যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের জরিমানা বাতিল করেছে নিউইয়র্কের আপিল আদালত। গত বছর জালিয়াতির অভিযোগে তাকে এই অর্থ পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
সুবিধাজনক ঋণ পাওয়ার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের সম্পত্তির মূল্য বাড়িয়ে দেখানোয় বিচারক আর্থার এনগোরন ট্রাম্পকে এই অর্থ পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত দীর্ঘ রায়ে নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ জানায়, ট্রাম্প জালিয়াতির জন্য দায়ী হলেও এত বড় অঙ্কের জরিমানা অতিরিক্ত। একইসাথে তা সম্ভবত কঠোর শাস্তির বিরুদ্ধে সাংবিধানিক সুরক্ষা লঙ্ঘন করেছে।
মামলার রায়ে বিচারক এনগোরন তাকে প্রথমে ৩৫৫ মিলিয়ন ডলার জরিমানা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছিলেন, তবে সুদসহ তা বেড়ে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি দাঁড়ায়। বিচারপতি পিটার মলটন লিখেছেন, “ক্ষতি অবশ্যই হয়েছে, কিন্তু তা এত ভয়াবহ ছিল না যে প্রায় অর্ধ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।”
রায় ঘোষণার পর ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ একে “সম্পূর্ণ বিজয়” বলে দাবি করেন। তিনি লিখেছেন, “পুরো নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যজুড়ে ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা এই বেআইনি এবং লজ্জাজনক সিদ্ধান্তটি বাতিলের সাহস দেখানোকে আমি খুবই সম্মান করি।”
তিনি আরও বলেন, “ব্যবসায়িক দিক থেকে এটি এমন এক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার ছিল যা আগে কেউ কখনো দেখেনি।”
অন্যদিকে ট্রাম্পের জালিয়াতির দায় এবং আর্থিক ছাড়া অন্য শাস্তিগুলো বহাল থাকায় মামলা দায়ের করা নিউইয়র্ক অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসও এ রায়কে আংশিক বিজয় হিসেবে দেখছে। তারা জরিমানা বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অঙ্গরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত কোর্ট অব আপিলের আবেদন করার কথা ভাবছে।
অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ডোনাল্ড ট্রাম্প, তার প্রতিষ্ঠান এবং তার দুই সন্তান জালিয়াতির জন্য দায়ী” থাকার বিষয়গুলো আদালত নিশ্চিত করেছে। এতে আরও বলা হয়েছে, “ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না— আরও একটি আদালত প্রেসিডেন্টের আইন ভাঙার এবং আমাদের মামলার শক্ত ভিত্তির পক্ষে রায় দিয়েছে।”
ট্রাম্প, তার দুই সন্তান এবং ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের বিরুদ্ধে করা মামলায় ট্রাম্পকে তিন বছরের জন্য নিউইয়র্কে কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে কাজ করা বা ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া নিষিদ্ধ করেছিলেন বিচারক এনগোরন।
বৃহস্পতিবারের রায়েও এ ধরনের অ-আর্থিক শাস্তিগুলো বহাল রয়েছে। ৩২৩ পৃষ্ঠার রায়ে পাঁচ বিচারকদের মধ্যকার মতবিরোধও উঠে এসেছে। অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমসের আনা মামলার বৈধতা নিয়ে তাদের ভিন্নমত ছিল।
ট্রাম্প আর তার ছেলেদের বিরুদ্ধে “ক্রমাগত এবং বারবার জালিয়াতির” অভিযোগ আনেন অ্যাটর্নি জেনারেল। কয়েকজন বিচারক মনে করেছেন তিনি তার আইনি ক্ষমতার ভেতরে থেকে মামলা করেছেন। তবে একজন বিচারক মামলা খারিজ করার পক্ষে ছিলেন এবং দুইজন মনে করেছেন সীমিত পরিসরে নতুন বিচার হওয়া উচিত।
তবে “চূড়ান্ত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করার স্বার্থে” তারা দুজনও জরিমানা বাতিলের সিদ্ধান্তে সম্মত হন বলে রায়ে উল্লেখ করেছেন বিচারক মলটন। তিনি আরও লিখেছেন, আমেরিকার ভোটাররা ইতোমধ্যেই ট্রাম্পের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে রায় দিয়ে ফেলেছেন, আর এই রায়ে সর্বসম্মতভাবে তার ব্যবসা ধ্বংসের প্রচেষ্টা থামানো হলো।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিচারক এনগোরন তার দেওয়া রায়ে ট্রাম্পকে ব্যবসায়িক জালিয়াতির জন্য দায়ী করেছিলেন। ট্রাম্প তার সম্পদকে শত শত মিলিয়ন ডলার বেশি দেখিয়েছিলেন বলে এতে উল্লেখ করা হয়।
শাস্তির পরিমাণ নির্ধারণের জন্য ২০২৪ সালে আরেকটি বিচার হয়। এক পর্যায়ে বিচারক দেখতে পান, আর্থিক বিবৃতিতে ভুলভাবে ট্রাম্পের ট্রাম্প টাওয়ার পেন্টহাউসকে আসল আকারের প্রায় তিনগুণ দাবি করা হয়েছিল।
বিবিসি বাংলা
এসএন