জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে রাজধানীর রামপুরায় ছাদের কার্নিশে ঝুলে থাকা আমির হোসেনকে গুলি করাসহ দুজনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ চারজনের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানির জন্য আগামী ১১ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের বাকি সদস্যরা হলেন, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, ফারুক আহাম্মদসহ অন্যরা।
এর আগে, এ মামলার পলাতক চার আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গত ২৫ আগস্ট এ আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১। একইসঙ্গে শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়।
হাবিবুর ছাড়া বাকি তিন আসামি হলেন, খিলগাঁও জোনের সাবেক এডিসি মো. রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমান ও রামপুরা থানার সাবেক এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া।
এদিন এ মামলায় গ্রেপ্তার রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকারকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ। এছাড়া গত ১০ আগস্ট পলাতক চার আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে, ৭ আগস্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ প্রসিকিউশনের পক্ষে ফর্মাল চার্জ দাখিল করেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ। গত ৩১ জুলাই চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ১৯ জুলাই বিকেলে রামপুরায় হোটেলে কাজ শেষে ঢাকায় থাকা ফুফুর বাসায় ফিরছিলেন আমির হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। বনশ্রী-মেরাদিয়া সড়কের দুই পাশে পুলিশ-বিজিবির গাড়ি দেখে ভয়ে প্রাণ বাঁচাতে পাশে থাকা একটি নির্মাণাধীন চারতলা ভবনের ছাদে ওঠেন তিনি।
ওই সময় পুলিশও তার পিছু পিছু যায়। একপর্যায়ে জীবন বাঁচাতে ওই নির্মাণাধীন ভবনটির ছাদের কার্নিশের রড ধরে ঝুলে থাকেন আমির। কিন্তু তাকে দেখে ফেলে পুলিশ। পরে তার ওপর ছয়টি গুলি ছোড়েন এক পুলিশ সদস্য। এতে তিন তলায় পড়ে গেলে তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন উদ্ধার করেন। এরপর বনশ্রীর একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। ওইদিন রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসকরা। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরেন ভুক্তভোগী এই তরুণ।
এছাড়া একই দিন রামপুরার বনশ্রী এলাকায় পুলিশের গুলিতে নাদিম ও মায়া ইসলাম নিহত হন। একইসঙ্গে মায়া ইসলামের ছয় বছর বয়সী নাতি বাসিত খান মুসা গুলিবিদ্ধ হয়। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিলে এখনও কথা বলতে পারছে না এই শিশু।
গত ২৬ জানুয়ারি রাতে আমির হোসেনকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো সাবেক এএসআই চঞ্চল সরকারকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে গ্রেপ্তার করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহার নেতৃত্বাধীন ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি দল।
কেএন/টিকে