লাদেশ ২০২৬-২৭ মেয়াদের জন্য ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অরগানাইজেশন (আইএমও) কাউন্সিলের ক্যাটেগরি-সি এর সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। আসন্ন এ নির্বাচনে বাংলাদেশের পক্ষে আইএমও এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন চেয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন।
বুধবার (২৭ আগস্ট) রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকদের আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠাতব্য আইএমও কাউন্সিল নির্বাচন বিষয়ে ব্রিফিংকালে এ কথা বলেন তিনি। নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম মেরিটাইম কান্ট্রি উল্লেখ করে নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের মাতারবাড়িতে নির্মাণাধীন একটি গভীর সমুদ্রবন্দর ছাড়াও তিনটি সমুদ্রবন্দর রয়েছে। চুয়ান্নটি অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর দেশের নৌপরিবহন খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ বিভিন্নভাবে মেরিটাইম সেক্টরের ওপর নির্ভরশীল। এছাড়াও বাংলাদেশের তৈরি জাহাজ বিদেশে রফতানি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মেরিটাইম সেক্টরেন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ ভূমিকা রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে দেশের মেরিটাইম সেক্টরকে এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি বৈশ্বিক পর্যায়েও অবদান রাখতে আইএমও’র আসন্ন কাউন্সিল নির্বাচনে সদস্যপদে (ক্যাটেগরি-সি) বাংলাদেশ প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে। এ সময় তিনি এ নির্বাচনে আইএমও-এর বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থন কামনা করেন।
নৌপরিবহন উপদেষ্টা বাংলাদেশের মেরিন অ্যাকাডেমিগুলোতে আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে বিভিন্ন দেশের মেধাবী ও দক্ষ নাবিকদের বাংলাদেশের অ্যাকাডেমিগুলোতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানান।
তিনি কূটনীতিকদের বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় জাহাজশিল্পের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অবহিত করেন। বাংলাদেশের শিপইয়ার্ডগুলোতে বিশ্বমানের জাহাজ নির্মাণ করা হচ্ছে বলেও জানান।
নৌপরিবহন উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশের নাবিকরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জাহাজে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশের নারী নাবিকেরাও অত্যন্ত দক্ষ ও সম্ভাবনাময়।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ কৌশলগতভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অবস্থিত। বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রায় ৯৫ শতাংশই সমুদ্র পথে হয়ে থাকে। ভবিষ্যতে মেরিটাইম সেক্টরকে একটি নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সেক্টরে রূপান্তরিত করতে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। জাহাজ পুনঃব্যবহার খাতে বাংলাদেশ বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তিনি আসন্ন আইএমও নির্বাচনে কূটনীতিকদের বাংলাদেশের পাশে থাকার আহ্বান জানান।
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ও আইএমওতে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি আবিদা ইসলাম বলেন, ভূরাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মেরিটাইম সেক্টরেও বাংলাদেশের শক্তিশালী অংশগ্রহণ রয়েছে। এ সেক্টরের উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক নৌ-সংস্থার (আইএমও) সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মেরিটাইম সেক্টরের বিভিন্ন নীতি নির্ধারণী বিষয়েও বাংলাদেশের ভূমিকা প্রশংসনীয় । বিগত সময়েও বাংলাদেশ আইএমও-এর কাউন্সিল সদস্য নির্বাচিত হয়ে বিশ্বের মেরিটাইম সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সমর্থ হয়েছে। আসন্ন নির্বাচনে বাংলাদেশ নির্বাচিত হলে অতীতের ন্যায় ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ বিশ্বের নিরাপদ সমুদ্র পরিবহন ও আন্ত: মহাদেশীয় নৌবাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব আসাদ আল সিয়াম আসন্ন আইএমও নির্বাচনে বাংলাদেশের পক্ষে কূটনীতিকদের কাজ করার উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ আইএমও ভুক্ত সব সদস্য রাষ্ট্রের মেরিটাইম সেক্টরের উন্নয়নে অঙ্গীকারবদ্ধ। তিনি পরিবেশ সুরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, আইএমও কনভেনশন বাস্তবায়ন, ডিজিটালাইজেশন এবং সমুদ্র দূষণ রোধে বাংলাদেশের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে কূটনীতিকদের অবহিত করেন।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ উপস্থিত কূটনীতিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, প্রতিবছর বাংলাদেশে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জাহাজ আসে। সিনিয়র টেকসই সামুদ্রিক উন্নয়নের প্রতি দেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন এবং আইএমও’র কার্বনমুক্ত ভবিষ্যৎ লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশের দৃঢ় সমর্থনের কথা জানান।
ব্রিফ্রিংএ প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়াসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
ইউটি/টিএ