বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘১৮ মাসে এক কোটি কর্মসংস্থানের যে প্রতিশ্রুতি বিএনপি দিয়েছে, তা কোনো রাজনৈতিক স্লোগান নয় বরং সুপরিকল্পিত, বাস্তবভিত্তিক ও বাস্তবায়নযোগ্য উদ্যোগ। এ লক্ষ্যে আমাদের পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা হোমওয়ার্ক করে, সম্ভাব্যতা বিশ্লেষণ করে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে স্কিল ডেভেলপমেন্ট, উদ্যোক্তা তৈরি, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির জন্য কর্মী প্রস্তুতকরণ এবং সৃজনশীল ও ডিজিটাল খাতগুলোকে এক্সপ্লোর করা।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকার হোটেল সারিনাতে ‘রাউন্ডটেবল অন স্কিলিং বাংলাদেশ : অ্যাডভান্সিং দ্য স্কিলস অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট ইকোসিস্টেম ফর ন্যাশনাল গ্রোথ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এই এক কোটি চাকরির একটি বড় অংশ আত্মকর্মসংস্থানভিত্তিক হবে। আমরা চাই দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে তরুণরা যেন নিজ নিজ দক্ষতা দিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে দেশে কিংবা বিদেশে।’
গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনারশিপ নেটওয়ার্ক আয়োজিত আলোচনায় আমীর খসরু বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য স্কিল ডেভেলপমেন্টই হবে ভবিষ্যতের প্রধান হাতিয়ার। আমাদের তরুণদের উপযুক্ত স্কিল না থাকার কারণে আজ বিদেশি কম্পানিগুলো বাংলাদেশে মাঝারি ও উচ্চ পর্যায়ের নিয়োগে বাইরের জনশক্তির ওপর নির্ভর করছে।’
তিনি বলেন, ‘শুধু প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করলেই স্কিল ডেভেলপমেন্ট হয় না। এর জন্য প্রয়োজন ইউনিভার্সিটি ও ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে কার্যকর সংযোগ, বাস্তবভিত্তিক প্রশিক্ষণ মডেল এবং সঠিক মানদণ্ডে সার্টিফিকেশন।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই কর্মসংস্থানের রোডম্যাপে আত্মকর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে তরুণদের স্কিলিং ও মাইক্রো বিজনেসের মাধ্যমে অর্থনীতিতে যুক্ত করাই হবে মূল কৌশল।’
বিএনপির এই নেতা জানান, বাংলাদেশের অর্থনীতির গঠনগত দুর্বলতা এবং পরিকল্পনাহীন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ফলে দেশ কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি পায়নি। এখন সময় এসেছে স্কিল ডেভেলপমেন্টকে মেইনস্ট্রিমে আনার এবং এটাকে জাতীয় অগ্রাধিকারের জায়গায় স্থান দেওয়ার।
তিনি আরো বলেন, টেকনোলজি এখন বৈশ্বিক কমার্সের কেন্দ্র বিন্দু। বাংলাদেশ যদি প্রযুক্তি ও মানবসম্পদে বিনিয়োগ না করে, তাহলে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে। হস্তশিল্প ও সৃজনশীল খাতেও রয়েছে বিশাল সম্ভাবনা বক্তব্যে আমীর খসরু বলেন, গ্রামীণ হস্তশিল্প, লোকসংগীত, থিয়েটার, ফ্যাশন ডিজাইন, আর্টসহ সৃজনশীল খাতে দেশের প্রচুর জনশক্তি কাজ করছে যাদের মনিটাইজেশনের কোনো প্ল্যাটফরম নেই।
তিনি উল্লেখ করেন, যদি স্কিল ডেভেলপমেন্ট, ডিজাইনিং, ব্র্যান্ডিং এবং মার্কেটিং সাপোর্ট দেওয়া যায় তাহলে এই সেক্টরগুলো বিশাল অর্থনৈতিক রূপান্তর আনতে পারে।
বক্তব্যের শেষাংশে আমীর খসরু দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে বলেন, নির্বাচনের রোডম্যাপ ইতিমধ্যে এসেছে। জনগণ অপেক্ষায় আছে একটি প্রতিনিধিত্বশীল, জবাবদিহিমূলক সরকারের। নির্বাচনের পর একটি বড় ধরনের টার্নঅ্যারাউন্ড আসবে অর্থনীতিতে স্কিল ডেভেলপমেন্ট তার মূল চালিকা শক্তি হবে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সিনিয়র সহকারী প্রেসসচিব আশিক ইসলাম বলেন, ‘গ্লোবাল ভিলেজের অংশীদার হিসেবে গ্লোবালি কী হচ্ছে সেটা আমাদের জানতে হবে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো রেমিট্যান্সের ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করতে যাচ্ছে। তাই আমাদের এখনই এ বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে।’
গোলটেবিল বৈঠকে জাতীয় দক্ষতা ইকোসিস্টেমের দিক, দৃষ্টিভঙ্গি ও চ্যালেঞ্জসমূহ ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে ১০০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স উন্মোচন বিষয়ের ওপর কি নোট তুলে ধরেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার এবং স্কিল ও মাইগ্রেশন বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ নুরুজ্জামান।
এই গোলটেবিল বৈঠকটি বাংলাদেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে। বক্তারা আশা প্রকাশ করেন, এই ধরনের আলোচনা থেকে উঠে আসা সুপারিশগুলো দেশের বেকারত্ব দূরীকরণ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনারশিপ নেটওয়ার্ক (জিইএন) বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য ও নারী উদ্যোক্তা মাহমুদা হাবিবা, জিইএনের এমডি কে এম হাসান রিপন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা ড. মাহাদী আমিন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ প্রমুখ।
ইউটি/টিএ