জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (জাকসু) নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমাদানের সময় শেষ হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ও ইসলামী ছাত্রশিবির তাদের প্যানেল ঘোষণা করেছে। শাখা ছাত্রদলও প্যানেল চূড়ান্ত করেছে বলে জানা গেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো প্যানেল ঘোষণা করতে পারেনি বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো। ফলে কর্মী সংকটের কারণেই বামপন্থী সংগঠনগুলো প্যানেল ঘোষণা করতে পারছেনা বলে গুঞ্জন উঠেছে ক্যাম্পাসজুড়ে। তবে সূত্র বলছে, প্যানেল ঘোষণা করতে এই সংগঠনগুলোর নেতারা টিএসসির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর দারস্থ হয়েছেন। এই সংগঠনগুলোতে থাকা শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্যানেল গঠনের জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বর্তমানে তিনটি বামপন্থী রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন সক্রিয় রয়েছে। এগুলো হলো- বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী। এর মধ্যে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফ্রন্ট দুইটি ভাগে বিভক্ত। অর্থাৎ এক সংগঠন দুই কমিটি। ছাত্র ইউনিয়নের দুইটি অংশের কমিটি থাকলেও, ছাত্র ফ্রন্ট ও ছাত্র মৈত্রীর কোনো কার্যকর কমিটি নেই। নিজেদের সংগঠক বলে পরিচয় দেন এই দুই ব্যানারের নেতাকর্মীরা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, হাতেগোনা কয়েকজন কর্মীর ওপর ভর করে চলছে এসব সংগঠন। ছাত্র ইউনিয়নের কিছুসংখ্যক কর্মী থাকলেও, ছাত্র ফ্রন্ট ও মৈত্রীর অবস্থা বেশ নাজুক। সংগঠনগুলোর নিজস্ব ব্যানারে তেমন একটা কার্যক্রমও চোখে পড়ে না। কদাচিৎ মিছিল বা মানববন্ধনে সদস্য সংখ্যা সাত থেকে ২৫ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। তাতেও অনেক সময় তিনটি সংগঠনের নেতাকর্মীদের অনেককে একসাথে মিলে কোনো মিছিল বা মানববন্ধন করতে দেখা যায়।
এদিকে, জাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যখন অন্যান্য সংগঠনগুলো একে একে প্যানেল ঘোষণা করছে, তখন বাম সংগঠনগুলোর নীরবতা নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ডে আগের মতো আর আস্থা রাখছেন না শিক্ষার্থীরা। তাদের মতে, নেতাকর্মীদের নৈতিক স্খলন, মাদকাসক্তি, এবং রাজনৈতিক দ্বিচারিতার কারণে সংগঠনগুলো জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে তিন-চারটি সংগঠন মিলে একসাথে থেকেও তারা এখন প্যানেল ঘোষণায় সক্ষমতা দেখাতে পারছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী রবিউর রহমান রবি বলেন, বামপন্থীরা নিজেদের আদর্শবাদী বলে মনে করলেও তাদের অনেক আদর্শ বাস্তবতা থেকে বিচ্যুত। সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ আচরণগত সমস্যা, গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব ও নেতৃত্ব সংকট- সব মিলিয়ে তা আদর্শের আড়ালে এক ধরনের ‘ক্ষমতার লড়াই’ বলেই প্রতীয়মান হয়। তারা নেতিবাচক সমালোচনায় আটকে থাকে, বক্তৃতা ও মিছিলে ঘুরপাক খায়, কিন্তু ডিজিটাল যুগের সঙ্গে নিজেদের সংযোগ স্থাপন করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, চরমপন্থী মনোভাব ও একপাক্ষিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সংলাপের পরিবেশও নষ্ট হয়। অনেক নেতাকর্মীর মাদকাসক্তি, ধর্ম বিষয়ে অসচেতনতা এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনুভূতির প্রতি সেনসেটিভ আচরণ—এসব কারণেই শিক্ষার্থীরা তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। কখনো কখনো উগ্র মতবাদ বাস্তবায়নের চেষ্টা করতে গিয়ে তারা ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্যও দেয়, যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই অগ্রহণযোগ্য। এছাড়া চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে, ফ্যাসিবাদ বিরোধিতার নামে উল্টো তারই সহযোগী হয়ে উঠেছে তারা। সব মিলিয়ে, এসব কারণেই বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা বর্তমান সময়ের তথাকথিত বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোকে পছন্দ করছে না।
তবে এ বিষয়ে সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা ভিন্ন ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সংগঠক বলে পরিচয় দেয়া নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগি সামিয়া জানান, আমরা দ্রুতই প্যানেল ঘোষণা করবো। কয়েকটি সংগঠনের সাথে মিলে প্যানেল গঠনের চেষ্টা করছি। সেটি সম্ভব হলে দ্রুতই জানাবো।
ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক ফাইজান আহমেদ অর্ক বলেন, আমরা রোববার প্যানেল প্রকাশ করব। এ বিষয়ে এখন কিছুই বলতে চাইনা। কর্মী সংকট নয় বরং অনেক বেশি অপশনের কারনে সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগছে।
ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ইমন জানান, আমরা একটি ইনক্লুসিভ প্যানেল তৈরির চেষ্টা করছি। নেতাকর্মীর সংকট নেই।
কেএন/টিএ