গাজা যুদ্ধে কিছু সামরিক সফলতা পেলেও, দীর্ঘমেয়াদে ইসরাইলকে কূটনৈতিকভাবে একঘরে করে ফেলার পথে হাঁটছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গাজাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার প্রচেষ্টায় পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন হারাচ্ছে তেল আবিব।
শনিবার (২৩ আগস্ট) রুশ গণমাধ্যম আরটির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
জোরগলায় পশ্চিমা সমর্থনের বাণী শুনিয়ে গত দুই বছরে গাজায় নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে আসছে ইসরাইল। প্রাথমিকভাবে হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলাকে কেন্দ্র করে তেল আবিবের পক্ষে ব্যাপক জনসমর্থন গড়ে ওঠে পশ্চিমা বিশ্বে। তবে, বছর গড়াতেই পরিবর্তন হতে থাকে ইসরাইলের কূটনৈতিক অবস্থান। বিপরীতে, ফিলিস্তিনিদের পক্ষে জনমত গড়ে ওঠে।
স্পেন, নরওয়ে, আয়ারল্যান্ডসহ অন্তত ১৫টি পশ্চিমা দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা দেয় এবং গাজাকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অধীনে আনার ‘ভবিষ্যৎ মডেল’ প্রস্তাব তোলে।
অপরদিকে, গাজার মানবিক বিপর্যয় বাড়তে থাকায় ২০২৪ থেকে পশ্চিমা দেশগুলো খোলাখুলি নেতানিয়াহুর সমালোচনায় নামে। লন্ডন মুক্ত বাণিজ্য আলোচনায় বিরতি দেয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক ঝুলিয়ে রাখার হুঁশিয়ারি দেয়। আর ফ্রান্স ইতিহাস গড়ে প্রথম জি৭ দেশ হিসেবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা দেয়া।
পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। তবে, এতেও দমানো যায়নি নেতানিয়াহুকে।
ইউরোপীয় নেতাদের বিরুদ্ধে তিনি সন্ত্রাসবাদে মদদ জোগানোর অভিযোগ তোলেন।
মানবিক সংকট আরও প্রকট হয় ২০২৫ সালের মার্চে, যখন ইসরাইলের প্রায় পূর্ণ অবরোধে গাজায় খাদ্য ও ওষুধের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। পশ্চিমা গণমাধ্যম তখন সরাসরি ইসরাইলকেই দুর্ভিক্ষের জন্য দায়ী করা শুরু করে। এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপে তীব্র ক্ষোভ দেখান। বলেন, খাদ্য সরবরাহ চালুর বিষয়ে অস্বীকার শুনতে চান না তিনি।
তবে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে ইউরোপ এখনও পিছপা হওয়ায় নেতানিয়াহু পশ্চিমা চাপকে কেবল কথার খাতায় সীমিত ধরে নিয়েছেন বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। তাদের মতে নেতানিয়াহুর ধারণা, ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত তাকে ত্যাগ করবেন না। যদিও যুদ্ধ যত গভীর হচ্ছে, ইসরাইল কূটনৈতিকভাবে ততোটাই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছে।
এ অবস্থায় বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজায় যুদ্ধে সামরিকভাবে কিছু কৌশলগত সাফল্য মিললেও, কূটনৈতিকভাবে নেতানিয়াহু দেশকে এমন এক কোণঠাসা ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন, যেখানে শর্তহীন সমর্থন পাওয়া আর সম্ভব নাও হতে পারে।
সূত্র: আরটি
পিএ/টিকে