সম্রাটের জুয়া ছাড়া অন্য কোনো নেশা ছিল না: স্ত্রী শারমিন

বহুল আলোচিত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ক্যাসিনো চালিয়ে সেই অর্থ দলের পেছনেই খরচ করতেন বলে জানিয়েছেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী শারমিন সম্রাট চৌধুরী।

রোববার বিকাল ৩টার দিকে মহাখালী ডিওএইচএসের ২৯ নম্বর সড়কে ও ৩৯২ নম্বর বাড়িতে এ অভিযান চালানো হয়। এ সময় মহাখালীর নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন তিনি।

শারমিন বলেন, ক্যাসিনো চালিয়ে সম্রাট যে অর্থ পেত তা দলের পেছনেই খরচ করতো। মহাখালীর এই বাসায় গত দুই বছরের মধ্যে সে আসেনি। এছাড়া ক্যাসিনোর অর্থ পরিবারকেও দিত না সম্রাট।

এর আগে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের ধারাবাহিকতায় রোববার ভোর ৫টায় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কুঞ্জশ্রীপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১ এর একটি বিশেষ দল। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী এনামুল হক আরমানকেও।

সম্রাটের সঙ্গে গ্রেপ্তার তার সহযোগী আরমানকেও ঢাকায় আনা হয়েছে। ঢাকায় এনে তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদও শুরু করে র‌্যাব।

সাংবাদিকদের সঙ্গে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সাক্ষাৎকার নিচে হুবহু দেয়া হলো, আমি শারমিন চৌধুরী। আমি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের দ্বিতীয় স্ত্রী। আমার বিয়ে হয়েছে ১৯ বছর। আমাদের একটা ছেলে আছে সে বাইরে থাকে।

আটকের ব্যাপারে তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমি জানি। তবে ওর সঙ্গে আমার দুই বছর ধরে সম্পর্ক নেই। ও যে ক্যাসিনোর গডফাদার তাও আমি জানি না। আমি জানি যুবলীগের ভালো একজন নেতা। আর আমি কেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের সবাই জানে সে একজন ভালো নেতা। আমার সাথে যেহেতু দুই বছরের দূরত্ব, সে কারণে আমি জানি না আসলে সে এত বড় ক্যাসিনো চালায়। আর আমি জানতাম সে নরমাল নেতা। আর কিছুই জানতাম না।

তার সম্পত্তি ও প্রভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, তার তো সম্পত্তি বলতে কিছুই নেই। আর সে ক্যাসিনো চালিয়ে যা ইনকাম করে, তা সে দলের জন্য খরচ করে ও দল পালে। আর যা অবশিষ্ট থাকে তা সে সিঙ্গাপুর বা এখানে জুয়া খেলে। ওর জনপ্রিয়তা দেখেই তো বোঝা যায়। আর এ রকম জনপ্রিয়তা কোনো নেতার আছে বলেন? আর এরকম শুধুমাত্র ইসমাইল হোসেন সম্রাটের আছে। উত্তরেও তো নিখিল নামের একজন নেতা আছে, তারও তো এমন জনপ্রিয়তা নেই। আর আমার সাথে ওর একটু মিলতো কম। উনি দলের ছেলেদের নিয়ে বেশি থাকতে পছন্দ করতেন। উনি কিন্তু শুরু থেকেই সম্রাট। নাম যেমন কাজও তেমন। উনি কিন্তু তার যে সহসভাপতি আছে তাদের মতো নয়। তার চলাফেরা ভালো। তবে ক্যাসিনোতে সে কিভাবে এসেছে তা আমি জানি না। তবে তার নেশা আছে জুয়া খেলার।

তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে দেশ রত্ন শেখ হাসিনাকে এই অভিযানের জন্য ধন্যবাদ জানাব। আর তিনি যদি আরো আগেই উদ্যোগ নিতেন তবে আরো ভালো হতো। সিঙ্গাপুর নিয়ে তার দ্বিতীয় স্ত্রী বলেন, সে সিঙ্গাপুরে এই জুয়া খেলতেই যেত। আর এই জুয়া খেলা তার নেশা। তবে সম্পত্তি করা তার নেশা নয়। যেমন দোকান, গাড়ি এসব তার নেশা নয়। তার নেশা ছিল জুয়া খেলা। সে সিঙ্গাপুরে জুয়া খেলতেই যেত।

