সুইজ্যারল্যান্ডে ইভিএমে ভোট নিয়ে বিতর্ক

সুইজারল্যান্ডে এখন চলছে ইভিএম নিয়ে জোর বিতর্ক। দেশটির সরকার চায় আসন্ন অক্টোবরের নির্বাচনে ২৬টি প্রদেশের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অংশে ব্যবহৃত হোক ইভিএম। কিন্তু অনেকেই ইভিএমের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

অগত্যা সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৪ মার্চের মধ্যে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন যদি প্রমাণ করতে পারেন যে, ইভিএমে কারচুপি করা সম্ভব, তা হলে সরকারের তরফ থেকে তাকে ৫০ হাজার সুইস ফ্রাঁ (প্রায় ৪২ লাখ ৩৭ হাজার টাকা) পুরস্কার দেওয়া হবে।

একে বলা হচ্ছে ‘পাবলিক ইনটিউশন টেস্ট’। যত দিন না এই বিতর্ক মিটছে, তত দিন এ দেশের ভোট মূলত কাগজের ব্যালটেই।

সুইজারল্যান্ডে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ভারতবর্ষের বহু আগে, সেই ১৮৪৮ সালে। তবে নারীদের ভোটাধিকারের ক্ষেত্রে সুইজারল্যান্ড অনেকটাই পিছিয়ে। ১৯৭১ সালে সুইজারল্যান্ডের নারীরা প্রথম ভোটাধিকার পান। ইন্দিরা গান্ধী তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

সুইজারল্যান্ডও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর দেশ। তবে প্রদেশগুলোর হাতে ক্ষমতা অনেকটাই বেশি। প্রত্যেক প্রদেশেরই আছে নিজস্ব সংবিধান, আইনসভা, আদালত, এমনকি পতাকাও। কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি প্রণয়নের ক্ষমতা মূলত মুদ্রানীতি, পররাষ্ট্রনীতি, প্রতিরক্ষা, সামাজিক  নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলোতে সীমাবদ্ধ।

 সুইজারল্যান্ডের নির্বাচনী পদ্ধতি

প্রতি চার বছর অন্তর হয় কেন্দ্রীয় নির্বাচন। যেখানে জনগণ বেছে নেন ২৪৬ জন জনপ্রতিনিধিকে। তারা নির্বাচন করেন সাত সদস্যের এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। আর এই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে প্রত্যেক বছর একজন করে সামলান প্রেসিডেন্ট অর্থাৎ আলঙ্কারিক রাষ্ট্রনেতা পদটির দায়িত্ব। এ দেশে ভিআইপি সংস্কৃতি নেই। ফলে নেতাদের বিশেষ কোনো কনভয় নেই। কেউই নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে চলাফেরা করেন না। ট্রেনে বা বাসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়াটা এ দেশে অস্বাভাবিক নয়।

সুইজারল্যান্ডের আরও একটি অভিনব বিষয় হচ্ছে— ‘ডিরেক্ট ডেমোক্র্যাসি’ অর্থাৎ প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র। যে কোনো নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে জনগণের অনুমোদন বাধ্যতামূলক। অর্থাৎ গণভোট আবশ্যিক। সরকার প্রণোদিত নীতির বিরুদ্ধে যদি ১০০ দিনের মধ্যে ৫০ হাজার স্বাক্ষর সংগ্রহ হয়, তা হলেই গণভোট হবে। স্বাভাবিকভাবেই ভোটের বিষয়েরও অভাব নেই এই দেশে। ধর্মস্থানে গম্বুজ থাকবে কি না, বোরকা পরা যাবে কি না, ঘরে বন্দুক রাখা যাবে কি না, রেস্তোরাঁয় সিগারেট খাওয়া যাবে কি না, রবিবার দোকান খোলা থাকবে কি না— ইত্যাদি হরেক রকম বিষয়।

গতবছর এ রকমই একটি আপাত অদ্ভুত এক প্রস্তাব নিয়ে ভোট হলো। যেসব কৃষকের শিং-ওয়ালা গবাদি পশু আছে, তাদের সরকারের তরফ থেকে ভর্তুকি দিতে হবে। ৪৫ শতাংশ ভোট পেয়ে হেরে যান প্রস্তাবকারীরা।

এত বিষয়, এত ভোট, অথচ নির্বাচনের কোনো উত্তাপ নেই। মিছিল, মিটিং, সমাবেশ, দেয়াল লিখন, মাইক লাগিয়ে জনসভা প্রায় নেই বললেই চলে। সাধারণ নির্বাচন মানে, হোর্ডিংয়ে প্রার্থীর নাম ও পরিচিতি, টেলিভিশন বিতর্ক, পোস্টবক্সে বিভিন্ন দলের লিফলেট, জনবহুল এলাকায় ছোটখাটো সভা, ওইটুকুই। বিজয় মিছিলও দেখা যায় না। না বোঝা যায়, জেতার উচ্ছ্বাস, না ধরা পড়ে হারের হতাশা।

 

সূত্র: আনন্দবাজার

 

টাইমস/এসআই

Share this news on: