তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা চারটি আবেদনের ওপর আগামী ২৬ আগস্ট শুনানির দিন ধার্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
আজ বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) জামায়াতের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বিচারাধীন রিভিউ আবেদনগুলো শুনানির জন্য উল্লেখ করলে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ শুনানির এই দিন ধার্য করেন।
পরে আইনজীবী শিমির মনির সাংবাদিকদের বলেন, ‘রিভিউ আবেদনটি মেনশন করেছিলাম, যেন দ্রুত শুনানি করা হয়। বিষয়ের গুরুত্ব বিবেচনায় টপ আইটেম হিসেবে আগামী ২৬ আগস্ট শুনানির জন্য রাখা হয়েছে।
অ্যাটর্নি জেনারেলকে এ বিষয়ে নিশ্চিত করা হয়েছে। সব পক্ষকেই ইনফর্ম করা হবে যেন তারা শুনানির জন্য প্রস্তুত থাকেন।’
১৯৯৬ সালে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী আনে বিএনপি সরকার। ওই বছর ২৭ মার্চ সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির প্রবর্তন ঘটে।
এরপর এই পদ্ধতির অধীনে ১৯৯৬ সালে সপ্তম, ২০০১ সালে অষ্টম এবং ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। ২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াতের চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অগণতান্ত্রিক ও সংবিধানবহির্ভূত আখ্যা দিয়ে আইনজীবী এম. সলিমউল্যাহসহ তিন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। শুনানির পর তিন বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট রায় দেন। রায়ে বলা হয়, ত্রয়োদশ সংশোধনী সংবিধানসম্মত ও বৈধ।
এ সংশোধনী সংবিধানের কোনো মৌলিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেনি।
এরপর সংঘাতময় পরিস্থিতিতে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে সেনাবাহিনী। জারি করা হয় জরুরি অবস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়।
ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট। ওই বছর রিট আবেদনকারীরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। ২০১০ সালে আপিল শুনানি শুরু হয়। আপিল বিভাগ এ মামলায় এমিচি কিউরি (আদালতকে সহায়তাকারী) হিসেবে দেশের আটজন সংবিধান বিশেষজ্ঞের বক্তব্য শোনেন। তাঁরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন। এমনকি তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও এর পক্ষে মত দেন। আপিল বিভাগের সাতজন সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতির মতামতের ভিত্তিতে রায়ের জন্য দিন ঠিক হলে ছয় বিচারপতির তিনজনই অ্যামিকাস কিউরিদের পক্ষে একমত হন।
তবে অপর তিন বিচারপতি ভিন্ন মত তুলে ধরেন। এমন পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতি হিসেবে এ বি এম খায়রুল হকের হাতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ছিল। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১১ সালের ১০ মে রায় দেন। পরের বছর সেপ্টেম্বরে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। তখন সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে রায় পরিবর্তনের অভিযোগ ওঠে।
সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়কে আশ্রয় করে দলীয় সরকারের অধীনে পর পর তিনিটি নির্বাচন করে ক্ষমতায় টিকে থাকে শেখ হাসিনা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট তাঁর পতন ঘটে। এরপর আপিল বিভাগের ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত ২৭ আগস্ট রিভিউ (পুনর্বিচেনার) আবেদন করেন বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ ব্যক্তি।
রিভিউ আবেদন করা অন্য চারজন হলেন তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান। এরপর ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় বাতিল চেয়ে গত ১৭ অক্টোবর আবেদন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীও। এ ছাড়া আরো দুটি আবেদন করা হয়। আবেদনগুলোর শুনানি এর আগে পাঁচবার পেছানো হয়।
টিকে/