শুল্ক বৃদ্ধির কারণে ভারতীয় পোশাক ও টেক্সটাইল শিল্প হুমকিতে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা ভারতীয় পণ্যে মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। ট্রাম্পের ঘোষিত এই শুল্ক কার্যকর হয়েছে আজ বুধবার (২৭ আগস্ট) থেকে।

আর এই শুল্কের জেরে ভারতের তিনটি বড় শহরের টেক্সটাইল ও পোশাক কারখানাগুলো উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়্যার।

ভারতীয় রপ্তানিকারকদের সংগঠন ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনস (এফআইইও) মঙ্গলবার জানিয়েছে, অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কারণে তিরুপুর, নয়ডা ও সুরাটের টেক্সটাইল ও পোশাক কারখানাগুলো উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। তারা বলেছে, খরচ বাড়ায় প্রতিযোগিতা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে তারা সরকারের অবিলম্বে সহায়তা চেয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় এশিয়ায় ভারত এখন সবচেয়ে বেশি শুল্কের বোঝা বহন করছে।

এফআইইও সভাপতি এস.সি. রালহান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের প্রবাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। তিনি এটিকে বড় ধাক্কা আখ্যা দিয়ে বলেন, ৩০–৩৫ শতাংশ মূল্যহীন অবস্থান তৈরি হওয়ায় ভারতীয় রপ্তানি পণ্য চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ফিলিপাইন ও অন্যান্য দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশের পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না।

তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, ফলে মোট শুল্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশে। এর ফলে পোশাকশিল্প খাতে ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে। ইতোমধ্যেই ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ কম দামের কারণে বাজারে এগিয়ে যাচ্ছে।

সংগঠনের বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের সামুদ্রিক খাদ্য— বিশেষত চিংড়ির ৪০ শতাংশ রপ্তানি হয়। শুল্ক বৃদ্ধির কারণে মজুত ক্ষতি, সরবরাহ ব্যবস্থায় বিপর্যয় এবং চাষিদের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

এছাড়া শ্রমনির্ভর অন্যান্য খাত— যেমন চামড়া, সিরামিক, রাসায়নিক, হস্তশিল্প, কার্পেট ইত্যাদিও তীব্র প্রতিযোগিতার চাপে পড়বে। ইউরোপ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও মেক্সিকোর পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া কঠিন হয়ে উঠবে। রপ্তানি খাত এখন অর্ডার বাতিল, সরবরাহে দেরি আর মূল্য প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার মতো সংকটে পড়ছে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে রপ্তানিকারক সংগঠনের প্রধান সরকারকে সুদ সহায়তা প্রকল্প ও রপ্তানি ঋণ সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, নিম্ন-লাভজনক ও শ্রমনির্ভর পণ্য — যেমন পোশাক, টেক্সটাইল, রত্ন ও গয়না, চিংড়ি, কার্পেট ও আসবাবপত্র — যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অযোগ্য হয়ে পড়তে পারে। এর ফলে নিম্নকুশলী শ্রমিকদের চাকরি মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মুখে পড়বে। ভারত ইতোমধ্যেই বেকারত্ব সংকট, দক্ষ কর্মী ছাঁটাই এবং স্থবির মজুরির চাপে ভুগছে।

আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পণ্য রপ্তানির মূল্য আগের বছরের তুলনায় ৪০-৪৫ শতাংশ কমে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে মোট রপ্তানির দুই-তৃতীয়াংশই ৫০ শতাংশ শুল্কের আওতায় পড়বে, ফলে কয়েকটি খাতে কার্যকর শুল্কহার ৬০ শতাংশেরও বেশি হতে পারে।

গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই) হিসাব করেছে, যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পণ্য রপ্তানি ২০২৪-২৫ সালের প্রায় ৮৭ বিলিয়ন ডলার থেকে এ বছর কমে ৪৯.৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসতে পারে।

দ্য ওয়্যার জানিয়েছে, নতুন শুল্ক কাঠামোয় বোনা ও নিট পোশাক সবচেয়ে বেশি আঘাত পাবে, পাশাপাশি অন্যান্য টেক্সটাইল খাতও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কর বিশেষজ্ঞ বেদ জৈন বলেছেন, “তিন দেশের দ্বন্দ্বে এক দেশ শুধু মধ্যস্থতাকারী হয়েও যদি শুল্কচাপ বহন করে, সেটা কতটা যৌক্তিক?”

এদিকে কূটনীতিকদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, মোদি সরকার ও বিশেষ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে বিষয়টি যথাযথভাবে সামলাতে ব্যর্থ হয়েছেন। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব বিবেক কাটজু বলেছেন, এ বিষয়ে ভারতের জনগণের কাছে সরকারের জবাবদিহি করা উচিত।

এফপি/ এস এন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
৪-৫ জন উপদেষ্টা একটি বিশেষ দলের পক্ষে কাজ করছে: ডা. তাহের Oct 14, 2025
img
রুক্মিণীর নতুন ছবি ‘হাঁটি হাঁটি পা পা’-এ চিরঞ্জিতের আবেগঘন প্রশংসা Oct 14, 2025
img
অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের ‘সেনা আইনে’ বিচার দাবি এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন Oct 14, 2025
img
১৯ অক্টোবরের মধ্যে এনসিপি প্রতীক না নিলে ইসি নিজের মতো সিদ্ধান্ত নেবে Oct 14, 2025
img
ইতালির প্রধানমন্ত্রীকে ‘সুন্দরী’ বললেন ট্রাম্প Oct 14, 2025
img
ক্ষমতা ছাড়বেন মাদুরো : মারিয়া কোরিনা মাচাদো Oct 14, 2025
img
২০ বছর পর বাংলাদেশ-পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠক Oct 14, 2025
নিশ্বাস ধরে ‘পারফেক্ট শট’ দিলেন সামিরা খান মাহি! Oct 14, 2025
img
শেখ হাসিনাকে ফেরাতে রেড নোটিশ জারির পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে: দুদক চেয়ারম্যান Oct 14, 2025
নেটপাড়ায় শিরোনামে তামান্না ভাটিয়া, বিতর্কে অন্নু Oct 14, 2025
'মার্চ টু সচিবালয়' যা বলছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা Oct 14, 2025
কেমন সাড়া পাচ্ছেন রাবিতে ছাত্রশিবিরের প্যানেল? জানালেন ভিপি প্রার্থী Oct 14, 2025
img
সরকার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায়নি : বাণিজ্য উপদেষ্টা Oct 14, 2025
img
টিভিতে দেখাবে না বাংলাদেশ-হংকং চায়না ম্যাচ, দেখা যাবে অনলাইনে Oct 14, 2025
img
ট্রাম্প শান্তির দূত, ফের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করব: শেহবাজ শরিফ Oct 14, 2025
img
বিকেলে জাপানের মুখোমুখি হচ্ছে ব্রাজিল Oct 14, 2025
img
তেহরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি করতে প্রস্তুত ওয়াশিংটন Oct 14, 2025
img
মিরপুরে ২ কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৬ ইউনিট Oct 14, 2025
img
শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে তৃতীয় দিনের যুক্তিতর্ক চলছে Oct 14, 2025
img
কোনো কিছুই ড. ইউনূসের নিয়ন্ত্রণে নেই : কর্নেল অলি Oct 14, 2025