তাড়াহুড়া করতে হচ্ছে, বিচার নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করা কঠিন : চিফ প্রসিকিউটর

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, আগামী নির্বাচিত সরকার জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ও আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সংঘটিত গুম-খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে এগোবে কি না, সেই অনিশ্চয়তার কারণে তাদের বিচারকাজে তাড়াহুড়া করতে হচ্ছে। ফলে যতটা নিখুঁতভাবে এ কাজ করার প্রয়োজন ছিল, তা সম্ভব হচ্ছে না।


আজ শনিবার (৩০ আগস্ট) রাজধানীর গুলশানে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে সরকারের গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন ও জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) যৌথ আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।


এ সময় চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘নতুন বাস্তবতায় আমাদের চিন্তা করতে হচ্ছে, এই চিন্তাগুলো যদি আমাদের করতে না হতো, তাহলে খুব ভালো হতো।

সেটা হচ্ছে যে ফেব্রুয়ারিতে ইলেকশন (নির্বাচন) হবে, নির্বাচিত সরকার আসবে, তারা যদি এই বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে অগ্রসর না হয়। কেন এই চিন্তাটা আমাদের করতে হচ্ছে?...আমরা ধরে নিচ্ছি ফেব্রুয়ারিতে নতুন গভর্নমেন্ট (সরকার) এলে এই প্রসিকিউশন টিম বা এই বিচারব্যবস্থা নিয়ে অগ্রসর হবে না। তার মানে আমাকে একটা রাশ করতে হচ্ছে, তাহলে ফেব্রুয়ারির মাঝে আমি কত দূর যেতে পারব। তাহলে কিছু কাজ আমাকে শেষ করে যেতে হবে।

ফলে যতটা নিখুঁতভাবে এই কাজটা করা দরকার ছিল, তা কিন্তু আমি হয়তো করতে পারব না। অনেক বেশি রাশ করতে হচ্ছে।’

গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড এবং আওয়ামী লীগের সরকারের সময় সংঘটিত গুম-খুনসহ যেসব ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা হয়েছে, সেসবের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দিতে না পারলে তা বড় ধরনের ব্যর্থতা হবে বলে উল্লেখ করেন তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গুমের যে বিস্তৃতি, এই জায়গায় এই বিচারগুলো করার জন্য যে পরিমাণ সময় দরকার, এতটুকু সময় কিন্তু গুম কমিশনও পাচ্ছে না, আমরাও পাচ্ছি না।

যদি আমরা অন্তত চার্জশিটগুলো (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) দিয়ে যেতে না পারি, তাহলে এটা বড় ধরনের ব্যর্থতা হবে। দেখেন, ১৮০০ প্লাস গুমের ঘটনা, এগুলোর যে শাখা–প্রশাখা আছে, এগুলো কি নিখুঁতভাবে কয়েক মাসে বের করা সম্ভব? প্র্যাকটিক্যালি তো সম্ভব না। কিন্তু এই অসম্ভব কাজ আমাদের করতে হচ্ছে এই আশঙ্কা থেকে যে পরের গভর্নমেন্ট যদি কিছু না করে। তাহলে পরের গভর্নমেন্টে যারা আসবেন, তাদের প্রত্যেককে এটা বুঝতে হবে যে কেন তাদের এই জিনিসটা কন্টিনিউ করতে হবে। সেটা যদি তারা বুঝতে না পারেন, এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য জাতির জন্য আর কিছুই হবে না।

তাজুল ইসলাম বলেন, যতক্ষণ দায়িত্বে আছেন বা তাদের বিবেকবুদ্ধি কার্যকর আছে, আইন অনুযায়ী তারা কাজ করে যাবেন। যত বাধাই আসুক, তা তাদের দায়িত্বচ্যুত করতে পারবে না।

