ঢাবির অভাবী সেই ছেলেটি এখন ওয়াশিংটন ভার্সিটির শিক্ষক!

অভাবের সঙ্গে বড় হয়েছেন তিনি। স্বপ্ন ছিল নতুন কিছু করার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর নিজেকে মেলে ধরেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য দশটা শিক্ষার্থীর মতো বিসিএস ক্যাডার হওয়ার গতানুগতিক স্বপ্নে হাবুডুবু খাওয়ার ছেলে তিনি নন। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় বেড়ে উঠা সেই ছেলেটি এখন ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির শিক্ষক হয়েছেন। তিনি এখন এমন পলিমারিক ম্যাটেরিয়াল উদ্ভাবন করার চেষ্টা করেছেন, যেগুলো সহজে রিসাইকেল (recycle) করা যায় এবং সেলফ হিলিং (self-healing), অর্থাৎ এসব ম্যাটেরিয়ালে স্ক্রাচ (scratch) হলে অথবা আঘাত হলে নিজে নিজে এই ম্যাটেরিয়াল ঐ স্ক্রাচ/আঘাত দূর করতে পারবে। সফলতার এই গল্পটা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান প্রজ্ঞাতেজ চাকমার। জানালেন বিসিএসের স্বপ্ন দেখলে হয়তো তিনি আন্তর্জাতিক মানের গবেষক হতে পারতেন না।

জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সেরা মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তার পিএইচডি গবেষণার বিষয় ছিল অর্গানিক আর পলিমার কেমিস্ট্রি। পিএইচডি অর্জন করার পর ড. প্রজ্ঞাতেজ চাকমা এখন পোস্ট ডক স্কলার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনে যোগদান করছেন।

প্রজ্ঞাতেজ চাকমা খাগড়াছড়ির পানছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। খাগড়াছড়ি ক্যান্ট. পাবলিক কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। পরে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন এবং কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে।

প্রজ্ঞাতেজ চাকমা বিগত ৫ বছরে তার ১১টি প্রকাশনা Macromolecules, Macro Letters, Angewandte Chemie, Polymer Chemistry নামক স্বনামধন্য জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। প্রজ্ঞাতেজ চাকমাকে হাই রিসার্চ এক্টিভিটির জন্য ডিপার্টমেন্ট থেকে Dissertation Scholar পুরস্কার দেয়া হয়। যা তার জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।

ড. প্রজ্ঞাতেজ চাকমা বলেন, ঢাবিতে ভর্তি হয়ে থার্ড ইয়ারের দিকে অনেক সিনিয়রকে দেশের বাইরে পিএইচডি নিতে দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হন। এছাড়াও আমাদের পাহাড়ি সমাজের কৃতি সন্তান আমেরিকান প্রবাসী ড. মংসানু মারমাও আমার কাছে অনুপ্রেরণার ছিলেন। আর্থিকভাবে আমাদের পরিবার কখনো সচ্ছল ছিলাম না। আমিও হয়তো ঢাবি থেকে অনার্স-মাস্টার্স করে বিসিএস অথবা সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিতে পারতাম। কিন্তু আমি সংকল্প নিই আমাকে যেকোন উপায়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে একজন বিজ্ঞানী হতে হবে। আমার পরিবারের নাম, আমার সমাজের নাম উজ্জ্বল করতে হবে।

তিনি বলেন, আর্থিক অসচ্ছলতার মাঝেও আমার পরিবার যতটুকু সম্ভব আমাকে সাপোর্ট দিয়েছে। আমি আমার এই পিএইচডি ডিগ্রি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে উৎসর্গ করতে চাই, যিনি ছোটবেলা থেকে নিজের সবকিছু দিয়ে আমাদের তিন ভাই-বোনকে আগলে রেখেছেন। শত কষ্ট সহ্য করে আমাদের মানুষ করেছেন। মায়ের ত্যাগ ছাড়া এতদূর আসা কখনো সম্ভব ছিলো না।

টাইমস/জেকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বাংলাদেশের জলসীমায় মাছ শিকারের সময় ১৪ ভারতীয় জেলে আটক Oct 19, 2025
img
যারা বিএনপি ও আ. লীগকে এক পাল্লায় মাপতে চায়, তাদের ঈমানে সমস্যা আছে: প্রিন্স Oct 19, 2025
img
বাঙালির ইতিহাসে এত বড় দুর্ঘটনা কখনো ঘটেনি: রনি Oct 19, 2025
img
চেষ্টা করেছি হতাশ না হয়ে ধৈর্য রাখার: রিশাদ Oct 19, 2025
img
পল্লী চিকিৎসকের ধারণা জিয়াউর রহমানের, বিএনপি তা বজায় রাখবে: তারেক রহমান Oct 19, 2025
img
৮ মাস পর দেশে ফিরলেন ভারতের উপকূলে উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশি ১২ নাবিক Oct 19, 2025
img
৩০ দিন ফাস্টফুড না খেলে শরীরে হবে যে পরিবর্তন Oct 19, 2025
img
শত্রুর সঙ্গে থাকা যায় কিন্তু বিশ্বাসঘাতকের সঙ্গে নয়: রিয়া মনি Oct 19, 2025
img
বয়কট করা ক্লাবগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসছে কোয়াব Oct 19, 2025
img
কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ৬ ঘণ্টা পর বিমান চলাচল শুরু Oct 18, 2025
img
আফগানদের না বলায় পাকিস্তানের ত্রিদেশীয় সিরিজে সুযোগ পেল জিম্বাবুয়ে Oct 18, 2025
img
আহত জুলাই যোদ্ধা আতিকুলের সার্বিক খোঁজ নিলেন নাহিদ ইসলাম Oct 18, 2025
img
আরাউহোর শেষের গোলে রোমাঞ্চকর জয়ে শীর্ষে বার্সেলোনা Oct 18, 2025
img
চট্টগ্রাম বন্দরে ১২০০ টন পণ্য নিয়ে জাহাজডুবি Oct 18, 2025
img
রেকর্ডগড়া বোলিংয়ে বাংলাদেশকে জেতালেন রিশাদ, ম্যাচশেষে আবেগঘন প্রতিক্রিয়া Oct 18, 2025
img
মিষ্টি কম দেয়া নিয়ে টর্চ জ্বালিয়ে দুই গ্রামের সংঘর্ষ Oct 18, 2025
img
আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলের আপিল প্রত্যাখ্যান, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল Oct 18, 2025
img
‘জুবিনদা আমার কণ্ঠ ছিলেন’ মন্তব্যে কটাক্ষের মুখে দেব Oct 18, 2025
img
তারকাদের ইনজুরিতে নতুনদের সুযোগ দেখছেন বার্সা কোচ হ্যান্সি ফ্লিক Oct 18, 2025
img
বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের আভাস Oct 18, 2025