১৫২৮-২০১৯: ৪৯১ বছরের মসজিদ-মন্দির বিতর্ক

অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ তৈরি হওয়ার ৪৯১ বছর পর শনিবার ভারতের সুপ্রিম কোর্ট জানাল, সেখানে রামমন্দির নির্মাণ করা হবে। আর মসজিদ নির্মাণ করা হবে অন্যত্র।

চলুন দেখে নেওয়া যাক বাবরি মসজিদ ও রামমন্দির নিয়ে বিতর্কের ইতিহাস:

১৫২৮: অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ নির্মাণ করেন মোগল সম্রাট বাবরের সেনাপতি মীর বাকি। এর আগে তুর্কিস্তানের জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর ১৫২৬ সালে দিল্লি দখল করে প্রতিষ্ঠা করেন মোগল সাম্রাজ্য। ১৮৫৭ সালে এটা যায় ইংরেজদের দখলে।

১৮৮৫: ফৈজাবাদের জেলা আদালতের দ্বারস্থ হয়ে রামমন্দির-বাবরি মসজিদের বিতর্কিত কাঠামোর বাইরে শামিয়ানা তৈরি করে রামলালার মূর্তি স্থাপনের আবেদন জানান মহন্ত রঘুবীর দাস। ব্রিটিশ আদালত সে আবেদন খারিজ করে।

১৯৪৯: ভারতের স্বাধীনতার দেড় বছর পর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বাবরি মসজিদের মূল গম্বুজের নিচে নির্মাণ করা হলো রামলালার মূর্তি। হিন্দুরা দাবি করেন, রামলালা প্রকট হয়েছেন।

১৯৫০: গোপাল সিমলা ও মহন্ত রামচন্দ্র দাস বাবরি মসজিদের স্থানে রামলালার পূজা করার জন্য আদালতে আলাদা আলাদা মামলা করেন।

১৯৫৯: বাবরি মসজিদের জায়গা হিন্দুদের মালিকানা দাবি করে মামলা করেন নির্মোহী আখড়া।  

১৯৮১: উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদে তখন বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং। বাবরি মসজিদের মালিকানা দাবি করে মামলা করেন উত্তর প্রদেশ সেন্ট্রাল সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড।

১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৬: বাবরি মসজিদের দরজা হিন্দুদের জন্য খুলে দিতে বলল ফৈজাবাদের আদালত।

১৪ আগস্ট, ১৯৮৯: বাবরি মসজিদের জমিতে স্থিতিবস্থা বহাল রাখার নির্দেশ দেয় এলাহাবাদ হাইকোর্ট।

৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২: ওই দিন কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা বাবরি মসজিদ ধ্বংস করেন। এ নিয়ে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অন্তত দুই হাজার লোক নিহত হয়। নিহতদের অধিকাংশই মুসলিম।

৩ এপ্রিল ১৯৯৩: পার্লামেন্টে আইন পাস করে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের জায়গার দখল নেয় কেন্দ্রীয় সরকার।

২৪ অক্টোবর ১৯৯৪: ঐতিহাসিক ইসমাইল ফারুকীর মামলায় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট জানালেন, কোনো একটা মসজিদকে ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে ধরা হবে না।

৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১০: অযোধ্যা মামলার রায় দেয় এলাহাবাদ হাইকোর্ট। তিন বিচারকের একটি বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ওপর ভিত্তি করে জানান,  বিতর্কিত জমি তিন ভাগে ভাগ করে দেয়া হচ্ছে- সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মোহী আখড়া ও রামলালা বিরাজমানের মধ্যে।

৯ মে, ২০১১: এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।

২১ মার্চ, ২০১৭:  ভারতের প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর বললেন, আদালতের বাইরে মীমাংসা করে নেওয়া হোক অযোধ্যা বিতর্কের।

৭ আগস্ট, ২০১৭: অযোধ্যা মামলার শুনানির জন্য তিন বিচারপতির বেঞ্চ গঠন করে সুপ্রিম কোর্ট।

