জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা দাবি করেছেন, তাকে নিয়ে ধারাবাহিকভাবে অনেক মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এসব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে বরং কাজে মনোযোগ দিতে বদ্ধপরিকর।
শুক্রবার (২২ আগস্ট) রাতে নিজের ভেরিফায়েড পেজে দেওয়া এক ফেসবুক পোস্টে তিনি এ কথা লিখেছেন।
তাসনিম জারা লিখেছেন, ‘সত্যটা তুলে না ধরলে মিথ্যা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ পায়। তাই কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট করা প্রয়োজন মনে করছি। আমি নেপালে গিয়েছিলাম নেপাল সরকারের আমন্ত্রণে নিরাপদ বাতাস (clean air) নিয়ে কথা বলতে। আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর দূষিত বাতাস কীভাবে প্রভাব ফেলছে, সেটা ছিলো আমার বক্তব্যের বিষয়। এ প্রোগ্রামে যাওয়ার জন্য নেপালের অ্যাম্বাসি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন প্রায় দুই মাস আগে (২ জুলাই)।’
‘নেপালে আমার সঙ্গে আমেরিকার কোনো অফিশিয়ালের কোনো ধরনের যোগাযোগ হয়নি, মিটিং তো দূরের কথা। অথচ ভারতের একটি পোর্টাল থেকে গুজব ছড়ানো হয় যে আমি নেপালে গিয়ে এক আমেরিকান অফিশিয়ালের সঙ্গে ব্রেকফাস্ট মিটিং করেছি এবং দাবি করা হয় যে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা তাদেরকে এই তথ্য দিয়েছে। এই সংবাদ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও কাল্পনিক।’
এনসিপি নেতাদের কক্সবাজার সফর নিয়ে সৃষ্টি হওয়া ধূম্রজালের কথা উল্লেখ করে এই এনসিপি নেত্রী লিখেছেন, ‘এই মাসেই আমাকে নিয়ে মিথ্যা সংবাদ ছড়ানো হয়েছিল যে আমি আমেরিকার সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক করছি কক্সবাজারে। পরবর্তীতে যে মিডিয়া এটি প্রচার করেছিল তারাই স্বীকার করে নেয় যে এটি মিথ্যা ছিল এবং তারা দুঃখ প্রকাশ করে জানায়, গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্যে ভরসা করেই তারা এই মিথ্যা সংবাদটি ছড়িয়েছিল।’
এছাড়া এনসিপি নেতাদের মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক নিয়েও একটি মহল ষড়যন্ত্র করেছে দাবি করেছেন তাসনিম জারা, ‘১১ আগস্ট আমাদের পার্টির একটি বৈঠক হয় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে। সেই বৈঠকে আমাদের পার্টির আহ্বায়ক, সদস্যসচিব, আমি ও একজন যুগ্ম সদস্যসচিব যোগদান করেন। এটি কোনো গোপন বৈঠক ছিল না। আমরাই প্রেস রিলিজের মাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশ করি। জুলাই ও আগস্টে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গেও একই ধরনের বৈঠক করেছেন। অর্থাৎ এটি ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত কূটনৈতিক কার্যক্রমের অংশ।’
‘কিন্তু আমাদের বৈঠকের সময় একটি সংবাদমাধ্যম গোয়েন্দাদের দেওয়া একটি ছবি প্রকাশ করে, যেটি আমার পেছন থেকে তোলা, দেখে মনে হবে আমি নাকি গোপন কিছু করতে যাচ্ছি। অথচ বিএনপি বা জামায়াতের বৈঠকের ক্ষেত্রে তারা এমন কিছু করেনি। প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থার কাজ কি দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নাকি মিডিয়ার ফটোগ্রাফারের ভূমিকা পালন করা ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে কুৎসা রটানো?’
রাজনীতিতে নতুন শক্তির উত্থানপর্বে এমন ষড়যন্ত্র হয় উল্লেখ করে তিনি যোগ করেন, ‘জুলাই ও আগস্ট মাসে অন্তত তিনবার একই ধরনের মিথ্যা প্রচার করা হয়েছে। তিনটা ক্ষেত্রেই গোয়েন্দা সংস্থা উৎস হিসেবে এসেছে।
আর এসব নিউজ ছড়ানোর ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রাখছেন আওয়ামী স্বার্থসংশ্লিষ্ট মিডিয়া। তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট: একই মিথ্যা বারবার বলে তা সত্যে পরিণত করার চেষ্টা। রাজনীতিতে পারসেপশন বাস্তবতার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। তাই মিথ্যা দিয়েও আমাকে বিদেশি শক্তির এজেন্ট হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা চলছে। এটি নতুন কিছু নয়। রাজনীতিতে বিশ্বাসযোগ্য কোনো কণ্ঠস্বর উঠে এলে তাকে বিদেশি ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িয়ে দুর্বল করার চেষ্টা করা হয়।’
পোস্টের শেষভাগে হুঙ্কার ছুঁড়ে দিয়ে তাসনিম জারা লিখেছেন, ‘এসব মিথ্যায় আমাকে দমানো যাবে না। আমি আমার কাজে তথা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সচেষ্ট থাকবো। আশা করছি, আপনারাও আমার সাথে থাকবেন। শেষ পর্যন্ত সত্যই টিকে থাকবে, মিথ্যা ধ্বংস হবে। আর এটাই সুনিশ্চিত।’
কেএন/টিএ