জামিন পেলেন শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট বিক্রমাসিংহে

রাষ্ট্রীয় অর্থ অপব্যবহারের অভিযোগে গ্রেপ্তারের চার দিন পর শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহেকে জামিন দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত।


মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) কলম্বোর একটি আদালত দেশটির সাবেক এই প্রেসিডেন্টকে জামিনের আদেশ দিয়েছেন।


এর আগে, শুক্রবার কলম্বোর অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) দেশটির সাবেক এই প্রেসিডেন্টকে রাষ্ট্রীয় অর্থ অপব্যবহারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বিক্রমাসিংহে রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যবহার করে ব্যক্তিগত সফরে যুক্তরাজ্যে যান বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

কিউবার রাজধানী হাভানায় অনুষ্ঠিত জি-৭৭ সম্মেলন ও নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ থেকে ফেরার পথে লন্ডনে তিনি ব্যক্তিগত সফর করেছিলেন অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে সরকারি তহবিল থেকে ৫৫ হাজার ডলার খরচ করেছিলেন রনিল বিক্রমাসিংহে।

মঙ্গলবার দীর্ঘ শুনানির পর বিক্রমাসিংহেকে মুক্তির নির্দেশ দেন কলম্বোর ফোর্ট ম্যাজিস্ট্রেট নিলুপুলি লঙ্কাপুরা। এ সময় তাকে ৫০ লাখ রুপি (১৬ হাজার ৬০০ মার্কিন ডলার) বন্ডের শর্তে জামিন দেওয়া হয়। আদালতে সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে মামলার শুনানির সময় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। যেকোনও ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আদালত চত্বরে দেশটির বিশেষ বাহিনীর সদস্যদেরও মোতায়েন করা হয়।

মামলার শুনানি ঘিরে মঙ্গলবার সকালের দিকে কলম্বোর আদালতের বাইরে বিক্রমাসিংহের কয়েকশ’ সমর্থক জড়ো হন। এ সময় তারা বিক্রমাসিংহের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন। পরে দেশটির পুলিশের দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণকারী শাখার সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেন।

শুক্রবার গ্রেপ্তারের পর রনিল বিক্রমাসিংহেকে রিমান্ডে পাঠানো হয়। এরপর থেকে তিনি তীব্র পানিশূন্যতায় ভুগছিলেন এবং তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখার প্রয়োজন হয়। সেদিন কলম্বো ন্যাশনাল হাসপাতালের উপ-মহাপরিচালক রুকশান বেল্লানা ফরাসিতিনি বলেছিলেন, গুরুতর জটিলতা ঠেকাতে তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও তীব্র পানিশূন্যতার চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। হাসপাতালে আনার সময় তিনি গুরুতর ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন। তবে বর্তমানে বিক্রমাসিংহের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানান তিনি।

মঙ্গলবার জামিন শুনানিতে বিক্রমাসিংহে ভিডিও লিঙ্কে অংশ নেন। তিনি কলম্বোর ন্যাশনাল হাসপাতালে সশস্ত্র পাহারায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

আদালত এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ২৯ অক্টোবর নির্ধারণ করেছেন।

গত বছরের সেপ্টেম্বরের শ্রীলঙ্কার জাতীয় নির্বাচনে দেশটির বামপন্থি রাজনীতিক অনুরা কুমারা দিসানায়েকের কাছে হেরে যান বিক্রমাসিংহে। এই পরাজয়ের পর নির্বাচিত কোনও পদে না থাকলেও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন তিনি।

দ্বীপ রাষ্ট্রটির ব্যাপক দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অঙ্গীকার নিয়ে দিসানায়েকে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দুর্নীতি দমনকারী বিভিন্ন ইউনিট তদন্ত জোরদার করেছে। ২০২২ সালের ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট থেকে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশটি।

রোববার শ্রীলঙ্কার সাবেক তিন প্রেসিডেন্ট বিক্রমাসিংহের প্রতি সংহতি জানিয়ে তাকে কারাবন্দি করে রাখার ঘটনাকে ‘‘গণতন্ত্রের ওপর পরিকল্পিত আঘাত’’ বলে নিন্দা জানান।