২০ নভেম্বর, ২০১৭: উত্তর প্রদেশের শিয়া সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড জানায়, অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণে আপত্তি নেই। তার পরিবর্তে লক্ষ্ণৌতে মসজিদ বানিয়ে দেওয়া হোক।

৫ ডিসেম্বর, ২০১৭: প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি অশোক ভূষণ এবং বিচারপতি এস আব্দুল নাজিরের বেঞ্চে আবার নতুন করে শুরু অযোধ্যা মামলার শুনানি।

২৯ অক্টোবর, ২০১৮: প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বে আবার নতুন করে তিন বিচারপতির বেঞ্চ গঠন।

৮ জানুয়ারি, ২০১৯: প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ গঠন।

২ আগস্ট, ২০১৯: মধ্যস্থতার চেষ্টা ব্যর্থ। প্রধান বিচারপতি জানালেন, ৬ আগস্ট থেকে প্রতিদিন শুনানি হবে অযোধ্যা মামলার।

১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯: মধ্যস্থতা কমিটিকে আবার আলোচনা শুরু করার নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের। এই মাসের মধ্যে আলোচনা শেষ করার নির্দেশ।

১৬ অক্টোবর, ২০১৯: প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ বললেন, অনেক হয়েছে, আজই শেষ করতে হবে অযোধ্যা মামলার শুনানি।

৯ নভেম্বর, ২০১৯: ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায়, বাবরি মসজিদের স্থানেই নির্মাণ হবে রামমন্দির। মসজিদ নির্মাণের জন্য অন্যত্র দেওয়া হবে পাঁচ একর ভূমি।

 

টাইমস/এসআই

Share this news on:

সর্বশেষ

img
তফসিল ঘোষণার আগেই ঠাকুরগাঁওয়ের ৭ থানায় নতুন ওসি Dec 02, 2025
img
কুষ্টিয়ায় একযোগে ৫ থানার ওসি বদলি Dec 02, 2025
img
‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ অবিলম্বে বাতিলের দাবি Dec 02, 2025
img
মরিসন-ওয়াকার থাকছেন ধারাভাষ্যে, শুরু হচ্ছে জাঁকজমকপূর্ণ বিপিএল Dec 02, 2025
img
কঠিন সময়েও সৎ থাকা জরুরি: দেব Dec 02, 2025
img
শ্রেয়াস আইয়ারকে ঘিরে প্রেমের গুঞ্জন উড়িয়ে দিলেন অভিনেত্রী ম্রুণাল ঠাকুর Dec 02, 2025
img
৮ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট Dec 02, 2025
img
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বাধা দেওয়ার অভিযোগে জাককানইবির ১৬ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা বহিষ্কার Dec 02, 2025
img
মায়ের মৃত্যুর পর অনধিকারচর্চায় ভেঙে পড়েছিলেন জাহ্নবী Dec 02, 2025
img
সাংবাদিক পরিচয় নয়, আচরণ দেখুন: জয়া বচ্চন Dec 02, 2025
img
খালেদা জিয়ার পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে শিগগিরই দেশে ফিরবেন তারেক Dec 02, 2025
img
টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বরেকর্ড গড়লেন তানজিদ তামিম Dec 02, 2025
img
সন্তানদের নয়, ধর্মেন্দ্র যাদের দিয়ে গেলেন কোটি টাকার সম্পত্তি! Dec 02, 2025
img
আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত পেশাদার বাহিনী গড়ার প্রতিশ্রুতি সেনাপ্রধানের Dec 02, 2025
img
আয়ারল্যান্ডকে ১১৭ রানে অলআউট করল বাংলাদেশ Dec 02, 2025
img

জয়া আহসান

ঘুম থেকে উঠে মুখ না ধুয়ে চলে এসেছি Dec 02, 2025
img
এলপিজি গ্যাসের দাম বাড়ল ৩৮ টাকা Dec 02, 2025
img
৭ ডিসেম্বরের পর যেকোনো দিন তফসিল ঘোষণা : ইসি আনোয়ারুল Dec 02, 2025
img
রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের চুক্তি করবে, খুবই আশাবাদী যুক্তরাষ্ট্র Dec 02, 2025
img
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও ভুয়া শিক্ষার্থী আটক Dec 02, 2025