ভারতকে “ট্যারিফের মহারাজা” আখ্যা দিলো ট্রাম্পের উপদেষ্টা

ভারতকে “ট্যারিফের মহারাজা” আখ্যা দিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো ভারতকে এই আখ্যা দিয়ে অভিযোগ করেছেন, রাশিয়ার তেল আমদানি অব্যাহত রেখে নয়াদিল্লি “লাভজনক বাণিজ্য খেলা” চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা অনুযায়ী তা আগামী সপ্তাহ থেকে কার্যকর হবে বলে তিনি আশা করছেন। শুত্রবার (২২ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই কখ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

হোয়াইট হাউসের বাইরে সাংবাদিকদের নঙ্গে কথা বলার সময় নাভারো বলেন, “আমি দেখছি এটি কার্যকর হবে”। সাংবাদিকরা যখন ২৭ আগস্ট থেকে ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শাস্তিমূলক শুল্ক কার্যকর হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, “২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের আগে ভারত কার্যত কোনো রুশ তেলই কিনত না, হয়তো এক শতাংশের মতো। এখন তা বেড়ে ৩৫ শতাংশে পৌঁছেছে। ভারতের এ তেল আসলেই দরকার নেই। এটি এক ধরনের রিফাইনিং লাভ ভাগাভাগির খেলা— ক্রেমলিনের জন্য এক প্রকার মানি লন্ডারিং। সেটাই বাস্তবতা।”

ট্রাম্পের উপদেষ্টা নাভারোর এ তীব্র সমালোচনা এমন এক সময়ে এসেছে যখন ভারত স্পষ্ট করেছে, তারা রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখবে। তবে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ভারত মস্কোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা আবারও জোর দিয়ে বলেছে এবং সম্প্রতি আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সঙ্গে সম্পর্কও কিছুটা মেরামত করার চেষ্টা করছে।

সম্প্রতি মস্কো সফরে মার্কিন সমালোচনার জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বলেছেন, মার্কিন হুমকি দেখে ভারত সরকার বিস্মিত। কারণ, বিশ্ব জ্বালানি বাজার স্থিতিশীল রাখতে রুশ তেল কিনতে নয়াদিল্লিকে বরং ওয়াশিংটনই উৎসাহ দিয়েছিল।

তিনি দাবি করেন, “আমরা এমন একটি দেশ, যাদেরকে আসলে আমেরিকারাই কয়েক বছর ধরে বলেছে, বিশ্ব জ্বালানি বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমাদের সবকিছু করতে হবে, এমনকি রাশিয়ার তেল কেনাও।”

মূলত ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন চালানোর পর থেকে ভারত ব্যাপকভাবে রুশ তেল আমদানি বাড়িয়েছে। তখন জি-৭ দেশগুলো রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের ওপর ৬০ ডলার প্রতি ব্যারেলের মূল্যসীমা আরোপ করেছিল। ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, ভারতের এই কেনাকাটা রাশিয়ার যুদ্ধ অর্থায়নকে সহায়তা করছে। ফলে ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে, যা কোনো দেশের ওপর আরোপিত অন্যতম সর্বোচ্চ শুল্ক হবে।

নাভারো বলেন, ভারতের দাবি যে রুশ তেল তাদের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে প্রয়োজন, তা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, “মোদি একজন বড় নেতা। কিন্তু অনুগ্রহ করে ভারত, বিশ্ব অর্থনীতিতে তোমাদের ভূমিকা দেখো তোমরা। তোমরা এখন শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছ না, বরং যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছ।”

নাভারোর অভিযোগ, ভারত সস্তায় রুশ তেল কিনে তা শোধনাগারে পরিশোধন করে ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার বাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রি করছে। তার ভাষায়, “এটা পুরোপুরি ভারতীয় রিফাইনিং শিল্পের মুনাফাখোরি।”

মস্কোভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাসাটকিন কনসাল্টিং-এর তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার মোট তেল রপ্তানির ৩৭ শতাংশই যাচ্ছে ভারতে।

