রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বিদেশ সফরে নিয়ে যান ‘পুপ কেস’, শরীরের বর্জ্য ও রেচন ধারণ করে আনার জন্য। আমরা কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
গোপাল ভাঁড়ের গল্পগাছায় প্রায়ই অশ্লীল ও অশিষ্ট উপাদান চলে আসে। সংস্করণ-ভেদে অশ্লীলতা কখনও বাড়ে, কখনও কমে। চটুল রসিকতা, গ্রাম্য-দোষে সিক্ত বাগ্ধারা ও কথাবার্তা গোপালের গল্পের অন্যতম লক্ষণ। শ্রুতিনির্ভরতার কারণে যেমন গল্পের ন্যারেটিভে নানা বাঁক তৈরি হয়েছে, তেমনই অশ্লীল উপকরণকে নিয়ন্ত্রণ করাও হয়ে উঠেছে দায়। এমনই একটি গল্পের খেই ধরে এগনো যাক।
রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ক্ষুণ্ণ হয়েছেন গোপালের উপর কোনও কারণে। তাকে যথোচিত শাস্তি দিতে ও হেনস্তা করতে তিনি বুদ্ধি আঁটলেন। সভাসদের একাংশকে বললেন, গোপালের বাড়িতে সাতসকালে গিয়ে হাজির হতে ও সেখানে মলত্যাগ করতে। কাজটি রুচিশীল না-হলেও রাজার আদেশ বলে কথা! সভাসদরা গিয়ে তাই হাজির হল সকালে। আর, গোপালকে ঘুম থেকে তুলে বলল, রাজার আদেশটি। শোনামাত্র গোপাল বুঝতে পারে, এটি রাজার কূটবুদ্ধির প্রকাশ। তিনি শায়েস্তা করতে চান গোপালকে। ফলে গোপাল পাল্টা কূটবুদ্ধির প্রয়োগ ঘটায়। সভাসদদের বলে, যে-কাজের জন্য মহারাজা তোমাদের প্রেরণ করেছেন, তা তোমরা বিলক্ষণ সম্পন্ন করতে পারো, তবে খেয়াল রেখো– রাজা তোমাদের বলেছেন মলত্যাগ করতে, কাজেই প্রস্রাব করা চলবে না।
জৈবিকভাবে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের পক্ষে এমন শর্তে সাড়া দেওয়া মুশকিল। ফলে সভাসদরা রাজার আদেশ শেষ পর্যন্ত পালন না-করেই বিদায় নেয়। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রও এমন শক্তিশেলে ঘায়েল হয়ে নিজের আদেশ ফিরিয়ে নেন। কী আর করা যাবে! এই গল্পের সভাসদরা তো কেউ আর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মতো সৌভাগ্যবান নন, যে, শরীরে বর্জ্য ও রেচন পদার্থকে বহন করে আনার মতো সুটকেস উপহার পাবে রাষ্ট্রের তরফে, বা পাবে এমন বডিগার্ড, যাঁরা এ-কাজ করবেন রাজকীয় দায়িত্ব পালনের নিষ্ঠায়।
সম্প্রতি বিশ্ব সচকিত, ভ্লাদিমির পুতিনের ছায়াসঙ্গীদের হাতে ‘পুপ সুটকেস’ বহন করার আভাস পেয়ে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নাকি বিদেশ সফরে গিয়ে এতখানি সচেতন থাকেন, থাকেন এতই ডিসিপ্লিনে মোড়া যে, নিজের শরীরনিঃসৃত বর্জ্য ও রেচন পদার্থ পর্যন্ত বিদেশের মাটিতে ত্যাগ করেন না। সেসব পুনরায় বহন করে আনা হয় রাশিয়ায়। প্রক্রিয়াটি যে জটিল, কিন্তু বিজ্ঞানসম্মত, তা বলে দেওয়ার দরকার নেই। কেন এমন করা হয়? কথিত যে, শরীরের বর্জ্য ও রেচনের জৈব-রাসায়নিক সংশ্লেষ করে একজন মানুষের শরীরের গোপন তথ্যের হালহদিশ পাওয়া সম্ভব, বিশেষত যদি কোনও রোগবালাই থাকে, এবং সেই সূত্রই পুতিন তুলে দিতে চান না অন্যদের হাতে।
পুতিন বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় রাষ্ট্রনায়ক। তিনি ‘বডি ডাব্ল’ নিয়ে ঘোরেন এমন যেমন শোনা যায়, তেমনই শোনা যায়, প্রকৃত পুতিন নাকি ইতোমধ্যে অবসর নিয়েছেন। যাঁকে বা যাঁদের আমরা দেখি ‘পুতিন’ বলে, তিনি বা তাঁরা ‘নকল’। ‘পুপ সুটকেস’ সে-রহস্যে নতুন মাত্রা যোগ করল মাত্র।
পিএ/এসএন