিআর পদ্ধতি নিয়ে দলের অবস্থান জানিয়ে তিনি বলেন, পিআর পদ্ধতির দাবি ঐতিহাসিকভাবে জামায়াত, চরমোনাই ও কমিউনিস্ট পার্টি অনেকদিন থেকে বলেছে। যেহেতু দেশে গণতন্ত্র ও ভোট ছিল না তাই এর আগে আলোচনায় আসেনি। ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে চলা নির্বাচন পদ্ধতি বাদ দিলে নতুন পদ্ধতি নিয়ে ভোটাররা বিভ্রান্ত হবে। তাই আমরা প্রস্তাব করেছি যে, ২০০ আসনে বর্তমান পদ্ধতিতে এবং ১০০ আসনে ঐকমত্যের ভিত্তিতে পিআর ব্যবস্থা চালু করা। এতে সব রাজনৈতিক দলের সংসদে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে। সরকারি দলকে টেনেহিঁচড়ে ক্ষমতায় থেকে নামানোর রাজনীতি থাকবে না। ২০০ আসনের মধ্যে বিদ্যমান পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে সবচেয়ে বড় দল সরকার গঠন করে ফেলবে তার সেই জন্য সরকার গঠন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে না। আবার সব রাজনৈতিক দলের সংসদে প্রতিনিধিত্ব থাকবে। এর মধ্য দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের সব শক্তি রাজনৈতিক অংশজন হিসেবে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুযোগ পাবে।

সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সংস্কারের সময় নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, যে কাজগুলো করলে নির্বাচন ভালো ও গ্রহণযোগ্য হবে, সে কাজের জন্য পর্যাপ্ত সময় আছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সক্ষমতা ও আন্তরিকতা আছে বলে আমি মনে করি; কিন্তু তারা পারবে কি না তা নিয়ে আমার সংশয় আছে।

তিনি বলেন, গত এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকার অনেক ভালো কাজ করেছে। তবে ব্যর্থতা হলো প্রশাসনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ না থাকা তা স্থানীয় প্রশাসন হোক বা কেন্দ্রীয়। এজন্য রাজস্ব পদ্ধতি সংস্কার করতে চেয়েছিল, পারেনি। সচিবালয়ে সংস্কার চেয়েছিল, আমলাদের সহযোগিতা না থাকায় তা হয়নি। তবে প্রধান উপদেষ্টা যদি বলেন করেই ছাড়ব, তবে তা করতে পারবেন।

সংবাদ সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল বাসেত মারজান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক, লালমনিরহাট-১ আসনের দলীয় প্রার্থী আবু রাইয়ান রসি, রংপুর জেলা কমিটির সদস্য সচিব এনামুল হক, মহানগর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক গোলজার হোসেন, সদস্য সচিব মাহবুবুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এমকে/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
হাসপাতালে ভর্তি বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান Oct 14, 2025
শহীদ মিনারে শিক্ষকদের ঢল, শুরু ‘মার্চ টু সচিবালয় Oct 14, 2025
আর অপেক্ষা নয়; সচিবালয়ের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার ঘোষণা শিক্ষকদের Oct 14, 2025
আন্তর্জাতিক মঞ্চে মেলোনি-এরদোগানের প্রফুল্ল মুহূর্ত Oct 14, 2025
ছাত্রদলের এজিএস প্রার্থীকে স্বতন্ত্র এজিএস প্রার্থীর সমর্থন; যা বললেন এষা Oct 14, 2025
img
বান্দরবান সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে প্রাণ গেল মিয়ানমারের নাগরিকের Oct 14, 2025
img
মুক্তি পেল নাদিমের ‘একটি জোড়া হলুদ পাখী’ Oct 14, 2025
img
সরকার গঠন করবে বিএনপি, তারেক রহমানই হবেন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী: আলতাফ চৌধুরী Oct 14, 2025
img
অগ্নিদুর্ঘটনায় ১৬ জনের মৃত্যুতে তারেক রহমানের শোক Oct 14, 2025
img
মুজিব কোটের আধিপত্য শেষ, ফ্রি দিলেও মানুষ নেয় না : নুর Oct 14, 2025
img
চাকসু নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন এক ভিপি প্রার্থী Oct 14, 2025
img
বাংলাদেশের বিদায়ের দিনে এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে গেল ভারতও Oct 14, 2025
img
‘তারা আমার চুল নাই করে দিয়েছে’, ছবি দেখে ক্ষেপলেন ট্রাম্প Oct 14, 2025
img
রাকসু নির্বাচনের ফল মেনে নেবে শিবির সমর্থিতরা Oct 14, 2025
img
‘জুলাই সনদ’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করবে ৫০০ শিক্ষার্থী Oct 14, 2025
img
হাসিনাসহ ২৬১ আসামিকে আদালতে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির নির্দেশ Oct 14, 2025
img
নবির ব্যাটে রানের ঝড়, বড় সংগ্রহ আফগানদের Oct 14, 2025
img
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েই বিচার বিভাগের সচিবালয় হবে : আইন উপদেষ্টা Oct 14, 2025
img
নতুন বাংলাদেশ রাতারাতি গড়ে উঠবে না: নুরুল হক Oct 14, 2025
img
দুই প্রেসিডেন্টের গোপন আলাপ ধরা পড়লো হট মাইকে Oct 14, 2025