গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুরে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত মওলানা ভাসানী সেতুর ল্যাম্পপোস্টের ৩১০ মিটার বৈদ্যুতিক তার চুরির মাত্র একদিন পরই এবার রিফ্লেক্টর লাইট চুরি হয়েছে। গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে এ চুরির ঘটনা ঘটলেও আজ রোববার (২৪ আগস্ট) দুপুরে বিষয়টি জানতে পারে সেতু কর্তৃপক্ষ।
বৈদ্যুতিক তার ও রিফ্লেক্টর লাইট চুরির ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সামাজিকমাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠেছে। পরপর চুরির ঘটনায় সেতু এলাকায় নিরাপত্তাহীনতার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গাফিলতিকেই দায়ী করছেন এলকাবাসী।
চুরির বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী জানান, রিফ্লেক্টর লাইট চুরির বিষয়টি সম্প্রতি জানতে পেরেছেন এবং স্থানীয় পুলিশকে মৌখিকভাবে অবহিত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সেতুর ল্যাম্পপোস্টের বৈদ্যুতিক তার চুরির বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ থানায় ইতোমধ্যেই একটি মামলা করা হয়েছে। দুষ্কৃতকারীদের ধরতে পুলিশ চেষ্টা করছে এবং নতুন করে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কাজ চলছে।
এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাকিম আজাদ বলেন, চুরির ঘটনা গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। চোর চক্র শনাক্তের চেষ্টা অব্যাহত আছে। এ ছাড়াও যানজট নিরসন ও সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করতেও পুলিশ কাজ করছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ ৯২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দীর্ঘ এই সেতু ও সংযোগ সড়কে ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী ও যানবাহন সেতু দিয়ে চলাচল করছে, আর দর্শনার্থীর সংখ্যাও কম নয়। তবে সন্ধ্যা হলেই পুরো সেতু এবং দুই পারের কয়েক কিলোমিটার সংযোগ সড়ক অন্ধকারে ঢেকে যায়।
স্থানীয়রা আরও বলেন, দুই পাশে নিয়মিত পুলিশ থাকলেও রাতে কেউ থাকে না। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা, চুরি, ছিনতাই এবং ডাকাতির মতো ঘটনা ঘটতে পারে।
এর আগে সেতুর ল্যাম্পপোস্টের বৈদ্যুতিক তার চুরির ঘটনায় নুরে আলম নামে সিকিউরিটি ইনচার্জ বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে সুন্দরগঞ্জ থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রায় ৫ লাখ ২০ হাজার টাকার বৈদ্যুতিক তার চুরির উল্লেখ আছে।
এদিকে, সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, দক্ষিণ পাশের সংযোগ সড়কের উভয় পাশে থাকা ৮টি লাইটপোস্টের প্রায় ৩১০ মিটার তার মাটি খুঁড়ে কেটে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। ১৩ জুন পরীক্ষামূলকভাবে সব লাইট জ্বালানো হলেও পরে আলো জ্বলে না। এমনকি উদ্বোধনের রাতেও লাইট জ্বলেনি। পরদিন চায়না সাসেক প্রকল্পের কর্মীরা মাটি খুঁড়ে তার চুরির ঘটনা শনাক্ত করেন।
প্রসঙ্গত, গত ২০ আগস্ট উদ্বোধন করা হয় মওলানা ভাসানী সেতুটি। ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ ও ৯.৬ মিটার প্রস্থের এই সেতুর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯২৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সরকার (জিওবি), সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ওফিড) অর্থায়নে এলজিইডি বাস্তবায়নে সেতুটি নির্মিত হয়েছে। সেতুতে ৩১টি স্প্যান রয়েছে। সংযোগ সড়ক ও নদীশাসনসহ প্রকল্পে প্রায় ১৩৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সেতুর উভয় পাশে সংযোগ সড়ক ৮৬ কিলোমিটার।
দীর্ঘ প্রত্যাশীত এই সেতুটি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ঘাট থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলাকে সংযুক্ত করেছে। এর ফলে কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকার দূরত্ব প্রায় ১৩৫ কিলোমিটার কমবে এবং সময় সাশ্রয় হবে ৩.৫–৪ ঘণ্টা। সেতুটি দুই জেলার জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের অর্থনৈতিক চিত্র পরিবর্তন করবে।
ইউটি/টিএ