বিভিন্ন নারীর সঙ্গে সম্রাটের ছবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিভিন্ন নারীর সঙ্গে নয়। আমার সঙ্গে তার দুই বছরের যোগাযোগ নেই। সেই জন্য সিঙ্গাপুরে আমায় নেয় না। তবে চীনা বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ার এক নারীর সঙ্গে সে সময় কাটায়।

যুবলীগ নেতা সম্রাট ও তার স্ত্রী শারমিন

তবে তিনি আরও বলেন, তিন বা চার বছর ধরে সে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এর আগে কিন্তু ক্যাসিনো ছিল না। মানে সে ঠিকাদারি করতো। আর নিশ্চয় তার দলের বড় ভাই আছে। তার গুরু বা নেতা সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা জানি না। আর উনি কিন্তু সবার সাথেই ভালো ব্যবহার করেন। আর তার সঙ্গে সবার একটা মেলবন্ধন আছে।

জি কে শামিম, খালেদ, সেলিম সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি সেলিমকে চিনি না। খালেদকে মাঝে মধ্যেই তার অফিসে দেখতাম। এতটুকুই আর কিছু না।

আপনি রাজনীতিতে জড়িত কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ও(সম্রাট) এসব পছন্দ করে না। আর ও চাইতো না, তাই আমি তাদেরকে চেহারাও দেখাতাম না। আমি কোনো ক্যামেরার সামনে আসি, রাজনীতি করি তা সে পছন্দ করতো না। আর আমি শুরু থেকেই হাউজ ওয়াইফ। আর আমি নামাজটা পড়া পছন্দ করি। আর ও এভাবেই আমাকে রেখেছে।

সম্রাটের জুয়া ও নারীতে আসক্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি পরে জানতে পেরেছি যে সে জুয়া খেলে। আর জুয়া খেলার যে এত বড় বড় জায়গা আছে তা আমার মাথায় ছিল না।

সম্রাটের আগের ও বর্তমানের পারিবারিক অবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, সম্পদের দিক থেকে আগে যেমন ছিল এখন ঠিক তেমনই আছে। আমি আগেই বলি, সম্পদ করার তার নেশা নেই। ফ্ল্যাট করার, গাড়ি করারও নেশা নেই। তবে তার একমাত্র নেশা হচ্ছে জুয়া খেলা। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তার ডিভোর্স হয়ে গেছে। আর ও বাড্ডা থাকতো। এই বাসাটা তার ও আমার। ঢাকা শহরে আমার জানা মতে তার বাসা আছে শান্তিনগরে একটা, আর এই বাসা। আরেকটা ৩১ নম্বর রোডে আছে। কাকরাইলে যে অফিস আছে সেই ফ্লোরটির ওই অফিসটা ওর নিজস্ব অফিস। সেই অফিসটা পুরাটা দখল করা নয়। মাসে দুই তিনবার তার কাছে যাই আমি। আর সে ওপেন হার্ট সার্জারির রোগী তো। তাই সিড়ি দিয়ে উঠতে পারে না। আমি কাকরাইলে যাই।

ক্যাসিনোতে তার গোপনীয়তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সে আমার সাথে যোগাযোগ করেনি। আর সে সব সময় ভাবে, আমি বোকা। আমি সব কিছু বলে দিব।

সম্রাটের বাড়ি ফেনীর পরশুরামে। বড় হয়েছেন ঢাকায়। বাবা ফয়েজ চৌধুরী রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (রাজউক) চাকরি করতেন। আশির দশকের শেষ দিকে ছাত্রলীগে যোগ দেন। ছিলেন ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।

 

টাইমস/টিআর/এসআই

Share this news on:

সর্বশেষ