রাজনৈতিক দলগুলোকে এই অনুষ্ঠানে আলোচিত কথাগুলো শোনানো জরুরি বলে মনে করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, তাদের (রাজনৈতিক দল) বুঝতে হবে বাংলাদেশে কী ঘটে গেছে। এটার (গুম ও হত্যাকাণ্ড) বিচার না হলে বাংলাদেশে তা আবার ফিরে আসতে পারে। এই জিনিসটা তাদের জানানো অসম্ভব জরুরি। কারণ, এই উপদেষ্টা পরিষদের মেয়াদ আগামী ফেব্রুয়ারির পরে শেষ হবে। তারপর তাঁরা (রাজনৈতিক দল) দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। তারা যদি এর গ্রেভিটি বুঝতে না পারেন, এটার ব্যাপারে তারা যদি দায়িত্ব পালন না করেন, তাহলে বাংলাদেশ যে কারণে এত রক্ত দিয়ে বিপ্লবের মাধ্যমে পরিবর্তন আনল, সেই অর্জনটা ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা আছে।

তাজুল ইসলাম বলেন, অপরাধীর পরিচয় শুধু সে একজন অপরাধী। তার পরিচয় হতে পারে না যে সে কত বড় সংস্থায়, কত বড় অফিসার, কত বড় কর্তা। যারা অপরাধী, তাদের দায় কারোরই গ্রহণ করা উচিত নয়। আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং সভ্যতা ও জাতিসত্তাকে রক্ষা করতে হলে অপরাধের বিচার নিশ্চিত করতেই হবে।

তাজুল ইসলাম বলেন, যারা আজ তাদের রক্ষা করার চেষ্টা করছেন বা করবেন, তাদের মনে রাখতে হবে, তারাও একই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতেই পারেন। এ ধরনের অপরাধীদের রক্ষা করার চেষ্টা করাটাও কিন্তু এই অপরাধের বিচারকে বিঘ্নিত করার একটা চেষ্টা, যেটাও একটা অপরাধ।

গোলটেবিল বৈঠকে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের প্রধান বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

পিএ/টিকে 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দেশবাসীর কাছে মায়ের জন্য দোয়া চেয়েছেন তারেক রহমান Dec 28, 2025
img
মিরাজের আত্মবিশ্বাসই খালেদের সাফল্যের চাবিকাঠি Dec 28, 2025
ভক্তদের মনে ছাপ ফেলল ক্যাটরিনার পোস্ট Dec 28, 2025
img
পুলিশের পোশাক পরায় মামলা, মুখ খুললেন পাক অভিনেত্রী Dec 28, 2025
img
বিশ্বরেকর্ড গড়ে বছর শেষ করলেন মিচেল স্টার্ক Dec 28, 2025
img
‘বিজয় হাজারে ট্রফি’তে খেলে কত টাকা পান রোহিত-কোহলি? Dec 28, 2025
img
কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিয়ে ধোঁয়াশা Dec 28, 2025
img
নদীপথে চলাচল নিয়ে আবহাওয়া অফিসের সতর্কতা Dec 28, 2025
img
বিপিএল সম্প্রচারে বসানো হয়েছে ৩৮টি ক্যামেরা Dec 28, 2025
img
৬৫ বছরের পুরোনো রেকর্ড স্পর্শ করলেন রোনালদো Dec 28, 2025
সাদামাটা লুকে ভাইজান, ভক্তদের হৃদয় জয় Dec 28, 2025
নিজের কাজেই বিশ্বাসী ইমরান Dec 28, 2025
img
জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়া এনসিপিকে কঠিন মূল্য চুকাতে হবে : সামান্তা শারমিন Dec 28, 2025
img
বিদায়ের পথে ২০২৫: বছরজুড়ে শ্রোতাদের মন মাতিয়েছে ১০ গান Dec 28, 2025
img
উত্তরায় ট্রেনের ধাক্কায় পোশাককর্মীর প্রাণহানি Dec 28, 2025
img
ক্যারিয়ার যেমন দায়িত্ব, তেমনই সংসার ও সন্তানের দেখাশোনাও কর্তব্য: কোয়েল মল্লিক Dec 28, 2025
img
তারেক রহমান ঢাকা-১৭ আসনে মনোনয়ন কিনবেন আজ Dec 28, 2025
img
আপত্তিকর ছবি ভাইরাল, আইনি পথে হাঁটলেন শিল্পা Dec 28, 2025
img

সৌদি প্রো লিগ

রোনালদোর জোড়া গোল, আল ওখুদকে ৩-০ গোলে হারাল আল নাসর Dec 28, 2025
img
যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারে শুরু হলো জাতীয় নির্বাচনের ভোট Dec 28, 2025