একসময় উদীয়মান ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ছিলেন মাইকেল বুলোস। বর্তমানে তিনি মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ে টিফানি ট্রাম্পের স্বামী। ২০২১ সালে কলেজ জীবন শেষ করার পর হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে হাঁটু গেড়ে টিফানিকে বিয়ের প্রস্তাব দেন বুলোস। সেই প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পরই বদলে যায় তাঁর ভাগ্য।
বিয়ের মাধ্যমে ট্রাম্প পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার হওয়ার পর থেকে নানা আর্থিক সুবিধা পেতে শুরু করেন বুলোস ও তাঁর স্বজনরা। নিউ ইয়র্ক টাইমসের হাতে আসা চুক্তিপত্র, আদালতের নথি ও খুদেবার্তা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রথম ঘটনাটি ঘটে পারিবারিক পরিসরে। মাইকেল বুলোস তাঁর চাচাতো ভাইয়ের একটি ইয়ট ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। সে সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ে ইভাঙ্কার স্বামী জ্যারেড কুশনারকে একটি সুপারইয়টে বিনিয়োগে রাজি করান। কিন্তু আসল দাম গোপন করে অতিরিক্ত প্রায় ২৫ লাখ ডলার আদায় করা হয়। পরবর্তীতে প্রমাণ হিসেবে পাওয়া খুদেবার্তা ও এক আইনজীবীর নথিতে এ তথ্য নিশ্চিত হয়।
আরেক ঘটনায় বুলোসের চাচাতো ভাই জিমি ফ্রাঙ্গি সৌদি এক ব্যবসায়ীকে প্রলোভন দেখান টিফানি ও বুলোসের বিয়েতে আমন্ত্রণ পাওয়ার। এমনকি ট্রাম্প পরিবারের সঙ্গে ছবি তোলার সুযোগের কথাও বলেন তিনি। বিনিময়ে ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ নেওয়া হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত সেই ব্যবসায়ী আমন্ত্রণ পাননি।
প্রমাণ হিসেবে পাওয়া বার্তাগুলোতে দেখা যায়, এই ঘটনায় বুলোস প্রায় ১ লাখ ডলার এবং ইয়ট বিক্রির মাধ্যমে আরও ৩ লাখ ডলার লাভবান হন। তবে বুলোস দাবি করেন, তিনি কেবল চুক্তি অনুযায়ী একটি ‘ফাইন্ডারস ফি’ পেয়েছিলেন এবং প্রতারণার সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা নেই।
টিফানি ট্রাম্পের সঙ্গে বিয়ের পর বুলোস পরিবারের প্রভাব ক্রমেই বাড়তে থাকে। ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো গলফ ক্লাবে আয়োজিত জমকালো বিয়ের পর মাইকেলের বাবা মাসাদ বুলোসকে ট্রাম্প নিজ নির্বাচনী প্রচারণার মুখপাত্র করেন। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প জয়ী হলে মাসাদ বুলোস যুক্তরাষ্ট্র সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পান প্রথমে মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক উপদেষ্টা, পরে স্টেট ডিপার্টমেন্টের আফ্রিকাবিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবে।
তবে মাসাদ বুলোসকে ‘প্রভাবশালী ব্যবসায়ী’ হিসেবে তুলে ধরা হলেও তাঁর প্রকৃত সম্পদ বা ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের তেমন প্রমাণ নেই। জানা গেছে, নাইজেরিয়ায় একটি ট্রাক কোম্পানিতে তাঁর শেয়ারের মূল্য ২ ডলারেরও কম।
ক্ষমতার কাছাকাছি পৌঁছানোয় বুলোস পরিবারের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরাও সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা শুরু করেন। প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে বুলোস পরিবারের বন্ধু ও ব্যবসায়ী হাবিব সাইদি মার-এ-লাগোতে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তিনি সৌদি সম্পর্কিত এক মার্কিন ফাইন্যান্সারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে মধ্যপ্রাচ্যে নির্মাণ প্রকল্পে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেন।
টিফানি ট্রাম্পকে বিয়ের প্রস্তাবের পর থেকেই মাইকেল বুলোস ও তাঁর পরিবার আর্থিক ও রাজনৈতিকভাবে লাভবান হতে শুরু করে।