নাভারো আরও বলেন, “আমাদের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যের ফলে আমেরিকানদের ওপর কী প্রভাব পড়ছে? তারা (ভারত) ট্যারিফের মহারাজা। উচ্চ নন-ট্যারিফ বাধা, বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি— এসব আমেরিকান শ্রমিক ও ব্যবসার ক্ষতি করছে। আর এ অর্থ দিয়েই ভারত রুশ তেল কিনছে, যা রিফাইনারিতে প্রক্রিয়াজাত হচ্ছে। তারপর সেই অর্থ রাশিয়া অস্ত্র বানাতে ব্যবহার করছে, যা দিয়ে ইউক্রেনীয়দের হত্যা করা হচ্ছে। আর আমেরিকান করদাতাদের অর্থে ইউক্রেনকে সহায়তা ও অস্ত্র দিতে হচ্ছে। এটা ভীষণ অযৌক্তিক... ভারত এই রক্তপাতের ক্ষেত্রে নিজের ভূমিকা স্বীকার করছে না।”

হোয়াইট হাউসের এ বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও অভিযোগ করেন, ভারত চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করছে।

প্রসঙ্গত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যে দ্বিগুণ শুল্ক আরোপ করেছেন— যার হার এখন ৫০ শতাংশ। এর মধ্যে রুশ তেল কেনার কারণে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক ধরা হয়েছে। আর এর জেরে ভারতের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কে টানাপোড়েন সম্প্রতি আরও বেড়েছে।

তবে রুশ তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হওয়া সত্ত্বেও চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ভারত তুলনামূলক সস্তায় রুশ তেল কিনতে শুরু করে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভারতের মোট তেল আমদানিতে রাশিয়ার অংশ ছিল মাত্র ১.৭ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫.১ শতাংশে। বর্তমানে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় তেল আমদানিকারক দেশ হচ্ছে ভারত।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আহান পান্ডে ও অনীত পড্ডাকে ঘিরে প্রেমের গুঞ্জন Oct 14, 2025
এমবাপে প্রকাশ করলেন রোনালদোর প্রতি অনুরাগ Oct 14, 2025
img
সেফ এক্সিট কারা চাইছেন, তালিকা প্রকাশ করবে এনসিপি Oct 14, 2025
img
চাঁপাইনবাবগঞ্জে মাদকসহ যুবক গ্রেপ্তার Oct 14, 2025
img
রাতে হঠাৎ মার্কিন দূতাবাসের নিরাপত্তা জোরদার Oct 14, 2025
img
চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হবে ১৮ নভেম্বর Oct 14, 2025
img
জেন-জি বিক্ষোভের মুখে হেলিকপ্টারে পালালেন মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট Oct 14, 2025
img
মিসরের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘অর্ডার অব দ্য নাইল’ পেলেন ট্রাম্প Oct 14, 2025
img
নেইমারের জন্য এখনও দরজা খোলা রেখেছেন কার্লো আনচেলত্তি Oct 14, 2025
img
ইতিহাস গড়ে ফুটবল বিশ্বকাপের টিকিট পেল কেপ ভার্দে Oct 14, 2025
img
নোবেল শান্তি পুরস্কারে এখনও সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী ট্রাম্প : শাহবাজ Oct 14, 2025
img
জয়পুরহাট জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কের পদত্যাগ Oct 14, 2025
img
জামায়াত নির্বাচনে জয়ী হলে জনগণের মালিক নয়, সেবক হবে : ডা. শফিকুর Oct 14, 2025
img
ঝালকাঠি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কেকার নিথর দেহ উদ্ধার Oct 14, 2025
img
রোমে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক Oct 14, 2025
img
৩ বিভাগের সংঘর্ষে উত্তাল রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, আহত ১০ শিক্ষার্থী Oct 13, 2025
img
মিশরে বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে গাজা শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর Oct 13, 2025
img
ইসরায়েল থেকে ১৯৬৮ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি, ‘মাইলফলক’ বলল হামাস Oct 13, 2025
img
বিয়ের পর স্বামীর কাছে তনীর আবদার Oct 13, 2025
img
বাংলাদেশের মাথাপিছু জলবায়ু ঋণ ৮০ ডলার Oct 13, 2025