সেনেগালে ভালো স্বামী বানানোর কায়দা শেখাতে পুরুষদের জন্য খোলা হল স্কুল

সেনেগালে শুরু হয়েছে অভিনব উদ্যোগ ‘স্কুল ফর হাজব্যান্ডস’ বা স্বামীদের স্কুল। মূল লক্ষ্য, মাতৃমৃত্যু রোধ ও নারীর স্বাস্থ্যসেবায় পুরুষদের সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত করা। জাতিসংঘের সহায়তায় পরিচালিত এই প্রকল্পে ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে প্রভাবশালী পুরুষরা অংশ নিচ্ছেন, যেখানে শেখানো হচ্ছে ইতিবাচক পুরুষত্ব, লিঙ্গসমতা এবং স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক সচেতনতা।

দেশটির রাজধানী ডাকার শহরের এক বৈঠকে স্থানীয় ইমাম ইব্রাহিমা দিয়ানে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নিজেই বলেছেন, যে পুরুষ তার স্ত্রী ও সন্তানকে সহায়তা করে না, সে একজন ভালো মুসলমান নয়।’ তিনি নিজের সন্তানের গোসল করানো এবং গৃহকর্মে স্ত্রীকে সহায়তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। প্রথমে অনেকে হেসে উড়িয়ে দিলেও পরে অনেকেই বিষয়টি প্রশংসা করেন।

এই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুরুষরা পরে মসজিদের খুতবা ও সামাজিক আলোচনায় নারীর অধিকার, স্বাস্থ্যসেবা, এইচআইভি নিয়ে কুসংস্কার দূরীকরণ, এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরছেন।

সাবেক সেনা কর্মকর্তা ৬০ বছর বয়সী হাবিব দিয়ালো জানান, ‘আমার ছেলের স্ত্রী গর্ভবতী হলে আমি তাকে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করি। খরচ ও অবিশ্বাসের কারণে প্রথমে সে রাজি হয়নি, কিন্তু আমি বোঝাই নিরাপদ প্রসব কতটা জরুরি। পরে সে রাজি হয়।’

২০১১ সালে চালু হওয়া এই প্রকল্প ইতোমধ্যে সেনেগালের নারী, পরিবার, লিঙ্গ ও শিশু সুরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নজর কেড়েছে। মন্ত্রণালয়ের দাবি, এটি মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে ২০টিরও বেশি স্কুলে ৩০০ জনের বেশি পুরুষ প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এর ফলে অনেক এলাকায় জোরপূর্বক বাল্যবিবাহ হ্রাস পেয়েছে, পরিবার পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ বেড়েছে এবং নারীরা সহজে স্বাস্থ্যসেবায় যেতে পারছেন।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে সেনেগালে প্রতি এক লাখ জন্মে ২৩৭ জন মা মারা গেছেন এবং প্রতি এক হাজার নবজাতকের মধ্যে ২১ জন জন্মের প্রথম মাসেই মারা গেছে।

জাতিসংঘের লক্ষ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যু প্রতি এক লাখে ৭০-এ এবং নবজাতক মৃত্যু প্রতি এক হাজারে ১২-এ নামিয়ে আনা।

প্রকল্প সমন্বয়ক এল হাদজ মালিক বলেন, ‘পুরুষদের বোঝানো হচ্ছে, গর্ভাবস্থায় স্ত্রীর যত্ন নেওয়া, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া এবং ঘরের কাজে সহায়তা করা আসলে পুরো পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষা।’

তবে তিনি স্বীকার করেন, মানসিকতার পরিবর্তন এখনও কঠিন। তার ভাষায়, ‘যখন কেবল লিঙ্গসমতা নিয়ে আলোচনা হয়, তখন অনেকেই বিষয়টিকে বিদেশি বা বিমূর্ত মনে করেন। কিন্তু নারীর সুস্থতার অধিকার সামনে আনা হলে, এটি সবার কাছেই মানবিক হয়ে ওঠে।’

পিএ/টিকে 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
অভিনেত্রী চমক দুষলেন রিপন মিয়ার বাবা-মাকে Oct 15, 2025
img
নোমান-আফ্রিদির দুর্দান্ত বোলিংয়ে প্রোটিয়াদের ৯৩ রানে হারাল পাকিস্তান Oct 15, 2025
img
ঊর্ধ্বতন ২ পুলিশ কর্মকর্তাকে দুদক পরিচালক হিসেবে বদলি Oct 15, 2025
img
এবার রিপন মিয়ার কাছে ক্ষমা চান: স্বপন আহমেদ Oct 15, 2025
img
জামায়াতের আমিরের সঙ্গে নরওয়ের রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ Oct 15, 2025
img
ভারতে এসে প্রাণ গেল কেনিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর Oct 15, 2025
img
সিলেটে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ৬৭ জন Oct 15, 2025
img
জরুরি বৈঠক ডেকেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন Oct 15, 2025
img
টানা ম্যাচ জয়ের বিশ্বরেকর্ড গড়ল মরক্কো Oct 15, 2025
img
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করতে সরকার বদ্ধপরিকর : আইন উপদেষ্টা Oct 15, 2025
img
রাজনীতি বা দেশের কিছু বুঝি না: চঞ্চল চৌধুরী Oct 15, 2025
img
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি-আইনজীবীদের মিলনমেলা ১৯ অক্টোবর Oct 15, 2025
img
সৌদিতে হজে যাওয়ার আগে ৪টি টিকা বাধ্যতামূলক ঘোষণা Oct 15, 2025
img
হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তিন মামলায় ৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ Oct 15, 2025
img
নতুন বউকে ঘরে রেখে বাংলাদেশকে একাই হারালেন সামি Oct 15, 2025
img
আর নেই অভিনেতা পঙ্কজ ধীর Oct 15, 2025
img
শিক্ষক-কর্মচারীদের ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব জমা অর্থ মন্ত্রণালয়ে Oct 15, 2025
img
৩ দফা দাবিতে স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল শাহবাগ Oct 15, 2025
img

ওয়ার্ল্ড টেনিস ট্যুর জুনিয়র

ভারতীয় প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠলেন জারিফ Oct 15, 2025
img
নিষ্ঠার ধারাবাহিকতা হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদে সই করবে: আইন উপদেষ্টা Oct 15, 2025