বিক্রমাসিংহের দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি) বলেছে, রনিল বিক্রমাসিংহে আবারও ক্ষমতায় ফিরতে পারেন বলে সরকার ভয় পাচ্ছে। এই কারণেই তাকে গ্রেপ্তার করেছে সরকার।

তবে বিক্রমাসিংহে বরাবরই দাবি করেছেন, যুক্তরাজ্যে ভ্রমণের ব্যয় তিনি নিজেই বহন করেছেন এবং কোনও রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় করা হয়নি। তবে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ অভিযোগ করেছে, বিক্রমাসিংহে ভ্রমণের জন্য ৫০ লাখ রুপি সরকারি অর্থ ব্যবহার করেছেন।

২০২২ সালের জুলাইয়ে অর্থনৈতিক সংকটের জেরে শুরু হওয়া মাসব্যাপী বিক্ষোভের মুখে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন গোটাবায়া রাজাপাকসে। পরে সেই সময় দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন বিক্রমাসিংহে।

২০২৩ সালের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের ঋণ নিশ্চিত করে বিক্রমাসিংহে নেতৃত্বাধীন সরকার। সেই সময় কর হার দ্বিগুণ ও জ্বালানি ভর্তুকি প্রত্যাহার করে দেশটির অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করেন তিনি।

অনুরা কুমারা দিসানায়েকের নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুর্নীতির দায়ে দেশটির সাবেক দুই মন্ত্রীকে সর্বোচ্চ ২৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধেও সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দেশটির আদালতে বিচার চলমান আছে। রাজাপাকসের পরিবারের অনেকে জামিনে মুক্ত আছেন।

সূত্র: এএফপি।

এমআর/এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
গ্যাং লিডার থেকে বিএনপির প্রচারণায়, কে এই বাবলা? Nov 06, 2025
img
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয় জোহরান মামদানির Nov 06, 2025
img
ইয়ামালের দৃষ্টিনন্দন গোলের পরও জয়বঞ্চিত বার্সেলোনা Nov 06, 2025
img
ন্যাটোকে হারানো অসম্ভব, কেউ আক্রমণের সাহস করবে না: রুটে Nov 06, 2025
img
রাশিয়া-চীনকে নিয়ে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে ট্রাম্পের নতুন পরিকল্পনা Nov 06, 2025
img
ঢাকা-১৭ আসনে স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থী কাজী এনায়েত উল্লাহ Nov 06, 2025
img
বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিতদের এনসিপিতে স্বাগত জানালেন হাসনাত আবদুল্লাহ Nov 06, 2025
img
বরিশালে ৩১ কোটি টাকার অবৈধ জাল জব্দ Nov 06, 2025
img
ডিমের সঙ্গে আরো কী খেলে বাড়বে পুষ্টিগুণ Nov 06, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রে কার্গো বিমান বিধ্বস্ত, নিহত বেড়ে ১১ Nov 06, 2025
img
দুর্নীতি ও অনিয়মে তিন প্রতিষ্ঠানে দুদকের অভিযান Nov 06, 2025
img
কাজের চাপ কমাতে ১০ রোগীকে হত্যা, জার্মান নার্সের আমৃত্যু কারাদণ্ড Nov 06, 2025
img
আজ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে ঢাকার আকাশ Nov 06, 2025
img
পরিমিত ক্যাফেইন উপকারী, অতিরিক্ত বিপজ্জনক Nov 06, 2025
img
হাসপাতালে ভর্তি জিতু কামাল Nov 06, 2025
img
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ ১৮৪ অবৈধ অভিবাসী শ্রমিকদের আটক Nov 06, 2025
img
বাস্তববাদী ইশতেহার আর ভিন্নধর্মী প্রচারণায় ভোটারদের মন জয় করেছেন মামদানি Nov 06, 2025
img
মনোজ বাজপেয়ীর শুটিং দিনের কষ্টের গল্প Nov 06, 2025
img
সবাই এখন নিজেকে বিচারক মনে করে: সুনীল শেট্টি Nov 06, 2025
img
জনগণের মতো সেনাবাহিনীও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় Nov 06, 2025