সিরিয়াল কিলিং: ১৪ বছরে স্বামীসহ ৬ জনকে খুন গৃহবধূর

ভারতের কেরালায় ভয়াবহ সিরিয়াল কিলিংয়ের তথ্য উঠে এসেছে দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যমে। কেরালার কোঝিকোড়ের এক গৃহবধূ নিখুঁত পরিকল্পনা করে গত ১৪ বছরে স্বামীসহ ছয়জনকে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার তাকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের অপরাধ দমন শাখা।

দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে পরিকল্পনা করে ওই নারী একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে।

খবরে বলা হয়, অভিযুক্ত ওই নারীর নাম জলি পোন্নামাট্টম। সম্ভ্রান্ত ক্যাথলিক পরিবারের সদস্য তিনি। প্রথম খুনের পর ১৭ বছর কেটে গেলেও, এত দিন গোটা বিষয়টি চেপে রেখেছিলেন তিনি। সম্প্রতি পরিবারের এক সদস্যের অভিযোগ পেয়ে নতুন করে তদন্ত শুরু হলে বিষয়টি সামনে আসে।

পুলিশ জানিয়েছে, ২০০২ সালে ৫৭ বছর বয়সে আচমকাই মারা যান জলির শাশুড়ি আন্নাম্মা থমাস। সেইসময় স্বাভাবিক মৃত্যু বলে চালিয়ে দেয়া হয়। তার ঠিক ছয় বছর পর আন্নাম্মার স্বামী টম থমাস(৬৬) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

২০১১ সালে ৪০ বছর বয়সে একভাবে মৃত্যু হয় তাদের ছেলে ও  জলির স্বামী রয় থমাসের। সেইসময় ময়না তদন্তে বিষক্রিয়ার বিষয়টি উঠে আসে। ওই পর্যন্তই। তারপর আর তদন্ত সেভাবে এগোয়নি। এরপর ২০১৪ সালে আন্নাম্মার ভাই ম্যাথু মাঞ্জাদিইল(৬৭) একইভাবে মারা যান। সাইরো-মালাবার গির্জার অধীনস্থ সমাধিক্ষেত্রে তাদের চারজনকেই সমাধিস্থ করা হয়।

এর ঠিক দুই বছর পর, ২০১৬ সালে রয় থমাসের খালাতো ভাই শাজুর স্ত্রী সিলি(২৭) এবং দু’বছরের মেয়ে অ্যালফনসার হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে পর পর মৃত্যুর ঘটনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে গোটা পরিবার। সেই সুযোগেই শাজুর সঙ্গে দ্বিতীয় বার বিয়ে হয় জলির। শ্বশুরের শেষ উইল অনুযায়ী সমস্ত সম্পত্তির ওপর নিজের মালিকানা দাবি করেন জলি। কিন্তু এই নিয়ে প্রবাসে বসবাসকারী দেবর রোজোর সঙ্গে ঝামেলা বাধে তার।

রোজো তার পরিবারের ঘটে যাওয়া একের পর একে মৃত্যুর তদন্ত নতুন করে শুরু করার আবেদন জানায় পুলিশের কাছে। তাতেই গোটা ঘটনা সামনে আসে। রহস্যমৃত্যুর জট খুলতে গিয়ে কবর খুঁড়ে নিহতদের মৃতদেহের ফরেনসিক পরীক্ষা হয়। তাতে দেখা যায়, মৃত্যুর আগে প্রত্যেকেই কিছু না কিছু খেয়েছিলেন। প্রত্যেকের শরীরে সায়ানাইডের অস্তিত্বও মেলে। তাতে সায়ানাইড খেয়ে স্লো পয়জনিংয়ের মাধ্যমে তাদের খুন করা হয় বলে সন্দেহ জাগে গোয়েন্দাদের।

প্রতিটি খুনের সময় জলি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং ছ’টি খুনের ঘটনার সময়, প্রত্যেকবারই ঘটনাস্থলে। এরপরেই দফায় দফায় জলি ও শাজুকে জেরা করা হয়। তাদের বয়ানে বিস্তর অসঙ্গতি ধরা পড়ে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এমনকি ঘটনার সময় জলি ও শাজু ফোনে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন বলেও উঠে আসে তদন্তে। এরপরই জলিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আটক করা হয় শাজুকেও।

জলিকে সায়ানাইড পৌঁছে দেয়ার অভিযোগে এমএস ম্যাথু এবং প্রাজিকুমার নামে আরও দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ম্যাথু একটি গহনার দোকানের কর্মী এবং প্রাজিকুমার ওই দোকানের জন্য গহনা তৈরি করেন। দীর্ঘ দিন ধরে জলিকে চেনেন তারা। তবে সম্পত্তির লোভেই জলি সকলকে খুন করেছে কি না, সে ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত নয় পুলিশ।

 

টাইমস/এসআই

Share this news on:

সর্বশেষ

img
জাহাজসহ জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে সরকার অনেক দূর এগিয়েছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী Mar 28, 2024
img
ঢাবির কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ফল প্রকাশ, ৮৯.৯৩ শতাংশ ফেল Mar 28, 2024
img
একনেকে ৮ হাজার ৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন Mar 28, 2024
img
রাজসিক সংবর্ধনায় দায়িত্ব নিলেন বিএসএমএমইউ'র নতুন উপাচার্য Mar 28, 2024
img
রোদে পোড়া ত্বকের যত্নে হলুদের ঘরোয়া প্যাক Mar 28, 2024
img
শহরের চেয়ে গ্রামে বিয়ে-তালাক বেশি Mar 28, 2024
img
ময়মনসিংহে বাস-অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ৫ Mar 28, 2024
img
বাংলাদেশে মুক্ত গণতন্ত্র বাস্তবায়নে সমর্থন অব্যাহত থাকবে: ম্যাথিউ মিলার Mar 28, 2024
img
নিউইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত Mar 28, 2024
img
নিষেধাজ্ঞার ৩ দিনের মধ্যে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রস্তাব অনুমোদিত Mar 27, 2024